কবিতায় অর্পিতা মুখার্জী চক্রবর্তী

ম্লান শরতের গল্প

প্রকৃতির কোষাগার থেকে উপচে পড়ছে শরতের মোহ..
ব্যস্ত শহরে পুজোর বিকিকিনির ছোঁয়াচে রোগ..
সদা ব্যস্ত জনপথে যানজট,মানুষের ঢল..
ফ্যাকাশে মুখে,গলায় একরাশ বোবা কান্না নিয়ে
পথ চলছে শাবানা..
অভ্যস্ত দ্রুত পা টালমাটাল এখন..
স্বপ্নের যে বাসা বেঁধেছিল ভরসার খড়কুটো, নিমেষে উধাও ছোঁয়াচে আদিম রিপুর থাবায়।
তাকে এলোপাথারি ছুঁয়ে অশুচি করলো যে,
জাতপাত,ছোঁয়াছানি নিয়ে সরব ছিল সে-ই..
দূরছাই করে তাড়িয়ে দিতে চেয়েছিল।
ভালো দিদিমণণি কোমর বেঁধে উঠেপড়ে লেগেছিল নেহাত,
কাজ জুটলো,ভাত জুটলো,
আঙুলে আঙুল জড়ানো অক্ষর পরিচয়
বস্তির কালো আঁধার ছাপিয়ে আলোর ঠিকানা লিখলো পোড়া কপালে।
দিদিমণির সেই স্বামীর তরফে কিছু নিষেধাজ্ঞা ছিল জারি।
তার অনুপস্থিতিতে আপত্তিরা একফুঁয়ে যেত উড়ে..
ভালোবাসার প্রশ্রয় পনেরো বছরের ঘুড়িটিকে দিত অবাধ ওড়ার পরোয়ানা।
সুতো ছিঁড়ে গেল হ্যাঁচকা টানে ছিঁড়ে দেওয়া ফ্রকটার মতোই।
শপিং মলের কাঁচের গায়ে ঠোঁটের জমাট রক্তে পুজোর দামি পোশাক..
দিদিমণির চোখের ঘৃণা ত্যাজ্য করল তাকে।
হাত বাড়ালে কাঁটাতারের বেড়া শুধু..
পথপ্রান্তে কুমোরের এক টুকরো দাওয়ায়
মাটি রূপ নিচ্ছে মায়ের,কন্যার..
আসমল চাচার গড়া দুর্গা মায়ের চোখে স্নেহের প্রশ্রয়..
ঠিক আগের ভালো দিদিমণির মায়া ভরা চোখের মতো।
সর্বংসহা মাটি জানে কতখানি দলিত হলে
অসুরের বুক রক্তাক্ত হয় ত্রিশূলের ফলায়..
ছেঁড়া পিঠ ওড়নায় ঢেকে ব্যস্ত পথের ভিড়ে মিশে যায় শাবানা..
মিশে যায় পিঙ্কি, মালতী কিংবা ফুলমণিরা সময়ের কোলে..
বিচার মেলে না..
বিসর্জনের করুণ গল্পের সাক্ষী থাকে নির্মম সময়..
দুর্নীতির অতলে তলিয়ে যেতে যেতেও বিসর্জন হয়না অসুর বাহিনীর..

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *