হৈচৈ ছোটদের গল্পে অশোক কুমার ঘোষ

প্রকৃতি
রূপনারায়ণের তীরে দেগ্রাম বলে একটি গ্রামের মেয়ে প্রকৃতি।ভোর ভোর ঘুম ভেঙে যেতে ই সে ফুল তুলতে বেরিয়ে পড়ত।সে রোজ চলে আসত মানকুড় ঘাটে ।মানকুড় ঘাট প্রকৃতিদের বাড়ি থেকে বেশি দূরে নয়। আসলে প্রকৃতির বাবা তমাল নৌকা করে রূপনারায়ণ নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। খুব ভোরে নৌকা এসে হাজির হতো মানকুড় ঘাটে। বিভিন্ন ধরনের মাছকে আলাদা আলাদা করে ঝুড়ি করে নিয়ে আসতেন মানকুড় বাজারে। অনেক রকম মাছ পাওয়া যেত এই রূপনারায়ণ নদীতে।ট্যাঙরা,বেলে, ভেটকি, ভোলা,পাবদা,ফলুই, পাঁকাল, ছোট ও বড় চিংড়ি, আরো কতো কতো সুস্বাদু মাছ।ঐ মাছ বিক্রি করে তাদের সংসার চলে। প্রতিদিন নয়টা _দশটার সময় বাজারে মুড়ি ফুলঝুরি খেয়ে বাড়ি ফিরতো । ফেরার সময় মা দাদুর ও ঠাকুরমার জন্য মুড়ি ওফুলুরি নিয়ে বাড়ি ফিরতো। বাড়ি এসে চান টান করে চুলের ঝুঁটি বেঁধে ছুটে ছুটে বিদ্যালয় যেত ।
দেগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রকৃতি পড়ে। প্রধান শিক্ষক রমাকান্ত বাবু এত গরম পড়ার জন্য গাছ কাটাকে দায়ী করেন। বিদ্যালয়ে র সকল শিশুকে তিনি গাছ লাগানোর জন্য অনুরোধ করেন। তিনি বলেছেন, তাদের বাবা ও মা একাজে তাদের সাহায্য করতে পারেন । প্রকৃতি তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী। পরিবেশ ভালো রাখতে গাছ লাগানোর আর কোনো কিছু বিকল্প নেই, এই কথা শুনে সে পণ করেছে যে প্রতি দিন একটি করে গাছ লাগাবেই লাগাবে ।
বিদ্যালয় থেকে ফিরে এসে সোজা বাবার কাছে যায়। তার বাবা তখন জাল গুছাতে ব্যস্ত ছিলেন। কারণ রাতেই আবার মাছ ধরতে বের হতে হবে। প্রকৃতি বলে, বাবা, তুমি আমার একটা কথা শুনবে।
আমার মায়ের আবার কি কি কথা শুনবো, তাড়াতাড়ি বলে ফেলো ।
তোমাকে রোজ নদীর ধারে পাঁচটা করে গাছ লাগাতে হবে।
তাই নাকি?
কি গাছ লাগাতে হবে বলো ? প্রকৃতির বাবা তাকে বলেন।
আমি তোমাকে আমের গুটি, কাঁঠাল দানা,নিমের দানা, জামের দানা, ছোট ছোট বট গাছ সব তোমাকে আমি দেবো। তুমি নদী পাড়ের ফাঁকা জায়গা দেখে দানা গুলো ও গাছ গুলো পুঁতে দেবে ।ব্যস ! বৃষ্টি পড়লে ই সব গাছ ধরে যাবে।
বা! চমৎকার হবে। নদী পাড় গাছে গাছে ভরে উঠবে। তার বাবা হাসতে হাসতে বলল।
বাবা, বাবা, তুমি আমার কথা রাখবে তো?
তমাল বলে, তুমি আমার মিষ্টি সোনা, তোমার কথা রাখব না ,তা কি করে হয়?
জানো বাবা, তোমার নামটা একটা গাছের নাম! আমি পড়ে তা জেনেছি।
আমি তো এটা তো জানতাম না! একথা বলে তমাল হাসতে লাগলো।
তার পর থেকে তমাল ভোরের আলো ফুটলেই নৌকা থেকে নেমে প্রতিদিন কিছু না কিছু গাছ লাগিয়ে যেত । কখনো ছোট বট গাছ, ছোট কলা গাছ,আম,জাম কাঁঠাল দানা পুঁতে দিত নদীর ধারে নরম জায়গায়। সঙ্গে থাকত ছোট প্লাষ্টিক বালতি, ছোট কোদাল তার নৌকাতে থাকতো।
দেখতে দেখতে বছর পাঁচেক কেটে গেছে। প্রকৃতি এখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে।দেগ্রামের বাঁধের রাস্তা ধরে আসার সময়ে তার নিজের হাতে লাগানো সার সার আম জাম কাঁঠাল নিম বট তাল গাছে রাস্তার ধারে ভরে গেছে। প্রতিদিন ভোর বেলা গাছেদের আদর করতে করতে যায় মানকুড় ঘাটে আবার বাড়ি ফেরার সময় আদর করতে করতে বাড়ি ফিরতো।
এখন যখন গাঁয়ের লোক তাকে দেখে, হেসে বলে,ঐ আমাদের প্রকৃতি কন্যে আসছে। তখন সে খিলখিল করে হেসে ওঠে।
এরকম প্রকৃতি কন্যে জন্ম নিক গ্রামের ঘরে ঘরে। সবুজ গাছ গাছিলিতে ভরে উঠুক গ্রাম বাংলার রাস্তার ধারে ও নদীর ধারে।আর পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হোক আমার সবুজ বাংলা।