অনুগদ্যে অমিত মুখোপাধ্যায়

গণদেবতা

প্রকৃতির প্রতি আসক্তি আমার ধমনীতে। তাই বৈশাখের দিনে অরণ্যে, প্রান্তরে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে রক্তে দোলা লাগে। উছলে ওঠে মন। তার মধ্যেই এক পশলা বৃষ্টি আমাকে আরও আপ্লুত করে। আদিবাসী বাড়ির দাওয়ায় বসে হাঁড়িয়ায় চুমুক দিতে দিতে বৃষ্টি দেখা, আহা… কিন্তু সেই বৃষ্টি ছাপিয়েও ভেসে ওঠে আমার দেশের ছবি। মানুষ যেখানে কষ্টের আগুনে পুড়ছে। যেখানে এক শতাংশ মানুষের হাতে রয়েছে দেশের তিয়াত্তর শতাংশ সম্পদ। বাকিরা যার নাগাল পায় না। তবু তারা কাজ করে নগরে বন্দরে। ফসল ফলায়। খিদে চেপেও অন্যের খিদে মেটায়। এই সব মানুষের থেকে উচ্চ নয় কোনও ধর্ম, কোনও দেবতার স্থান। এই গণদেবতাই আমার উপাস্য। এই মানুষ প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ৷ নতুন ফুল, নতুন পাতা চেনার সঙ্গে সঙ্গে চিনতে হবে মানুষকে। আজ চাকুলিয়ার আরণ্যক গ্রামে সবার সুখশান্তি কামনায় ‘মা মোড়ে’ পুজোর আয়োজন হচ্ছে। ‘মারাং বুরু’র এই পুজো সর্বজনীন। পুজোর শেষে ধমসা, মাদল নিয়ে নাচ গান, সারিবদ্ধ ভাবে বসে পাত পেড়ে খিচুড়ি খাওয়ার মধ্যে দিয়ে প্রতিফলিত হয় একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত হয়ে, পাশে দাঁড়িয়ে, হাত ধরে বাঁচা। এই গণদেবতাকে প্রণাম।

Spread the love

You may also like...

error: Content is protected !!