সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে অনিরুদ্ধ গোস্বামী (পর্ব – ২৫)

অদৃশ্য প্রজাপতি

লুপ ক্লোজার
প্রমোশন এর মেইল টা পেয়ে বাড়িতে ফোন করে খবর টা জানালাম। তারা তো আনন্দে আত্মহারা। এরপর বাবা বললো সব ঠিক আছে ,কিন্তু আথিরার কিছু খবর আছে?
নীল:না ,বাবা ,কিন্তু স্ক্যুটি টার সূত্র ধরে কি খোঁজ পেয়েছি সেটা তো তোমাকে বলেছি। যদি আমাদের রাইভাল কোম্পানির কেউ হয় তো চাকরি তে সমস্যা হতে পারে।
বাবা: কেন প্রেম কি কেউ করে না। শোন আমার মনে হয় ত্রিভান্দ্রাম গিয়ে তোর একবার খোঁজ নিয়ে আসা উচিত। কারণ টা জানা দরকার। কেরালা থেকে চলে যাবার আগে এটা তুই যদি পরিষ্কার না হয়ে যায় তা হলে সারা জীবন এই প্রশ্ন তোকে তাড়া করে বেড়াবে। কেন সে এটা করলো …ইত্যাদি। তুই এটা সারা জীবন বয়ে বেড়াবি,শান্তি পাবি না । তোকে এগোতে দেবেনা অন্য কোনো রিলেসন এর ক্ষেত্রেও। আর যখন একটা ঠিকানা পাওয়া গেছে তখন তোর যাওয়া জরুরি।
নীল :কিন্তু, দুদিনের আলাপ বই তো নয় !
বাবা:দেখ সারাজীবন একসাথে থেকেও মনের দিক থেকে অনেকে অনেক দূরে থাকে,একদিন বা দুদিন ম্যাটার করে না যেটা বিবেচ্য সেটা হলো প্রেম বা ভালোবাসা বাকি সব পরে।
নীল কোনো কিন্তু নয় তুই যুদ্ধ করতে যাচ্ছিস না ,আর এটা জরুরি ,লুপ ক্লোসার করা অবশই দরকার।
তিনদিনের ছুটি নিয়ে পরেরদিন বিকেল ৫ টায় ত্রিভান্দ্রাম গামী ট্রেন ধরলাম এর্নাকুলাম টাউন স্টেশন থেকে। প্রায় পাঁচ ঘন্টা লাগবে ,AC চেয়ার কার এ। যাবার পথে পুরানো স্মৃতি গুলো ফিরে আসছিলো। প্রায় ৫ মাস এর উপর আথিরার কোনো খোঁজ পাইনি। আথিরা যে কোনো তথ্য চুরির কাজে লিপ্ত থাকতে পারে মন কিছুতেই মানতে চাইছিলো না। রাত দশ টা নাগাদ হোটেল এ চেক ইন করলাম। ডিনার করে বিছানায় শুয়ে এটাই মনে হচ্ছে হয়তো কয়েক কিলোমিটার এর মধ্যে তার বাড়ি ,তার শহরে রয়েছি। কি করছে এখন সে ,ঘুমিয়ে পড়েছে হয়তো শান্তি তে।
বাবা কে ফোন করে জানিয়ে দিলাম। বাবা বললো লক্ষ্য -একটাই সত্য কে জানা।
রাতে ঠিক ঘুম হলো না। সত্যি যদি হয় যে সে ভালোবাসেনি শুধু ব্যাবহার করে গেছে ,দেখাই হয়তো করলো না ,বা ঠিকানা তে কেউ থাকে না অথবা যা ভাবছি সবটাই ভুল -সি জাস্ট ভ্যানিশড।
পরের দিন সকাল ন টা নাগাদ একটা অটো নিয়ে নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে গেলাম। ত্রিভান্দ্রাম এর অভিজাত এলাকায় অনেকটা জায়গা জুড়ে এটা একটা অফিস কাম রেসিডেন্স ফার্মাসিউটিকাল কোম্পানি টির। উঁচু পাঁচিল দিয়ে পুরো টা ঘেরা। বাইরে থেকে দেখলাম বাড়ি টি অনেকটা জায়গা জুড়ে প্রসারিত । সাদা রং তার সাথে টালি রঙের ছাদ।
দারোয়ান কে আমার কার্ড দিয়ে বললাম আমি নীল ,আথিরা বালাকৃষ্ণান এর সাথে দেখা করতে চাই। কার্ড টা নিয়ে আমার নাম টা শুনে চমকে উঠলো ,যেন সে আমার জন্যই অপেক্ষা করছিলো। বললো “dayavāyi akattu vannāluṁ ” ( ভেতরে আসুন অনুগ্রহ করে )।
ইন্টারকম এ খবর পেয়ে ভেতর থেকে এক বয়স্ক ভদ্রলোক হন্তদন্ত ছুতে এলেন,সাদা ধুতি আর শার্ট কপালে তিলক ,ধব ধবে পরিষ্কার গায়ের রং,পৈতা দেখা যাচ্ছে ,মাথার চুল সিল্কি সাদা ,বললেন প্লিজ কাম ইন ,আই এম আথিরা’স আঙ্কেল। আথিরা যেমনটি বলেছিলো ঠিক তেমনটি আপনি ,নীল। আসুন।
মনে একটা চাপা উত্তেজনা আর তার সাথে রাগ হচ্ছে। এক তো কোনো যোগাযোগ নেই তার উপর খবর পেয়ে বাইরে এলোই না …এ কেমন হেঁয়ালি …কোনো ফাঁদ নয়তো …
ভদ্রলোক বললেন আথিরা ভেতরে, আসুন কোনো ভয় নেই। পিচ বাঁধানো রাস্তা ধরে এগোতে লাগলাম। পুরো বাড়িটা কয়েকটি অংশে বিভক্ত। থাম বসানো কেরালা ট্রেডিশন এর বাড়ি।
হল ঘর এর মতো জায়গায় এসে পৌঁছালাম। বেশ কিছু আত্মীয় স্বজন ছিলেন অভ্যর্থনার জন্য। নমস্কার আর প্রতিনমস্কার এর পালা সঙ্গে হলে বললাম আথিরা কোথায় ?
আমার চোখের উৎকণ্ঠা লক্ষ্য করে বললেন লেটস গো টু হার পোরশন এন্ড রুম। লম্বা একটা প্যাসেজ এর মধ্যে দিয়ে এগিয়ে গেলাম। রোদ এসে পড়েছে। এই পোরশন টা তে আধুনিকতার সাথে আদি গঠন শৈলীর মিশ্রণ।
যত এগোচ্ছি মনে হচ্ছে সে কি একবার ছুটে এসে দাঁড়াতে পারতো না। লক্ষ্য করলাম আমার হাতের তালু ঘামছে। তাকে কি ভাবে দেখবো ,শেষবার যেমন দেখেছিলাম -বড় টানা টানা কাজল চোখে আমায় দেখবে আর বলবে দু হাত প্রসারিত করে কাছে এস নীল …
সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে আসলাম। একটা বড় ব্যালকনি। ব্যালকনির প্রান্তে বসার জায়গা ,কাঠের তৈরী। মাঝে একটা দোলনা ঝুলছে। ভদ্রলোক বললেন এর পোরশন পুরো টায় আথিরার। তার প্ল্যান এ তৈরী। সামনে একটি দরজা দেখিয়ে বললেন “মাই সন সি ইস ইনসাইড ,ইউ ক্যান গো ,আই এম কামিং শর্টলি ”
কি দেখবো ভেতরে ?আশ্চর্য্য ,লক্ষ্য করে দেখলে দরজার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আমার সব দ্বিধা দ্বন্দ্ব সব উধাও ।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।