গল্পকথায় বিজয়া গুপ্তা

আমি গৌরবঙ্গ উনিভার্সিটির অন্তর্গত কালিয়াগঞ্জ কলেজে পড়তাম। এখন de.el.ed করছি। নিবাস-কালিয়াগঞ্জ। আঁকা এবং লেখা হলো ভালোবাসা। আঁকার ওপর ৫বছরের ডিপ্লোমা করা আছে। আমার লেখালিখি বিগত ৮বছর ধরে প্রকাশিত হয়েছে কোনো না কোনো ম্যাগাজিনে। অনলাইন-এও দুটো প্লাটফর্ম এর সাথে যুক্ত আছি।

ভারতের ভবিষ্যৎ হাঁটছে রক্তাক্ত পায়ে

এইতো সেদিনের কথা যখন করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শুধু চীনে সীমাবদ্ধ, বিশ্বজুড়ে তখনও ছড়িয়ে পড়েনি। দশম শ্রেণির ক্লাসে ইংরেজ কবি ট্রেড হিউজের এর লেখা মাই ওন ট্রু ফ্যামিলি কবিতাটি আলোচনা করছিলাম। ছাত্র-ছাত্রীদের বলছিলাম, আমাদের সত্যিকারের পরিবার হলো এই প্রকৃতি এবং গাছপালা জীবজন্তু পাখ-পাখালি সমস্ত কিছু। এই ক্লাসের কিছুদিন পরেই করোণা ভাইরাসের সংক্রমণ সুনামির মতো দ্রুত সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ল। বাড়িতে বসে ছাত্রছাত্রীরা এখন নিশ্চয়ই নিজেদের পরিবারের সঙ্গে এই বিশ্বপ্রকৃতিকে উপভোগ করছে। অবশ্যই মনে পড়েছে ক্লাসের পড়া কবিতার কথা, কারণ ঐ কবিতায় আছে নবীন অর্থ পিপাসু মানুষই, নগর সভ্যতার পতনের জন্য নির্বিচারে নিষ্ঠুরভাবে গাছপালা কেটেছে, অরণ্য ধ্বংস করেছে। কবি
স্বপ্নে দেখেছেন অরণ্যের অধিকার পেতে একদল ওক গাছ কবি কে ঘিরে ধরে এবং শপথ করিয়ে নেয় যে তিনি একটি গাছ কাটা পড়ে থাকতে দেখলে যেন দুটি গাছ লাগান। স্বপ্নভঙ্গ হতেই কবির চৈতন্য হয়। উপলব্ধি করেন প্রকৃতিই তার আসল পরিবার এখন এই মুহূর্তে আমরা বুঝতে পারছি ক্রমবর্ধমান মানব সভ্যতার উন্নয়ন-এর নামে দশকের পর দশক প্রকৃতিকে অবহেলা করে, আজ আমরা এক ভয়াবহ বিপদে বিপর্যস্ত। কিন্তু এসব সত্ত্বেও পৃথিবীর রাষ্ট্রপ্রধানদের টনক নড়েনি। উল্টে বিশেষ করে উন্নত দেশগুলি সুপারপাওয়ার হওয়ার জন্য প্রকৃতির স্বাভাবিকতা বিনষ্ট করে, বাস্তুতন্ত্র পরিবর্তন করে, পৃথিবীতে সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে। শুনেছিলাম পরিবেশকে কিছু দিলে পরিবেশ তার দ্বিগুণ ফিরিয়ে দেয়। আজ তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। এতকাল ধরে পরিবেশ ও পরিবেশে থাকা অবলা প্রাণীদের উপর যেভাবে আমরা নির্মম অত্যাচার করে চলেছি, পরিবেশ ও ঠিক সে ভাবে সবকিছু সুদে-আসলে ফিরিয়ে দিচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে আম্ফান, ব্রাজিল – আমেরিকা – অস্ট্রেলিয়া – তে দাবানল, পূর্ব আফ্রিকা – ভারত ও পাকিস্তানে পঙ্গপালের হানা।
অনেক মহানগরে ন্যায় মাথা তুলিয়াছে ক্ষুধার মহামারী। ভারতের অগণিত জনপদ হইতে কাতর আবেদন আসতেছে-অন্ন চাই, হাতের সঞ্চয় ফুরিয়েছে, ঘরের চাল ফুরিয়েছে অথচ রোজগারের উপায় নেই। লৌহ কপাট ন্যায় সকল পথ রুদ্ধ করেছে এই অতি মারি। কবে ইহা শেষ হবে! জীবন ছন্দে ফিরবে, তাহার উত্তর নাই। অনাহারের সংখ্যা বাড়ছে। পঞ্জিকা বদলে গিয়েছে। বছরের শেষ সংক্রান্তি পার হয়ে নববর্ষ সমাগত, কিন্তু বর্ষ সূচনার এমন রূপ আগে কখনো দেখা যায়নি। আর কখনো যেন দেখতেও না হয়। সেই রূপ আনন্দের নয় আতঙ্কের, মিলনের নয় কবিচ্ছিন্নতার। এই সবকিছুর মধ্যে কিছু মানুষ ভুলে যায়নি দানের কথা। ভুলে যায়নি লোকদেখানো পুণ্য কর্ম সেবা কিংবা পাশা দশম বাদে আছে দান আয়কর দিনাশা, দান বস্ত্র শুভ হয়, শুকনো কাশি কমে, অহেতুক ছবি ওঠে লাজ খাওয়া শরমে, ষোলআনা দানে যদি ৬০০সেলফি হয়, ৬০০ গ্রাম চালে আস্ত স্টুডিও নিশ্চয়ই। ভারতের ভবিষ্যৎ ক্রমশই রক্তাক্ত পায়ে হাঁটছে। প্রতিদিন এক নতুন দুঃসংবাদ কানে বাজছে। প্রতিমুহূর্তে হৃদপিণ্ড ভয়ে ধুকপুক করছে করোনার ত্রাসে, ঔরঙ্গবাদে মালগাড়ির চাকায় ছিন্ন ১৬ শ্রমিক, আম্ফান, পঙ্গপালের হানা, ভারত চীনের সীমান্ত বিবাদে কুড়ি জন শহীদ, কিছু নক্ষত্রের আকস্মিক খসে পড়া। এসব কিছুর পরেও আসামের বন্যা, বিশাখাপত্তনমে গ্যাস দুর্ঘটনা, মাদা হাতির বিস্ফোরক যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু। প্রতিনিয়ত এসব দেখতে দেখতে জীবন কেমন জানি অতিষ্ঠ ও বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। এই সব কিছুর পরেও ভারতবর্ষ তথা বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ দুর্গাপূজা – আসছে আর কিছুদিন মাত্র বাকি মনে এক সান্তনা মা আসছে হয়তো এবার সব ঠিক হয়ে যাবে।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।