আন্তর্জাতিক || পাক্ষিক পত্রপুট || এ বিজয়া দেব

মধুচন্দ্রিমা ও সরোজিনী
“সরোজিনী এইখানে শুয়ে আছে।” সত্যিই সরোজিনী শুয়ে আছে। সরোজিনী এভাবেই কি অতীতেও শুয়ে থাকত? নাহলে জীবনানন্দ কেন লিখলেন – “সরোজিনী এইখানে শুয়ে আছে”….তারপর আবার লিখলেন “জানি না সে এইখানে শুয়ে আছে কি না” তার মানে সরোজিনী এক সুররিয়ালিস্ট চরিত্র। একদম। এ ঠিক চোখে দেখা বাস্তবের বাসিন্দা নয়।
কালরাতে আমি দেখেছি একা পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। আমি চুপি চুপি পেছনে গিয়ে দেখলাম ফিসফিস করে কীসব বলছে। একা একা। পেছন ফিরে না তাকিয়ে বলল – দিগন্তের সাথে কথা বলছি। পাগল ভেবো না।
আশ্চর্য! আমি তো পদশব্দ বিলকুল না করে পেছনে দাঁড়ালাম। ও বুঝে গেল কী করে আমি তার পেছনে দাঁড়িয়ে? হ্যাঁ, আমি ভাবতে শুরু করেছিলাম মাত্র, আমি কি পাগলকে বিয়ে করেছি? সরোজিনী বলে উঠল – পাগল ভেবো না। এখানেও আশ্চর্য!
বললাম – দিগন্ত?
-horizon। ভিন পুরুষ নয়।
-হুম। না বলে একা চলে এলে? আমরা হানিমুনে এসেছি সরোজিনী! তুমি বুঝি এসব বোঝো না?
-কি বুঝি না? – সরোজিনী ফিরে তাকাল।
আমি শিউরে উঠলাম। ছায়া ছায়া অবয়ব একরাশ চুলে ঘেরা জ্যোৎস্নালোকিত মুখমন্ডল। মনে হল এ সত্যিই পরাবাস্তব নারী। একে আমি চিনি না।
-এইসব হানিমুন টুন?
-মধুচন্দ্রিমা ঢের ভালো শব্দ। তা তোমার হনিমুনের নিজস্ব চরিত্রটা কি?
-এভাবে একা একা আমাকে হোটেলের একা ঘরে ফেলে আসা নিশ্চয়ই নয়।
-কিন্তু আমি তো একাই বসে ছিলাম। তুমি ল্যাপটপে কাজ করছিলে।
-তুমি তো জানো সরোজিনী, কাজ আমাদের পিছু ছাড়ে না।
-হুম পরাবাস্তব অন্ধকার ঠিক তেমনি আমার পিছু ছাড়ে না।
-আমি ভীত, সন্ত্রস্ত। জীবন মোটেই কবিতা নয় সরোজিনী।
-তাই? তাহলে জীবনটা ঠিক কি?
একঢাল চুলে ঘেরা রহস্যময়ী নারী ঘুরে দাঁড়িয়েছে, স্তিমিত অন্ধকার ঘেরা এক দৃশ্যপট… আমতা আমতা করে আমি নয়, ভেতর থেকে কে যেন বলে উঠল-জীবনটা? জীবনটা হচ্ছে সরোজিনী। মানে পরাবাস্তবতার অন্ধকার।
বলতে বলতে শিউরে উঠলাম।