ক্যাফে কাব্যে বঙ্কিম সরকার

কবিতা – এক অমোঘ প্রত্যয়

এ পথ ধরে আমি এগিয়ে চলেছি,দিগন্তের খোঁজে।
যেখানে শেষ হয়ে গেছে হিংস্র শ্বাপদের ক্রুঢ়তা,
যেখানে শাসকের লাল চোখ মুক্তির সংগ্রামে,
বুলেটের আস্ফালণ ছুঁড়ে দেয় না।
সেই অচেনা পথ ধরে আমি হেঁটে চলেছি,
এক জনগণতান্ত্রিক দেশ খুঁজে আনব বলে।
সে পথে শাসকের পোষা কেউটের বিষ দাঁতে,
বারবার ক্ষতবিক্ষত হতে হয়েছে আমায়।
আমার নীলাভ চোখ,নীলাভ রক্ত,
ঘুম ঘুম ঘুম বেসামাল স্পন্দন,ঝুম হয়ে থাকা,
মৃত্যুর দোরে কড়া নেড়ে গেছে অবিরত।
তবুও কবিতার অমোঘ ধ্বনি উচ্চারণ করে,
সে পথে হেঁটে গেছি মুক্তির খোঁজে।
সে পথে আমি নীলকন্ঠের পালক কুড়িয়ে পেয়েছি।
সে পথে আমি কুড়িয়ে পেয়েছে নন্দিনীর মত,
এক আশ্চর্য জাদুকাঠি।
মানুষ যখন অবিশ্বাসের ছোবলে,
স্বপ্ন দেখা বন্ধ করেছে,
যখন সবাই বারবার একটার পর একটা
রাজনৈতিক বাদশার দরবারে বেশ্যাবৃত্তি করে গেছে,
যখন কেবল বলেছে,”নয় নয় আর সম্ভব নয়
জনগনতান্ত্রিক দেশের লক্ষ,হাভাতের ঘরে ছাঁদ”,
আর ত্রিশূল ঢুকেছে মাতৃজঠোরে।
সে রক্ত নিয়ে হোলি খেলেছে,
তা দিয়ে ধুয়েছে,পুজার বেদি, হয়েছে ঈশ্বরের আরাধনা,
তখন এই অবিশ্বাস, এই মুক থাকা,এই পদলেহন,
দংশনের মত ক্ষত এঁকে দিয়েছে সারা শরীরে।
এ পথে পেরোতে হয়েছে রক্তের নদী।
পান করতে হয়েছে আকন্ঠ বিষ।
ভেসে যাওয়া লাশে কত বাবা খুঁজেছে তার ছেলে,
জননীর কত কত কান্না ম্লান হয়েছে চিতার আগুনে।
দেখেছি আট বছরের শিশুকে ধুঁকতে ধুঁকতে বাসন ধুতে,
দেখেছি মিছিলের পুরোভাগে মেয়েটির বিপ্লবী কন্ঠে,
আ্যসিড ছুৃঁড়ে দিয়েছে,জ্বলন্ত রড ঢুকে গেছে যোনিতে।
আমার দু পা জড়িয়ে ধরে, কতবার
নয়া পয়সা চেয়েছে আমার প্রিয় উদ্বাস্তু মা।
অথচ
আমার পকেট ভর্তি কেবল শব্দের ফুল,বিস্বাদ,
আমি কী করে তার খিদে মেটাব?
কবিতা তুমি কি খিদে নেভানোর মন্ত্র জানো?
অনেক পতাকা উড়েছে আকাশে সেদিন,
অনেক পতাকায় স্বাধীনতার উৎসব হয়েছে।
হায় স্বাধীনতা!এ কেমন গণতন্ত্রের নামাবলী গায়ে
মেকি সহানুভূতি বিলিয়ে যাচ্ছ?
তুমি ভাত দিলে না মায়ের মুখে,
আলো দিলে না মায়ের চোখে।
স্বদেশের মুখে কেবল রক্ত, বেদনা,
কেবল একটিই ধ্বনি বেজে চলেছে অবিরত,
,”সম্ভব নয়, আর সম্ভব নয়।”
এসো নন্দিনী এই প্রবল দংশন এর
পথেই আমরা হেঁটে যাই।
বাতাবি লেবুর গাছের নিচে তোমার কোলে
মাথা রেখে একটু শোব আমি।
,তুমি আমার ক্ষতে লাল পলাশ ছুঁয়ে দিও সে রাতে।
আমি তোমার খোঁপায়
সেই নীলকন্ঠের পালক গুঁজে দেব।
আমি তোমার স্পর্ধিত চোখে মুক্তি এঁকে দেব।
এই অবিশ্বাসের মর্মরধ্বনির মাঝেও,নন্দিনী,
এসো,ভালোবাসা,বিশ্বাস আর কবিতার গন্ডুষে,
আমরা নীল আকাশ পান করি।
আর বলে যাই,
“আর সব মরে,কবিতা মরে না।”
শত রক্তপাতের পরেও,
প্রত্যয়ের মর্মরধ্বনি হয়ে কবিতা বলে যাবেই
মানুষের কথা।
হয়ে উঠবেই জনতার হাতিয়ার।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।