সাহিত্য ভাষান্তরে বাসুদেব দাস

দেশ বিষয়ক তিনটি কাহিনি

প্রণয় ফুকন
মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ

(এক)
রাজসিক ভোজনের শেষে
রানির সুখনিদ্রার প্রয়োজন

বাইরে কোকিল কেতেকির  ডাক,
পেঁচার হুট
শিয়ালের হুক্কাহুয়া,
কুকুরের ঘেউ ঘেউ।

‘ অসহ্য অসহ্য এসব অশান্তি’
ভীষণ বিরক্ত  রানি।

‘ সেনাপতি, সবাইকে বধ করে ফেল
এই মুহূর্তে।’
রাজার আদেশ।
কথা মতো কাজ।

অদূরে তর্জন-গর্জনে
একটি পাহাড়িয়া নদী।
আকাশে আরম্ভ হয়েছে
বিদ্যুতের গর্জন।

‘ মহারাজ
এসব কী করব এখন?’
বিমূঢ় সেনাপতি।

নিরুত্তর নির্বীজ রাজা।

(দুই)
তুমি বলেছিলে,
‘ সত্যের সদায় জয়।’
মেনে নিয়েছিলাম নির্দ্বিধায়।

তুমি বলেছিলে,
‘ অহিংসা পরম ধর্ম।’
মেনে চললাম নিঃসংকোচে।

তুমি বলেছিলে,
‘ নম্রতা মানুষের সম্পদ।’
মেনে চললাম নির্বিবাদে।

গ্রামের বৈঠকখানা ঘরে
তোমার ছবির সঙ্গে
ফ্রেমে সাজানো ছিল
মা পিসির সেইসব হাতের কাজ।

পঞ্চাশ পার হল আমার
একটি কথাও যদি
সত্য প্রমাণিত হত।

এখন অবশ্য,
মা পিসিও নেই, তুমিও নেই
ফ্রেম করা ফোটোগুলির ও
কোনো অস্তিত্ব নেই।

একবার তোমার সঙ্গে দেখা হলে
চরণ দুটি জড়িয়ে জিজ্ঞেস করতাম,
এইসব অলীক স্বপ্ন
কেন দেখেছিলে হে উলঙ্গ ফকির?’

(তিন)

আমার একটি ঘর আছে,
আমার একটি দেশ আছে,

আমি ঘর ভালোবাসি,
আমি দেশ ও ভালোবাসি।

দীর্ঘদিন ধরে
আমি খুঁজে বেড়াচ্ছি
দেশের ভেতরে ঘর,
ঘরের ভেতরে দেশ।

আমি পাইনি।

দেশকে আমি ভালোবাসি,
দেশ আমাকে ভালোবাসে না।
দেশ তাদের ভালোবাসে
যে দেশকে ভালোবাসে না।

একপেশে প্রেমে আমি
ক্লান্ত হয়ে পড়েছি আজীবন।

Spread the love

You may also like...

error: Content is protected !!