গল্পেসল্পে বিপ্লব গোস্বামী

জয়কালি মন্দির

করিমগঞ্জ জেলার ঐতিহাসিক রণভূমি মেলেগড় যাওয়ার পথে লাথু বাজারের কাছেই রাস্তার ধারে আছে শতাব্দী প্রাচীন একটি কালি মন্দির।মন্দিরের নাম হলো জয়কালি মন্দির।অনেক আকর্ষণীয় মন্দিরটি।মালেগড় যাওয়ার পথে দূর থেকে মন্দিরের চূঁড়া দেখতে পাওয়া যায়।আমি মালেগড় ভ্রমণ শেষে ফিরে আসার সময় এই মন্দিরে গিয়ে মা কালিকে প্রণাম করে আসি।মন্দিরে প্রবেশের পথে মোট তিনটি গেট আছে।রাস্তার পাশেই রয়েছে মন্দিরের প্রথম গেট।সেই গেট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতে হয়।তারপর পাওয়া যায় দ্বিতীয় গেট।এই গেটের উপরে রয়েছে দুইটি ময়ূরের মূর্তি ।এই গেট পাড়ি দিয়ে মূল মন্দির প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে হয়।মন্দিরের সম্মুখেই রয়েছে একটা পুষ্করিনী।মূল মন্দিরে প্রবেশ করতে হয় সিংহদ্বার পাড়ি দিয়ে।ভেতরে রয়েছে মা কালির পাথরের মূর্তি।দেবী মা এখানে দক্ষিণা কালি রূপে পূজীতা হন।প্রতিদিন মায়ের নিত‍্য পূজা দেওয়া হয়।আমার ভাগ‍্য ভালো মায়ের নিত‍্য পূজার আগেই মন্দিরে পৌঁঁছে যাই।আমি পুরোহিত মশাইয়ের কাছ থেকে প্রসাদী ফুল আর আশীর্বাদ চেয়ে নিলাম।
মন্দিরের বর্তমান পূজারী অন্তু রঞ্জন ভট্টাচার্য্য।তিনি ১৯৯৮ সাল থেকে এখানে পূজারী হয়ে মায়ের সেবা পূজায় রত আছেন।উনার কাছ থেকে জানতে পারি এই মন্দিরটি প্রায় আড়াইশো বছর আগের প্রতিষ্ঠিত।আড়াইশো বছর আগে মা কালি তাঁর এক ভক্তকে স্বপ্নাদেশে তাঁর পাথরের বিগ্ৰহ যোগছড়ার কাছে বট গাছের নিচে প্রতিষ্ঠা করার আদেশ দেন।দেবী মায়ের আদেশ মতো সেই ভক্ত এখানেই যোগছড়ার পাড়ে বট গাছের নীচে ( বর্তমান যেখানে মন্দির প্রতিষ্ঠিত) দেবীকে প্রতিষ্ঠিতা করেন।সেই থেকেই মা কালি এখানে দক্ষিণা কালি রূপে পূজিতা হয়ে আসছেন।বর্তমানে যে মন্দির আছে তা ১৪০৫ বাংলায় নির্মাণ করা হয়।
মূল মন্দিরের আছে পাঁচটি চূঁড়া।মন্দিরে প্রাঙ্গণের ভিতরে দেবী মায়ের মন্দির ছাড়াও আছে আরো দুইটি মন্দির।একটি হনুমান মন্দির ও অন‍্যটি শনিদেবের মন্দির।মূল মন্দিরের দেয়ালে রয়েছে সুন্দর কারুকার্য।উচুঁ বেদির উপর বিন্দাদেবী স্থাপিত।গর্ভগৃহে রয়েছে দেবী মায়ের পাথরের মূর্তি।পুরোহিত মশাইয়ের কাছ থেকে জানতে পারি প্রথম অবস্থায় মায়ের মূর্তির আকার ছোট ছিল।পরে মা কালির আশীর্বাদে তিলে তিলে মূর্তি বড় হতে থাকে।মা কালি এখানে খুব জাগ্ৰত।ভক্তদের বিশ্বাস দেবী মায়ের কাছে মানত করলে ফল পাওয়া যায়।তাই এখানে দূর থেকে ভক্তদের আগমণ হয়।লাথু বাজার থেকে একটু এগোলেই যাওয়া যায় জয়কালি মন্দিরে।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *