|| ১৯শে নভেম্বর আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস || লিখেছেন আত্মজ উপাধ্যায়

International Men’s Day 2020

১৯শে নভেম্বর আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস
আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস প্রতি বছর নভেম্বর মাসে বিশ্বজুড়ে পালিত হয়।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস চালু হয়েছিল, মহিলাদের অধিকারকে আরো উন্নত ও তাদের শ্রমের মজুরী নিয়ে উকালতি করার স্বার্থে। আর আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস চালু হয় পুরুষদের প্রতি বৈষম্য এবং পুরুষদের স্বাস্থ্যের জন্য সচেতনতা বাড়ানোর দিকে লক্ষ্য করে।
প্রতি বছর আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস ১৯ নভেম্বর পালিত হয়। এটি একটি আন্তর্জাতিক ইভেন্ট যা বিশ্বজুড়ে ৭০ টিরও বেশি দেশে উদ্‌যাপিত হয়।
টমাস ওস্টার Thomas Oaster আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসের প্রকল্পটি এক বছর আগে ১৯৯১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কল্পনা করেছিলেন। এবং ৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯২ সালে উদ্বোধন করেছিলেন, প্রকল্পটি ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে(Trinidad and Tobago) ১৯৯৯ সালে পুনরায় সূচনা হয়। ১৯৯৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসের মাল্টা (Malta) তে প্রতিবছর উদযাপিত হয়ে থাকে।

এই ইভেন্টটি জেরোম তেলকসিংহ (Jerome Teelucksingh) তার বাবার জন্মদিনে শ্রদ্ধা জানাতে ১৯ নভেম্বরকে বেছে নিয়েছিলেন ১৯৮৯ সালে। এবং ত্রিনিদাদ ও টোবাগোয়ের ফুটবল দল বিশ্বকাপের জন্য যোগ্যতা অর্জনের জন্য দেশকে একত্র করে সেইদিনই উদযাপিত করে। তেলকসিংহ আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসকে কেবল একটি লিংগ চিহ্নিত দিন হিসাবে নয়, এই দিনটিকে পুরুষ এবং ছেলেদের যে সমস্ত বিষয় তাদের ক্ষতি করে তা মোকাবেলা করার জন্য স্থির করেন। তিনি আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসের (আইএমডি) এবং এর সাথে জুড়ে থাকা পুরুষ কর্মী বা অ্যাক্টিভিস্টদের বলেছেন, “তারা লিঙ্গীয় সাম্যের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং ধৈর্য সহকারে আমাদের সমাজের পুরুষদের উপর আরোপিত নেতিবাচক চিত্র এবং কলঙ্ক অপসারণের চেষ্টা করছেন।”
২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসের প্রতিপাদ্য থিম ছিল পুরুষ এবং ছেলেদের জন্য বিশেষ কিছু করা“Make A Difference” ।পুরুষ ও যুবকদের জন্য এগিয়ে আসা, সচেতন করা যাতে, যে হারে আত্মহত্যার হার বাড়ছে, তা কমানো, পুরুষের প্রতি যৌননির্যাতন গুলির সমাধান আনা, ও সারা জীবন পুরুষ ও যুবাদের স্বাস্থ্য দেখভাল করা। সমাজ কি কি ব্যবস্থা নিচ্ছে তা উকালতি করা।

বিশ্বনারীদিবস যেভাবে পালিত হয়, সমাজ সেইভাবে পুরুষ দিবস পালন করেনা। উলটো সমাজ ও নারীরা পুরুষ দিবস বন্ধ করার চেষ্টা করে। সেই নিরিখে, একজন কমেডিয়ান, কৌতুক অভিনেতা রিচার্ড হারিং শিল্পী প্রতিবছর নারী দিবস ৮ই মার্চে তার টুইটার অনুসারীদের পুরুষ দিবসের অস্তিত্ব এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে বার্তা দেন ও সচেতন করেন।কিন্তু প্রচেষ্টা করলে কি হবে, লোকের সচেতনতার অভাবে কৌতুক অভিনেতার কৌতুকগুলিও ভাল সাড়া পায়না। তবু ২০১৮ সালে, রিচার্ড হারিং্যের টুইট ঘরোয়া পুরুষ নির্যাতনের দান হিসাবে ১৫০,০০০ ডলার সংগ্রহ করেছিল।

আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসের লক্ষ্য কী?
পৃথিবীর সকল রাস্ট্রের, সকল ধরণের সমাজে পুরুষের প্রতি অনাদর , বৈষম্য, ও আক্রোশ দেখা যায়। চলুন দেখি বিষয়গুলি কি কি?
৭৬% আত্মহত্যায় পুরুষকে সমাজ প্ররোচিত করে
৮৫% গৃহহীন পুরুষ দুঃসহ কষ্ট করে, রাস্তায় বা অনাশ্রয়ে রাত কাটায় ও ৯০% এই কারণে পুরুষের মৃত্যু হয়।
৮১ % খুন নিধন বলি হয় পুরুষ
৪৫% ঘরোয়া লাঞ্ছনার শিকার পুরুষ
৭৫%মহিলা কৃত মিথ্যা ফৌজদারী মামলার শিকার
৯২% পুরুষের মৃত্যু ঘটে কর্মক্ষেত্রে

সবচেয়ে বেশি মহিলাদের চেয়ে ভয়ঙ্কর হিংসার বলি হয় পুরুষ বা ছেলেরাই।
জেলে জাতীয় কারাগারে ৬৫%পুরুষকে কাটাতে হয়।
কোন বিষয়ে একই অপরাধের জন্য মহিলাদের চেয়ে পুরুষকেই বেশি লাঞ্ছনা ভুগতে হয়। একই অপরাধের জন্য পুরুষকে লম্বা কারাদন্ড দেওয়া হয়।
মহিলাদের চেয়ে পুরুষ অনেক আগে অকালে মারা যায়। বিশেষ করের ৬৫ বছর পূর্ণ হবার অনেক আগে।মহিলাদের চেয়ে পুরুষ গড়ে ৬ বছর কম আয়ূ পায়।
মহিলাদের তুলনায় পুরুষের অসুখ হলে অনেক কম জানানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রতিবছর মহিলাদের চেয়ে পুরুষ অনেক কম সুযোগ পায় ও পুরুষের সংখ্যা ছাত্রীদের চেয়ে অনেক কম। ৬০,০০০ এরও কম।
সূত্রঃ IMD UK, Men’s and Boys’ Coalition. W H O.
পুরুষ দিবসের ৬টি স্তম্ভ।
আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসের লক্ষ্য হ’ল ইতিবাচক আদর্শ পুরুষ কে তুলে ধরা, রোল মডেল উদযাপন করা। সিনেমার তারকা নয় শুধু; প্রতিটি সামাজিক ক্ষেত্র থেকে, খেলাধূলা, শিল্প সংস্কৃতি,সাহসিকতা, পরোপকারী, মেধা ও সৃষ্টিশীল ছাড়াও প্রতিদিনকার জীবনে যিনি সৎ ও সম্ভ্রান্ত জীবনের অধিকারী
পরিবেশ, সন্তান যত্ন,আত্মীয়তায়/সম্পর্ক, পরিবারে, সমাজে, রাস্ট্রে পুরুষের ইতিবাচক অবদানকে আনুষ্ঠানিক সম্মান জানানো
পুরুষের স্বাস্থ্য ও সুস্থতা; সামাজিক, মানসিক ও শারিরীক- এর উপর আলোকপাত করা
পুরুষের প্রতি সামাজিক অন্যায় অবিচার,বৈষম্যঃ সামাজিক পরিষেবাতে,সামাজিক ভাবনাচিন্তা প্রত্যাশার উপ, এবং আইনকানুনে- এগুলি সবার নজরে আনা।
লিংগ সম্পৃক্ত বিষয়গুলি উন্নত করা, দায়িত্বশীল লিংগের মানুষের সমর্থন দেওয়া

এমন একটা সমাজ সৃষ্টি করা, যেখানে নিরাপত্তা, স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে মানুষ ক্ষতিকারীতা থেকে মূক্ত হয়ে জীবন যাপন করতে পারবে।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।