ধারাবাহিক কিশোর ভৌতিক উপন্যাসে আরিফা খাতুন (পর্ব – ২)

লুপ্ত কুঠি
আসিফ রজতকে চারিদিকে খুঁজতে লাগলো , এতো বড় বাড়ি কোথায় যে কোন দরজা তার কোনো কুল কিনারা যেন খুঁজে পাচ্ছে না । কিন্তু চাবুকের আওয়াজের শব্দের সাথে মানুষের চিৎকার আসিফের কান মাথা ধরে যাচ্ছিলো । রজতের গলা পেঁচিয়ে থাকা চাবুকের ছড়ি মুখের ভাষা কেড়ে নিয়েছে , চোখে তার রক্তজবার মতো অশ্রুধারা , না শরীর তার শক্তিহীন নড়াচড়াও নেই, যেন কোনো ব্যক্তি এই সবে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে । আসিফ চারিদিকে খুঁজতে খুঁজতে চাবুক ঝুলানো ঘরের সামনে উপস্থিত হলো । রজতের ঝুলন্ত দেহ আসিফকে বাকরুদ্ধ করেছে , তার পা আর সামনের দিকে এগুচ্ছে না। আসিফ তখন যেন বোধবুদ্ধিহীন এক জড়পদার্থ মাত্র, কিন্তু আসিফের পা দুটো যেন কোনো চুম্বক আকর্ষণে ওই ঘরের দিকে টানছে ,এ ভাবে দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যার দিকে , সূর্য তখন পশ্চিমি ঢালে যে কোনো মুহূর্তে যেন মেঘের আড়ালে ঢেকে যাবে । চারিদিকে তখন পাখির ডাকের কিচিরমিচির, আর মানুষের প্রাণ বাঁচানোর আত্মচিৎকারে গভীর জঙ্গল যেন কম্পিত । হঠাৎ কারো ধাক্কায় আসিফ দশ হাত দূরে ছিটকে গেলো , যেন কোনো আধ্যাত্মিক জগৎ থেকে বাস্তব জগতে সম্মতি ফিরলো তার। তার মাথায় আসছে না কি করবে সে, রজত কি মারা গেলো তবে ? তার কি ওই ঘরের মধ্যে প্রবেশ করা উচিৎ ?
নানা প্ৰশ্ন তাকে জর্জরিত করে দিচ্ছে । রাতের অন্ধকার নামার আগে কিছু একটা করতে হবে তাই দেরি না করে তড়িঘড়ি বের হলো আসেপাশে গ্রামবাসীদের ডাকতে ,কিন্তুু রাস্তা আর যেনো শেষ হচ্ছে না ! প্রায় এক ঘন্টা হাঁটার পর একটা রাস্তা সামনে পড়লো, তখন প্রায় অন্ধকার সামনে কিছু লোকজনের গলার আওয়াজ শুনে আসিফ দৌড়ে তাদের কাছে গেলো। একটু জল চেয়ে খাওয়ার পর আসিফ বলতে লাগলো পুরো ঘটনা। আসিফের কথা শুনে বছর পঞ্চাশের তপনবাবু বলে উঠলেন – ” যতসব পাগলের প্রলাপ, রাতেরবেলা ভূতের আবির্ভাব হয় শুনেছি দিনের বেলায় “ভূত “! আর আমার বাপের জন্মেও শুনিনি যে এই জঙ্গলে কোনো রাজবাড়ি আছে বলে “। আসিফ – “আপনারা বিশ্বাস করুন আমি মিথ্যা বলছি না । দয়া করে আমার বন্ধুটাকে বাঁচান , জানিনা ও আদৌ আর বেঁচে আছে কি না ” । পাশ থেকে করিমকাকা বলে উঠলেন “আমি কিন্তুু ছেলেটাকে অনেক বার দেখেছি জঙ্গলে কাঠ কাটতে যেতে “। স্বপন বলে উঠলো আরে বাবা চল না গিয়ে দেখি কথা বাড়াসনা রাত হচ্ছে তো ! এই বলে জনা দশেক মানুষ বেরহলো আসিফের পিছু নিলো সঙ্গে কিছু অস্ত্র ও টর্চ নিলো । ঘন্টা দেড়েক হাঁটার পরও বাড়ির কোনো অস্তিত্ব দেখতে পাচ্ছে না কেউ ! অনেকে বিরক্ত হয়ে বাড়িতে ফিরে আসতে চায় কিন্তুু আসিফ হাতে পায় ধরছে, দীর্ঘ পাঁচ বছর তারা এক সাথে কাঠ কাটতে আসছে এমন ঘটনা কখনো ঘটেনি আজ বন্ধুর এই অবস্থা, কি করে বাড়িতে ফিরবে সে। স্বপন বললো “দেখো ভাই আজ এতো রাতে আমরা হাজার খুঁজলেও পাবো না কিছু ।রাতের বেলা কোন রাস্তা দিয়ে তুমি এসেছো সেটাই তো বুঝতে পারছো না ? তাছাড়া এই আলোতে কিছু খুঁজে পাওয়াও সম্ভব নয়, তাই ফিরে চলো কাল কিছু ব্যবস্থা পরে করা যাবেখন” । আসিফ নিরুপায় হয়ে বাড়ি ফিরলো ।
চলবে