• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে অসিত কর্মকার (পর্ব – ২০)

যুদ্ধ যুদ্ধ

কুড়ি

আজ মোরগডাকা প্রহরের ঘন্টা গীর্জাঘরে বাজল না। প্রার্থনা সংগীতের আহ্বান ঘন্টাও বাজল না। চমকে উঠল গ্রামের মানুষজন। জাতধর্ম নির্বিশেষে গীর্জার ওই ঘন্টাধ্বনির সঙ্গে গ্রামের মানুষের প্রতিদিনের জীবনের ছন্দ বাঁধা পড়ে আছে। সেও তো এক শতাব্দীরও বেশি সময়ের কথা। কয়েক পুরুষানুক্রমিক জীবনের স্রোতধারায় কালের ঘন্টার মতো ওই ধ্বনি মানুষগুলোর হৃদয়ে সুরের মূর্ছনা হয়ে বেজে এসেছে। আজ হঠাৎ তা বন্ধ! আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে মানুষগুলো। এ এক অশুভ ইঙ্গিত নয়তো! তারই ছায়া পড়েছে মানুষগুলোর মনে। অগস্টিনকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। এ খবরটা হাওয়ার মতো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। ফাদার গ্যাব্রিয়েল অগস্টিনের খোঁজ পেতে ব্যাকুল হয়ে উঠেছেন। তিনি নিজেই এসেছেন থানায়। এ পৃথিবীতে তিনি ছাড়া আর তো কেউ একান্ত কাছের মানুষ বলে ছিল না অগস্টিনের। ছোট্ট অগস্টিনকে আশ্রয় দিয়ে বড় করে তুলেছিলেন ফাদার গ্যাব্রিয়েল। থানার বড়বাবু ব্যোমকেশ মল্লিকের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। এখনও পর্যন্ত অগস্টিনের কোনও খোঁজ পাননি তিনি। কিসের থেকে যে এমন একটা ঘটনা ঘটতে পারে তারই হদিশ করে উঠতে পারছেন না তিনি এখনও। ফাদারের উদ্দেশ্যে বললেন, এত বড় দায়িত্ব অগ্রাহ্য করে কোথাও চলে যাওয়ার ছেলে তো অগস্টিন নয়। আপনাকে আমি কথা দিচ্ছি ফাদার, ওকে খুঁজে বার করার দায়িত্ব যখন আমার তখন চেষ্টার কোনোরকম ত্রুটি আমি রাখব না।
অগস্টিনের খোঁজ নেই। গীর্জাঘরের ঘন্টা তাই বাজেনি। এ ঘটনায় নয়া বসতিও কম আলোড়িত নয়। পারুর সঙ্গে ভালবাসার সম্পর্ক হয়েছে বলে ওর বিরুদ্ধে যতই গলা চড়াক দয়ালের পরিবার ছেলে হিসেবে ওর তুলনা হয় না। কিন্তু সে কথা ওরা মুখ ফুটে বলতে পারলে তো! তবে মনে মনে ওরা খুব ভেঙ্গে পড়েছে। ভগবানের কাছে, প্রভু যীশুর কাছে প্রার্থনা করছে, অগস্টিন যেন ফিরে আসে। ফের সে তার কাজে বহাল হয়। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত তার হাতে গীর্জাঘরের ঘন্টা বেজে উঠুক। গ্রামের মানুষগুলো ফিরে পাক প্রতিদিনের জীবনের ছন্দ।
নয়াবসতির মানুষগুলো মাঝের উঠোনটায় ভিড় করে দাঁড়িয়ে এখন। ওদের মুখে মুখে অগস্টিনের হারিয়ে যাওয়ার কথাবার্তা। ওই নিয়ে ওদের হায় হুতাশ আর মনোবেদনা।
এই ঘটনায় দয়ালও বিস্মিত কম নয়। হঠাৎ করে একটা ছেলে এভাবে উধাও হয়ে যেতে পারে! শুনে মানুষটা তরল হাসি হেসে বলল, এরচাইতেও কত বড় বড় ঘটনা পিথিবিতে ঘটতাছে!আর এইটা তো ঘটারই ছিল, দেখলা তো, আমার তাবিজের কী গুন! তোমার মাইয়ার লগে অর সম্পক্কই শুধু ভাঙ্গে নাই, ছেলেটা এক্কেরে দেশছাড়া হইয়া গেছে। তুমি দেইখো, অয় আর ফিরব না। তুমি এখন পারুর কোমরের ঐ তাবিজ খুইলা নদীতে ফালাইয়া দাও।
আছে থাক না গোঁসাই! আর তো মাত্র কটা দিন। ভালোয় ভালোয় বিয়েটা হয়ে যাক। কিন্তু ভয় তো এখন একটাই, যদি এরমধ্যে ছেলেটা ফিরে আসে!
আমার দেওয়া তাবিজের কিরাকাম ভুল হইতে পারে না দয়াল! ঐ ছেলে এখন পাগল হইয়া কোথায় কোথায় ঘোরতাছে, অতীতবিতিত সব ভোলছে! মানুষটা দৃঢ় কন্ঠে বলল।
দিনের পর দিন যায়, অগস্টিনের কোনও খোঁজ নেই এখনও। লুকাসের মন ভাল নেই। কোথায় হারিয়ে গেল তার প্রিয় অগস্টিনদাদা? সে তো মনেপ্রাণে খুব করে চেয়েছিল, পারুদিদির সঙ্গে অগস্টিনদাদার বিয়েটা হোক। এই বিয়ে হলে ওরা সুখে থাকবে। গোঁসাইমানুষটার সঙ্গে সে এ গ্রামে সে গ্রামে ঘোরে, মানুষটার সহায়ক হয়ে কাজ করে কিন্তু তার মন পড়ে থাকে অগস্টিনদাদার খোঁজে। নানাজনকে জিজ্ঞেস করে। খোঁজ পায় না। মন খারাপ হয়। মানুষটার চোখ এড়ায় না তা। বলে, নয়াবসতিতে তগ এখন নতুন কইরা জীবন শুরু হইছে। হারানো ধর্মও ফিরা পাইছস তরা।ঐসব আর মনে জায়গা দিয়া কী লাভ,আমার লগে যে কামটা করতাছস সেইটাই মন লাগাইয়া কর। আমার রোজগার বাড়লে তরও লাভ, বিয়াসাদি কইরা সংসার পাততে হইব না তরে!
তবুও মন মানে না লুকাসের, যেমন করেই হোক একবার সে পারুদিদির সঙ্গে দেখা করতে চায়। পারুদিদিকে তার অনেক কথা বলার আছে। না বললে বড় অন্যায় করা হবে।সয়েনিকে পাওয়ার জন্য সে এই গোঁসাইমানুষটার শরণাপন্ন হয়েছে। তার কথামত সে সয়েনির গায়ে মন্ত্রপড়া সজারুর কাঁটা ফুটিয়েছে, ধুলো আর সঙ্গমের জল ছিটিয়েছে। মানুষটার এই ক্ষমতার কথা কোনওদিন সে পারুদিদিকে মুখ ফুটে বলেনি। লজ্জাসংকোচ ছিল যে। কিন্তু এখন আর তা সে গোপন রাখতে চায় না। সেদিন অগস্টিনদাদার সঙ্গে দেখা হতে সে পারুদিদির কথা জিজ্ঞেস করেছিল। উত্তরে লুকাস পারুদিদির একরকম ঘরবন্দি থাকার কথা বলেছিল। সেইসঙ্গে তাকে যে মন্ত্রপড়া তাবিজ কোমরে পরানো হয়েছে সে কথাও বলেছিল। আর ওই তাবিজটা যে গোঁসাইমানুষটাই হাট থেকে কিনে এনে তাতে মন্ত্র পড়ে দয়ালদাদুকে দিয়েছিল পারুদিদিকে পরানোর জন্য তাতে কোনও সন্দেহ নেই তার।আর একথাও বলতে ভোলেনি যে পারুদিদির সঙ্গে গোঁসাইমানুষটার বিয়ে হচ্ছেই। শুনে অগস্টিন মুহূর্তে পাথরকঠিন মৌন হয়ে ওঠে।
লুকাস এখন ভাবতেই পারে না যে, তারপর মাত্র তিনচার দিনের মধ্যেই তার অগস্টিনদাদা কোথায় হারিয়ে গেল!
তার প্রিয় পারুদিদির সঙ্গে দেখা করেছিল লুকাস। আর সেদিনই রাত গভীরে মানুষটার দরজায় টোকা পড়ল। ওই শব্দে মানুষটার সারা শরীরের রক্ত যেন বুকের মধ্যে প্রচন্ড বেগে আছড়ে পড়ল। ভয়ে পান্ডুর হয়ে উঠল তার সারা শরীর। তবে কি অগস্টিনের প্রেতাত্মা এল এই রাত দুপুরে প্রতিশোধ নিতে! হাঁসুয়া হাতে সেই ভয়ঙ্কর মূর্তি আজ অশরীরী হয়ে এসেছে প্রতিশোধ নিতে! জীবিতের সাথে লড়া গেলেও ওই অশরীরীর সঙ্গে কীভাবে লড়াই করতে হয় তা মানুষটা জানেনা। ওদের সঙ্গে লড়াই করে যে জেতা যায় না তা সে বহুবার শুনেছে। এমনকী ওই ত্রিশূল হাতেও কায়াহীন ছায়ামানুষের সঙ্গে লড়া যায় না। তবে কি আজ তার মৃত্যু অনিবার্য?
ও গোঁসাই, গোঁসাই, দরজাটা খোল, আমি পারু। তোমার সেই গামছাটা ফেরৎ দিতে এলাম।
মানুষটা অবাক। পারু এসেছে এত রাত করে তার ঘরে! আর শুধু গামছাটা ফেরৎ দিতে! ওই গামছা তার আর কী কাজে লাগবে যে ফেরৎ নিতেই হবে? তাহলে কি পারুর গলা করে অন্য কেউ দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে? নাকি অগস্টিনের প্রেতাত্মা পারুতে ভর করে এখানে এসেছে!
ভয় আর আতঙ্কের মধ্যেও পারুকে এভাবে একান্ত
কাছের করে পাওয়ার লোভ যে হচ্ছে না তা নয়। খুব হচ্ছে। আবার এও ভাবে মানুষটা, পারু ঘর থেকে বেরোল কী করে, বেরোতে পারার তো কথা নয়! দয়াল ওর ঘরের ছিটকিনি রাত করে বাইরে থেকে দিয়ে দেয়। যাতে করে ওই কোকিলের ডাকে সাড়া দিয়ে অভিসারে না যেতে পারে। তাহলে কি আজ দয়াল ছিটকিনি দিতে ভুলে গেল নাকি অন্য কেউ পারুকে সাহায্য করতে ছিটকিনিটা খুলে দিল! কে সে?
পারু লুকাসের মুখে সব শুনে ভীষণই চুপ ছিল। খানিক সময় ধরে কী যেন ভাবছিল। তারপর অস্ফুটে শুধু বলেছিল, তুই আমার একটা উপকার করতে পারিস তো খুব ভাল হয় ভাই।
কী উপকার, বলো তুমি, আমি ঠিক পারব। লুকাস গভীর কৌতূহলী দৃষ্টি নিয়ে পারুর দিকে তাকিয়ে ছিল।
রাতে ছিটকিনিটা খুলে দেওয়ার কাতর দাবি রেখেছিল পারু। অমত করেনি লুকাস,পারুর জন্য এ কাজ সাহস করে সে করবেই। ওদের ভালোবাসা সার্থক হোক, মনেপ্রাণে চায় সে। কথা দেয়, আজই সে ওই ছিটকিনিটা খুলে দেবে।
পারুকে কাছে পাওয়ার জন্য তাড়িত এখন মানুষটা। তারপরও নিশ্চিত হতে দরজায় কান পেতে জিজ্ঞেস করে, তুই পারুই তো না?
হ্যাঁ গো, হ্যাঁ। আমি পারুই। দরজাটা খোল তো এবার। তোমার সঙ্গে অনেক কথা আছে। দুদিন পরে বিয়ে, কিছু মনের কথাও তো বলার থাকে নাকি।
হুবহু পারুরই গলা পায় মানুষটা। নিশ্চিত হয়, এ পারু ছাড়া আর কেউ না। মনের কথা বলতে এসেছে তার কাছে। তারও কত কথা আছে পারুর সঙ্গে। পারুর এই সাহসকে মনে মনে সাবাশি দেয় মানুষটা। ভুলে যায় ওই ছিটকিনিটা দিতে কি দয়াল ভুলে গিয়েছিল নাকি কেউ বাইরে থেকে খুলে দিল!
হ্যারিকেনটা একটু উস্কে নিয়ে দ্রুত হাতে দরজাটা খুলে দিল মানুষটা। এখন তার সামনে দাঁড়িয়ে পারু। গামছাটা দুহাতে লম্বা করে বুকের কাছে ধরে আছে। ঠোঁটের বাঁকে চটুল হাসি। চোখের কোণে কামনার ইঙ্গিত।
আমি জানতাম পারু, তুই একদিন ঠিক আমার কাছে আইবি। উৎসাহের সঙ্গে বলল মানুষটা।
হ্যাঁ গোঁসাই, তোমার সঙ্গেই জীবন আমার বাঁধা পড়ল। তা এই ঘরেই তো দুজনায় সংসার করতে হবে। তা একটু দেখি ঘরটা।
অবশ্যই দেখবি পারু। এখানেই তো তোর সংসারপাতি হইব। ঘরটা বড় মজবুত কইরা বানাইয়া দিছে তোর বাপে আমারে।
হ্যারিকেনের আলোটা আরও একটু উস্কে দেয় মানুষটা। পুরো ঘরটা পারুর চোখের সামনে পরিস্কার এখন। পারু মানুষটার চৌকির একধারে বসে। আর সে লক্ষ্য করে মানুষটার চোখের ভাষা কেমন পাল্টে যাচ্ছে। তার পাশটিতে এসে বসে মানুষটা। একটা হাত পারুর কাঁধে রাখতে যায়, হয়ত পারুর মন পরীক্ষার জন্যই, পারু তাকে সত্যি সত্যি মন থেকে মেনে নিয়েছে তো? নিলে এটুকু আলিঙ্গনের চেষ্টাকে সে প্রশ্রয়ই দেবে। দিলও তাই। কোনওরকম বাধা দিল না, অসম্মতিও জানাল না। হাতটা যেন পারুর নরম কোমল কাঁধে খুব কাছের, ঘনিষ্ঠ হয়ে বসে আছে। উৎফুল্ল হয় মানুষটা। বলল, তোর সাহস দেইখা আমি বড় খুশি হইছি রে পারু। বলতে বলতে মানুষটা পারুর কাঁধের ওপর দিয়ে মাথাটা পারুর মুখমণ্ডলের দিকে এগিয়ে দেয়। পারুর কাঁধে মানুষটার গরম শ্বাস পড়ছে। নোনা হাওয়ায় এখন উগ্র বুনোগন্ধ। মানুষটার হাতটা একটু একটু করে পারুর পিঠের দিকে নেমে আসতে থাকে। সে হাত পারুর পিঠের চাতালে কামনার খেলায় মাতে। নরম মাংসে বাঘনখ গেঁথে বসছে যেন। হঠাৎই পারু শরীরে এক মোচড় মেরে লীলায়িত ভঙ্গিমায় উঠে দাঁড়াল। বলল, তোমার দেখছি মোটে তর সইছে না গোঁসাই। দাঁড়াও, আগে মালাবদলটা তো হোক, কিন্তু এত রাতে মালা আর কোথায় পাব, এই গামছাটাকেই ধরে নাও মালা। এই তোমায় আমি পরিয়ে দিলাম!
পারু মুহূর্তের মধ্যে গামছাটা মানুষটার মাথার উপর দিয়ে নিয়ে গলার কাছটায় আটকে ধরে সেখানে একটা ফাঁস পরিয়ে দিল। পরক্ষণেই মানুষটাকে এক ধাক্কায় বিছানায় শুইয়ে ফেলে দ্রুত তার বুকের উপর চেপে বসল। পারুর এখন রণচন্ডী মূর্তি।ফাঁসটার দুপ্রান্ত দুমুঠিতে শক্ত করে ধরে আছে সে।
আতঙ্কে চিৎকার করে উঠতে চায় মানুষটা। কিন্তু শরীরের উপর এই কঠিন ভারে দম আটকে আসছে তার। শ্বাসকষ্ট বোধ করছে সে। কোনওরকমে অস্ফুটে বলল, এ তুই কী করতাছস পারু? এতে কইরা কি আমি বাঁচুম!
কেন, আমায় তুমি ভোগ করবে না গোঁসাই? নাও, ভোগ কর! এই তো তোমার শরীরে আমার শরীরটা কেমন লেপ্টে দিয়েছি…
আঃ, আমারে তুই ছাইড়া দে, আমি তোর শরীলের ভার আর নিতে পারতাছি না পারু!ছাইড়া দে আমারে! তোর পায়ে পড়ি।
মানুষটার আকুতিমাখা করুণ কন্ঠস্বর পারুর হাতে ধরা ফাঁসের মধ্যে ধীরে ধীরে ক্ষীণ হয়ে আসছে। সে বারকয়েক আপ্রাণ চেষ্টায় পারুকে ঠেলে সরিয়ে দিতে গিয়ে ব্যর্থ হল। পারু যেন আরও কঠিন ভার হয়ে উঠে মানুষটার সমস্ত অস্তিত্বকে গ্রাস করছে।
এখন সত্যি করে বলতো গোঁসাই, অগস্টিনকে তুমি কোথায় সরিয়ে দিয়েছ! কঠিন গলায় জিজ্ঞেস করল পারু।
সে কই চইলা গেছে তার আমি কী জানি! ক্ষীণ গলায় বলল মানুষটা।
জানো গোঁসাই, তুমিই সব জানো। বল…! ফাঁসটাকে আরও কঠিন করে দুদিকে টানে পারু।
মানুষটার এখন শ্বাস নিতে তীব্র কষ্ট হচ্ছে। চোখ দুটো ঠেলে বাইরে বেরিয়ে আসছে যেন। রক্ত জমাট বেঁধে মুখমণ্ডল কেমন টসটস করছে। ফাঁসটায় আরেকবার টান পড়তে মানুষটা ফের একবার আর্তনাদ করে ওঠার চেষ্টা করে। বলল, তরে আমি সব কইতাছি পারু, আগে আমারে তুই বাঁচা! আমিই অগস্টিনরে খুন কইরা নদীর চরায় তার লাশ পুঁইতা দিছি।
তুমি ওকে খুন করেছ গোঁসাই! মনের তীব্র যন্ত্রণা আর ক্রোধে চিৎকার করে ওঠে পারু।
হ পারু, শুধু তোরে পাওনের লেইগা। এইদেশের মাটিতে নতুন কইরা সংসারপাতনের বড় সখ জাগছিল মনে। তরে আমার বড় মনে ধরছে বইলাই দয়ালরে মনের কথাটা কইছিলাম। কিন্তু তোরে পাওনের বাধা ওই অগস্টিন। সেদিন তাই সুযোগ পাইয়া…
পারু শেষবারের মত ফাঁসটাকে টেনে দিতেই তার শরীরের নীচে মানুষটার শরীরটা মুন্ডু কাটা পশুর মতো খানিক ধড়ফড় ধড়ফড় করে একসময় নিথর হয়ে গেল।
পারু তার গলায় ঝুলানো ক্রুশটা বারকয়েক কপালে আর বুকে ঠেকিয়ে আকুতিভরা গলায় বলল,প্রভু, তুমি আমাকে ক্ষমা কর!
গামছার ফাঁসে বেঁধে একটা লাশকে কী অবলীলায় নয়া বসতির দিকে টেনে নিয়ে চলেছে পারু। আর সে ঘনঘন অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছে। সে শব্দে অন্ধকার পৃথিবী জাগছে। নদীর ওপারে মেঘের ফাঁকে নতুন সূর্য উঠছে। তারই আলো এসে পড়েছে এপারে। আলো ছড়িয়ে পড়ছে।

সমাপ্ত

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।