পথে ঘাটে কদাচিৎ কোথাও থাকে একজন প্রেমিক রাবণ এবং
সত্যে প্রতিষ্ঠিত বলে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে ছদ্মবেশে ঘরে ঘরে থাকে একেকজন রাম
ধীর-স্থির,শান্ত-শিষ্টের ভুয়া পোশাক পরা রাম এবং
রাক্ষসের সমস্ত লক্ষণ নিয়েও চূড়ান্ত প্রেমিক রাবণের যুগে যুগে সংঘাত
যুগে যুগে সংঘাত প্রেম এবং প্রতিহিংসার
বৈধ এবং অবৈধের
আর সীতা?
এভাবেও তো একবার আমরা সীতাকে ভেবে দেখতে পারিঃ
একটি ঘরের একটি বিলাসি আসবাব না ক্রমশ পুরোনো হয়ে আসা
একটি আলমারি,একটি পুরোনো সোফা –যাকে ফেলতে গিয়েও ছুঁড়ে ফেলতে পারি না
যার সমস্ত প্রয়োজন শেষ হয়ে এসেছে অথচ উপেক্ষা করা যায় না
নিজে থেকে মৃত্যু এসে স্পর্শ না করা পর্যন্ত
মনে করা হল –
আজকের সীতা লাজুকিলতা নয় –ছুঁলেই মূর্ছা যাওয়া
রামের অগ্নি পরীক্ষর তুলাদণ্ডে বারবার উঠায় কিসের গরজ সীতার
কতটা প্রেম বুকে থাকলে সইতে পারে রামের সমস্ত বঞ্চনা
আজকের সীতা তা ভালো করেই জানে
আজকের সীতা বিনা বাক্যে পরে না বক্লল,নতশিরে মানে না স্বামীর সঙ্গে বনবাস
মায়ামৃগের মোহে পড়ে বন্দি হয় না রাবণের অশোক বনে
আজকের সীতা হাতের তালুতে মেপে নিতে জানে প্রেম এবং প্রতারণার দুটো মুদ্রা
হে বিজ্ঞজন,আপনাকে জিজ্ঞেস করছি –
এধরনের মানসিকতার সীতাকে গ্রহণ করবে কি সমাজ?
আজকের রাম বারবার সীতাকে জন-অরণ্যে ত্যাগ করতে পারে,কোনো দোষ নেই
আজকের রাম বারবার পদাঘাত করতে পারে সীতার প্রেমাঞ্জলি,কোনো খেদ নেই
আজকের রাম বন্ধ করতে পারে সীতা অযোধ্যায় ফিরে আসার সমস্ত পথঘাট,সমাজ অন্ধ
আজকের রাম বারবার করতে পারে সীতার সততার অগ্নি পরীক্ষা,সমাজ নীরব দর্শক
আজ রামের কাছে সীতা নয় প্রেমের প্রতীক,কেবল স্থূল যৌনতা-
এটা দিনের আলোর মতো সত্য
নারীর যোবন কেনার জন্য চাই কেবল অর্থ-প্রাচুর্য
পথে-ঘাটে নারীর দুদিনের প্রেম কেনার জন্য চাই কিছু যশ-নাম
আর কিছু সামাজিক স্বীকৃতি
আর সেইপথে রামের জীবনে যে নারী আসবে
সে কি সীতা হতে পারে?
রাবণের প্রেম সত্যি-সীতাও জানত সে কথা
নাহলে কি অযোধ্যায় ফিরে এসে আঁকতেন রাবণের ছবি
এবং রামের ছলনাকে বারবার প্রেম বলে ভুল না করলে
সগর্ভা সীতার বনবাস হত কি?
রামের সঙ্গে সীতার সম্পর্ক প্রথম থেকেই ছিল ভুয়া ,হরধনু ভাঙ্গার নামে কেবল প্রহসন
তাতে প্রেম ছিল না,ছিল সামন্তকে হারিয়ে জেতার আনন্দ
যুগে যুগে নারীকে সীতার সহনশীলতার পাঠ শেখানোর জন্য অগ্রণী সমাজ জানে কি
আজ সেই রাম ও নেই ,অযোধ্যাও নেই…