সারাদিন। ঘরদোর চলাফেরা ঠিকই তো ছিল। যেমন প্রতিনিয়ত। এখন আসছে রাত। আতঙ্ক ঘিরে ধরে শরীর নামক জীব প্রতিভায়। প্রতিভা এ কারণে যা নৈমিত্তিক এক বিবর্তনে। মহা সমারোহের জীবন। প্রতি মুহূর্তে টানাপোড়েন। এই আছি এই নেই। ছিলাম আছি আর থাকবো ভাবনায়। সময় মৃত্যু যেন আঁকড়ে আছে। অধিকার। এ অধিকারের মূল্যে আমি। চকমকি পাথরে ঘষে নিয়ে আগুন জ্বালিয়েছি। সারাদিন পুড়তে পুড়তে কখন যে অন্ধকার হয় কে জানে। নিয়মমাফিক পোড়া। জানতে ইচ্ছে হয় সকলেই কি দগ্ধে এখন? আমি তো বেশ আছি। যদিও নিস্তব্ধ আমার ভালো লাগে না। এই ঘর আর চারিদিক যেখানে হ্যাঙারে ঝুলছে চামড়া তোলা নির্লিপ্ত জামা। আমি মুগ্ধ কারণ এ দেহ পোকামাকড়ের। প্রতিদিনের আহার তাদের। যেদিকে তাকাই অন্ধকার আর অন্ধকার। অস্থিরতা এক অসুখের নাম। জন্মে কি ভুল করেছি? কাকে বলবো আর কেই বা শুনবে। দেওয়াল থেকে পলেস্তরা খুলে ক্ষতের সৃষ্টি। আলমারির বইগুলো দাঁত বের করে বিদ্রুপাত্মক। দশ বাই বারো ফুটে চলার গতি বেড়েছিল একটু আগেও। এখন? গতিপথ পাল্টাচ্ছে ক্রমাগত। রাত বাড়ছে। শব্দ কমছে। বাড়ছে শিরা উপশিরায় যুদ্ধের দামামা। উর্দ্ধমুখে দাঁড়িয়ে। সিলিং ফ্যানের ব্লেডগুলো ধীর গতিতে। রাত বাড়লে বিদ্যুতের উচ্চ ভোল্টেজ থাকে প্রতিদিন। কিন্তু। হাওয়া কমে আসছে। জানালা দরজা বন্ধ সময়ের বিষাক্ত দৃশ্যহীন আক্রমণের ভয়ে। বাকরুদ্ধ স্বাসরুদ্ধের যৌথ খামার। গতিপথ পাল্টে পাল্টে যাচ্ছে। ঘাম। সময়ের রক্তঘাম। এ ঘামে নুন নেই। জামা প্যান্ট খুলে ফেলছি। সুতোহীন। আমার অঙ্গপ্রতঙ্গ বিদ্রুপ করছে এখন। কাদের যেন ক্ষীণ আওয়াজ। দরজা খুলবো? ভাবলাম মুখে মাস্ক নেই ,আবরণহীনে যদি লেপ্টে যায় অলিখিত পোকা। যাকগে। এক ছুট। উন্মুক্ত দরজা এবার।
লাইন দিয়ে যাচ্ছে মানুষ আমার মতো শরীরে। এক লাফে নিচে। সামিল হলাম।
আমার ছোঁয়ায় মুক্ত হলো মৃত্যু মিছিল।
রাত প্রতিদিন – ৪
প্রতিদিন।
শ্যামবর্ণ। বেশ লাগে আমার। বিদেশি পুতুলের মতো। তার ডাগর চোখ চাহনি সুখ টেনে আনে। চোখ বলে দেয় চলো না এক স্বপ্নের দেশে। এলানো কেশগুচ্ছ। ঝুঁকে আর বুকে মাথা রেখে কত কথা। তার গল্পে আমি ভাসি। গুনগুন গান গায়।
নতুন নতুন পাহাড়ের আর দেশের গল্পে টেনে নিয়ে যায়। আমি স্বপ্ন দেখি প্রতিরাত। উড়ছি আর উড়ছি। সমুদ্র,পাহাড়,সবুজে রাঙানো গাছের উপর দিয়ে এক নতুন দেশে। যেখানে কেও মৃত্যুর কথা বলে না। বলে না আমাদের অসুখ হয়েছে। আমাদের কেড়ে নেওয়ার অধিকার আছে। আছে অনাবিল আনন্দরেখা। সে আন্দন্দে ভাসি। ভাসতে ভাসতে সোনালী আভা জানালা দিয়ে স্পর্শ করে। আবার এক বেঁচে থাকার ডানামেলা দিন। বেশ আছি কিন্তু।………
আবার
সে বলেছিলো – ওই আকাশে দ্যাখো।
কি ?
উজ্জ্বল তারারা আমার বাবা, মা, দিদি আর দাদা।
চাপা কষ্টেও বললাম – কেন ওখানে ?
জানো, ওদের পোকায় খেয়েছে।
খাট। চার ফুট বাই সাত ফুট। শুয়ে। অন্ধকারে ঘরের ঘুলঘুলি থেকে বেরিয়ে এলো এক আরশোলা। উড়ছে ডানা মেলে। আতঙ্কিত। ভয় দূরত্বের। তার শ্বাস যদি আমার শ্বাসে মিশে যায়। আমি দৌড়াচ্ছি। যেখানেই যাই পিছনে আরশোলা। রাতভোর লুকোচুরি।
ভোরের আলো।
ফুড়ুৎ। আবার সে ঘুলঘুলিতে। তছনছে ঘর ডাকাতি হয়েছে যেন।