সত্যপ্রকাশের ছেলে অর্ণব এখন উধমপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক। সত্যপ্রকাশ এখানে গ্রুপ-‘ডি’।
ঘণ্টা পেটানো এবং মাস্টারদের চা-জল দেওয়া তার কাজ।
নোটিশ ঘোরানো, ব্যাঙ্কের কাজ ইত্যাদির জন্য আরেকটু লেখাপড়ার প্রয়োজন বলে, আরও এক অস্থায়ী চতুর্থশ্রেণী রয়েছে। নাম নিখিলেশ। ছাত্রদের থেকে সংগৃহীত ফি থেকে তাঁকে যৎসামান্য দেওয়া হয়।
অনেকে বলে, বয়স হোল এবার ছেড়ে দাও। পেনশন পাবে। ছেলের অফিস ঝাড়ু দেওয়া ভালো দেখায় না।
অন্যপক্ষ বলে, কলিকালে কিস্যু বিশ্রাম নেই। পেনশন আর কতটুকু, লড়ে যাও সত্যপ্রকাশ। উড়োকথায় কান দিও না। সত্যপ্রকাশ মুচকি হাসে।
সত্যপ্রকাশ লক্ষ্য করে, ছেলে হেডস্যার হওয়ার পর সকলের ভাবভঙ্গীর খোলনলচে বদলে গেছে।
অর্ডার ছিল, সত্যদা জলের বোতলটা ভরে দাও।
এখন একই ব্যাক্তির অনুনয়, সত্যদা জলের বোতলটা দেবে গো। বাপ হয়েও বিনা অনুমতিতে হেডস্যারের চেম্বারে সে ঢোকে না।
আসছি বলে, অনুমতি নেয়।
ছেলে হ্যাঁ না কিচ্ছুটি না বলে মুখ নীচু করে থাকে।
সত্য বেশ কৌতুক বোধ করে, কাজে আরও মজা পায়।
নির্মল বিদ্যালয় অভিযানে ছাত্রীদের বলে, হেডস্যারকে ডাক্ হাত লাগাতে হবে।
দেখাদেখি অন্য স্যারেরাও মুখ গোমড়া করে হাত লাগায়।
বেশ চলছিল, ছেলে যখন বায়না ধরলো মন খারাপ সত্যপ্রকাশের।বছর পাঁচেক ছিল এখনও। বলে, স্বেচ্ছাবসর, ভালো কথা, ঘরে বসে করবটা কি শুনি।
-কেন, তাস পেটাবে, বাগান করবে, ভারত ভ্রমণ করবে, কত কাজ।
ঘোর অনিচ্ছায় স্বেচ্ছাবসর হোল, ফেয়ারওয়েল অস্বীকার করলো ভদ্রভাবে।
দু-মাস পর আবার কোথাকার জল কোথায় যেন গড়িয়ে চলে এলো। সত্যপ্রকাশ দিব্যি অম্লানবদনে বারান্দায় ঝাড়ু মারছে।
ছেলে বিরক্ত হয়।-একি নিজের বাড়ি তোমার নাকি? অবসর গ্রহণের পর বিনা অনুমতিতে এসে কাজ করছো, সরকারী বিদ্যালয়ে?
সত্যপ্রকাশ বলে, আহা হেডস্যারের অত চটে গেলে হয়। নিখিলেশ কতই বা মাইনে পায়, একা সব দিক পারে? আর আমি অত কাঁচা খেলোয়াড় না, হেডস্যারের বস্ সভাপতি তার লিখিত অনুমতি আমার পকেটে আছে, কাজটা সেরেই হেডমাস্টার মশাইয়ের চেম্বারে অ্যাপ্রুভ করিয়ে নেবো।
অর্ণব রেগে যাওয়ার বদলে হেসে ফ্যালে।
এদেশে বিদ্যাসাগরেরা হয়তো একবার জন্মান, কিন্তু ঠাকুরদাসেরা বারে বারে …