Cafe কলামে – আত্মজ উপাধ্যায় (পর্ব – ২)

প্রথম নারীর জাগরণ: খ্রীষ্টপূর্ব ২১৮ সাল

আমার ধারাবাহিক লেখার নাম ‘নরনারীর-যোগ্যতা’। কোন কাজ করার জন্য যোগ্যতা লাগে। যোগ্যতা নির্ভর করে অনেক গুলি বিষয় নিয়ন্ত্রণ দক্ষতার উপর। যেমন, আপনি যদি বৈজ্ঞানিক হন, আপনাকে কতকগুলি অংক সুনির্দিষ্টরূপে গ্রহণ করার মত মস্তিষ্ক, ও সেগুলি নিয়ে নাড়াচাড়া, চর্চা করার ক্ষমতা থাকতে হবে। সবাই অংক বুঝেনা। একজন পাওয়ার লিফটার ১,০০০ পাউন্ড বা ৪৫০ কিলো উঠাতে পারে। আপনি পারবেননা আমিও পারবোনা। এর যোগ্যতা তৈরি করতে হয়। প্রশাসনের উঁচু চেয়ারে আপনাকে বসিয়ে দিলে আপনি প্রশাসন চালাতে পারবেননা। তার জন্য চর্চা ও যোগ্যতা চাই।
যোগ্যতার অভাবে দেশ সম্পদ থাকা সত্বেও নাগরিকরা কষ্ট পায়। তেমন নরনারীর আলাদা আলাদা যোগ্যতার মাপ কাঠি হয়।

ইন্টার ন্যাশনাল পাওয়ার লিফটিং ফেডারেশন (International Powerlifting Federation (IPF)) অনুযায়ী সর্বাধিক মহিলারা ৮৪ কিলো আর পুরুষ ১২০ কিলো ওজন নাড়াচাড়া করতে পারে। তো যোগ্যতার পার্থক্য তো থাকেই।
 এই যোগ্যতা নিয়ে নারীর সমস্যা। নারী পুরুষকে শাসন করতে চায়। যোগ্যতায় পারেনা। ফলে চালাকি করে এগুতে চায়।
ধরুন একটা শ্রমের কাজ কোন নারী করাবে বলে একজন মহিলাকে ও আরেকজন পুরুষকে নিযুক্ত করল। ১০ ঘন্টা কাজ করার পর দেখা গেল পুরুষ যতটুকু উৎপাদন করেছে, নারী তার অনেক অনেক কম উৎপাদন করেছে। এবার শ্রমের মজুরী কি দুজনের এক হওয়া উচিত? কারণ দুজনেই ১০ ঘন্টা শ্রম দিয়েছে। শুধু উৎপাদন সমান করেনি। নারী কম করেছে পুরুষ বেশি করেছে। আপনার বিচার কি?
কেউ তো দানছত্র খুলে রাখেনি! যে এমনি দান করে যাবে। সবাই তার মেধা ও শ্রমের ফসল ফলিয়ে খায়, বাঁচে। যার যেমন কাজ সে তেমন রোজগার করে। এটাই সামাজিক নিয়ম। এখানে নারী পুরুষ শ্রেণি ভাগ নেই। মেয়েরা বেশি পোশাক নির্মাণ কোম্পানীতে কাজ করে। সেখানে পুরুষরাও কাজ করে। সেখানে ঘন্টা হিসাবে কাজ করেনা, যত মাল বা কাজের অংশ উৎপাদন করবে – সে নারী হোক আর পুরুষ হোক- উৎপাদনের সংখ্যা বা পরিমাণের উপর মজুরী পায়। তো পুরুষরা অধিক উৎপাদন করে অধিক টাকা রোজগার করে।
নারীবাদ, একটা অলীক স্বপ্ন মহিলারা দেখে। তারা বলে, “নারীবাদ, নারীর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সাম্যতার প্রতি বিশ্বাস (বাস্তব নয়) ( Feminism, a belief in the political, economic and cultural equality of women)” আপনার কি মনে হয় নারীর যোগ্যতা আছে? আর বিশ্বাস রাখলেই হল? আমি যদি বিশ্বাস করি ভগবান আমাকে একটা বাড়ি বানিয়ে দেবে, আমার বিশ্বাস কোনদিন কাজ করবে? আপনি যতই মিছিল করুন, চালাকি করুন। নারী যখন কাজে যাবে, সেখানে যদি একজন নারী মালিক হয়ে থাকে, সে কিন্তু পুরুষের যোগ্যতাকেই মর্যাদা দেবে। ফলে নারীকে  ঘরে এসে তাকে রান্না সামলানো ও সন্তান প্রসব করা ছাড়া আর কোন কাজ নেই। এর বাইরে যেসব মহিলা গেছে তারা তাদের জীবন নষ্ট করে খুব করুণ অবস্থায় সমাজে অপাংক্তেয় হয়ে দিন কাটাচ্ছে। তার হতাশা অনন্ত। তার আর নিজেকে শুধরাবার সুযোগ নেই। হাজারো কাহিনী খবরে প্রকাশ হচ্ছে। সেসব নারীদের।
আমি শুনেছি মেয়েরা বস্তু- বিষয়ী। বস্তু বিষয় উপায় করতে যোগ্যতা লাগে। স্বর্গ মর্ত্য পাতাল- সবখানেই যোগ্যতা ছাড়া আপনি কেউনা।
দেখতে দেখতে নারীবাদের বয়েস অনেক হল। যারা নারীবাদী তাদের আদৌ কি কোন উন্নতি হয়েছে? হিসেব করলে নারীবাদ ভাবনার বয়েস হাজারের উপর।
পুরুষরা যখন বিদ্বান ও ভাবুক হয়ে উঠে তখন তারা অনেকটা মেয়েলি বা কম শক্তি সম্পন্ন হয়। তারা বুদ্ধি করে শ্রম না দিয়ে বাঁচার চেষ্টা করে। তখন তারা নারী দরদী হয়ে উঠে। কিন্তু বাস্তবে আপনি কাউকে ভিক্ষা দিলে, দান দিলে ভিখারীর বা গরীবের জীবন পালটে যাবেনা, যদিনা সে নিজে নিজেকে সামলাবার যোগ্যতা অর্জন করে।

খ্রীষ্ট জন্মের ৪২৮ বছর আগে প্ল্যাটো জন্মেছিলেন। তার বাবা মা অনেক উচ্চ বংশের বা রাজ বংশের সাথে সম্পর্কিত। (Traditional history estimates Plato’s birth was around 428 B.C.E., but more modern scholars, tracing later events in his life, believe he was born between 424 and 423 B.C.E. Both of his parents came from the Greek aristocracy. Plato’s father, Ariston, descended from the kings of Athens and Messenia. His mother, Perictione, is said to be related to the 6th century B.C.E. Greek statesman Solon) মহিলাদের নিয়ে তিনি ভেবেছিলেন, তার লেখা classic Republic এ ব্যক্ত করেন, মহিলাদের পুরুষের মতোই প্রাকৃতিক (“natural capacities”)সমান গুণ আছে, প্রাচীন গ্রিস পরিচালনা এবং রক্ষার জন্য।
প্রাচীন রোমে ২য় যুদ্ধের সময় (the Second Punic Wa) ও the Battle of Cannae কান্না যুদ্ধের পর দেশে নিদারুণ সঙ্কট দেখা দেয়। কুইন্টাস ফ্যাবিয়াস ম্যাক্সিমাস ভারিকোসাস এবং টাইবেরিয়াস সেম্প্রোনিয়াস গ্র্যাচাসের (Quintus Fabius Maximus Verrucosus and Tiberius Sempronius Gracchus,) এর সাথে আলোচনা করে  মার্কস ওপ্পিয়াস (Marcus Oppius,) একটা দমন নীতি মহিলাদের জন্য চালু করে তার নাম ছিল   Oppian Law ।( লেক্স ওপিয়া একটি আইন ছিল  খ্রিস্টপূর্ব ২১৫ খ্রিস্টাব্দে যা প্রাচীন রোমে কান্না যুদ্ধের পরে জাতীয় বিপর্যয়ের দিনগুলিতে দ্বিতীয় পুনিক যুদ্ধের সময় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, এবং খ্রিস্টপূর্ব ১৯৫ সালে বাতিল করা হয়েছিল। (The Lex Oppia was a law established in ancient Rome in 215 BC, at the height of the Second Punic War during the days of national catastrophe after the Battle of Cannae, and repealed in 195 BC.)
একটি ট্রিবিউন মার্কস ওপ্পিয়াস কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত, লেক্স ওপ্পিয়া একটি ধারাবাহিক দমন আইনের প্রথম ছিল  মহিলাদের ধন-সম্পদকেই সীমাবদ্ধ রাখা, এবং তার প্রদর্শনও বন্ধ রাখা। বিশেষত, এটি কোনও মহিলাকে আধা আউন্স সোনার বেশি সোনার অধিকার রাখতে, বহু রঙের পোশাক (বিশেষত বেগুনি রঙের ছাঁটাইযুক্ত) পরিধান করতে বা শহর বা কোনও শহরে  একটি মাইলের মধ্যে কোনও প্রাণী টানা গাড়িতে চলা নিষেধ শুধু পাবলিক ধর্মীয় উৎসবের সময় ব্যতীত।) তখন মহিলারা বিশাল প্রতিবাদ করে। নীতি ছিল মহিলারা সংকট সময় সোনা বা দামী গহনা, বস্ত্র ইত্যাদি পরতে পারবেনা। যদিও অচীরেই সেই সংকট চলে যায়, ও আইনটি বাতিল করে দেয়।

তো ইতিহাসে নারী জাগরণ নতুন কিছু নয়। সেই পুরা কাল থেকেই তারা সচেতন ও কেউ তাদের দময়ে রাখতে চায়নি। নারী তার স্বার্থ সম্পর্কে খ্রীষ্ট জন্মের পূর্ব থেকেই সচেতন। আজ ২২০০ বছর , সেই ঘটনার পর। আপনার কি মনে হয় নারী কিছু উপায় বা সমাজ পাল্টাতে পেরেছে? প্ল্যাটো সেই জাগরণ দেখে ভেবেছিলেন, নারী প্রাকৃতিক ভাবে পুরুষের সমান কাজ করতে পারে। তার সেই কথা তখনকার দিনের লোকেরা মানেনি। তারা বলেছিল। নারীকে পুরুষের সমান বসালেই তার পুরুষের কাঁধে চড়বে।
আপনি হয়ত বলবেন, নারী রাস্ট্রপতি , প্রধানমন্ত্রী, শাসক, শিল্পী সাহিত্যিক , বিজ্ঞানী কর্পোরেট হাউসের বস (boss) নারী করতে পারে সব। যদি তা ভাবেন তাহলে ভুল করবেন। এই জগত ও সমাজ সৃষ্টিতে নারীদের শূন্য ভূমিকা।  নারী রাস্ট্রপতি, প্রধান মন্ত্রী, বিজ্ঞানী বা যা যা উচ্চপদে নারী যায় প্রত্যেকটাতে নারী শুধু   একটা পুতুল। তাকে পুরুষ চালনা করে। পুরুষ বাদে নারী কেউনা। পুরুষ তার যৌন সাহচর্যের জন্য নারীকে কাছে রাখে ও পুতুল হিসাবে ব্যবহার করে। যদি নারীর যোগ্যতা থাকত, সত্যি ক্ষমতা থাকত তাহলে ২২০০ বছরের পৃথিবীর ইতিহাসে আপনি কতজন শাসক, রাজা সম্রাট, শিল্পী সাহিত্যিক মেধাবী বিজ্ঞানী পেয়েছেন? পুরুষের তুলনায় অনুপাত কি? ভাবুন।

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।