চেনা নদীর পথ বেয়ে পর দিন সকালে ওরা ফুলবাড়ী থেকে সকালে জলখাবার খেয়ে রওনা হলো আমঝাড়ার দিকে। প্রথমেই ওরা উঠে এলো সেই ছোট্ট কুঠিরে। যেখানে পাহারাদার থাকে। রান্নার জিনিস পত্র ওদের আত্মীয় আগে থেকেই জোগাড় করে রেখেছিল।
টিংকু মানে ফজল মামা , সাবির আহমেদ আর সুবীর চ্যাটার্জি এই তিন জনের কম্বিনেশন সাথে পাহারাদার ওরা জাল নিয়ে ফিসারিতে নেমে পড়লো। জাল ফেলতে ওরা জানেনা ঠিকই কিন্তু ওদের উৎসাহ চোখে পড়ার মতন। ভেটকি পেলো আর পেলো সুন্দরবনের বিখ্যাত বাগদা, আর মোচা চিংড়ি। ওরা জিজ্ঞাসা করলো মাছ গুলো কোথায় বিক্রি করা হয়। পাহারাদার জানালো মূলত ক্যানিয়ের মাছ বাজারে যায়। সেখান থেকে কলকাতা। আবার উৎকৃষ্ট মানের চিংড়ি বিদেশেও যায়!! ওরা সালতিতে চড়ে যে মজা নিচ্ছে কোলকাতার কোন আ্যমিউজমেন্ট পার্কে সেই মজা কোনো দিনই পায়নি।
দীর্ঘ ফিসারির কিছু কিনারা যেনো দেখা যায়না শুধু জল আর জল। নদী সংলগ্ন ফিসারতে এই অনুভূতিটাই হয়। পাহারাদার জাল ফেলছে আর ওরা নিজের হাতে জাল ছাড়াচ্ছে আর মাছ সংগ্রহ করছে, এ যেনো আধা সহুরে লোকেদের কাছে বেশ মজার খেলা!
দুপুরে মাছ রান্না করে ওরা ওখানেই খেলো। আইটেমে ভাতের থেকে মাছ সেখানে বেশি। দুপুরে হালকা ঘুমিয়ে আশপাশের বাজারে চায়ের দোকানে ওরা চা খেতে গেলো।তার পর সন্ধ্যা নামার আগে ফিরে এলো। আজ ওদের প্ল্যান রাত কাটাবে ফিসারির ওই কুটিরে। রাতের রান্না তৈরি আছে।
এর পর সূর্যাস্তের সময় আকাশ যেনো লাল, লালের লালিমা পড়েছে বিস্তীর্ণ জলরাশিতে! আসে পাসে বাড়ি ঘর বিশেষ নেই গাছ পালাও বিশেষ নেই। সূর্যের আলো নরম হতে হতেই আকাশে উঠলো ততোধিক নরম চাঁদ। আজ পূর্ণিমা। পাহারাদার আর ওরা তিনজন নানান গল্পে মেতে গেলো। টিংকু মামার মাঝে মাঝে তাল জ্ঞান থাকেনা। মামা এমন পরিস্থিতিতে ইতিহাস শেখাচ্ছে যেনো। কোথায় গাইবে রবীন্দ্রনাথের সেই বিখ্যাত গান ” আজ জোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে ” তা না, ও এখন বলছে এই বিদ্যাধরী দিয়ে এগোলে ” হোমড়া ” নামে একটা গ্রাম আছে। ওখানেই শোনা যায় প্রতাপাদিত্য ওড়িশার জাজপুর থেকে ক এক ঘর ব্রাম্ভন বসিয়েছিলেন। পরে প্রতাপাদিত্যের পতনের পরে তারা জয়নগর মজিলপুরের দিকে চলে যায়। পরে বাংলার জনজীবনের সাথে এই ওড়িয়া ব্রাম্ভনগণ মিলে মিশে যান। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার আদি ব্রাহ্মণদের মধ্যে এরা অন্যতম!
সুবীর বললো মামা এখন যেমন সুন্দর চাঁদ উঠেছে এখন ইতিহাসটা একটু বন্ধ রাখো। । রাতের খাওয়া দাওয়া সব হয়েগেছে, পাহারাদার জানালো একটু গ্রামের থেকে ঘুরে আসছি, একটু পরেই ফিরবো।
সাবির ,সুবীর আর টিংকু মামার গল্প বেড়ে চলেছে আর রাত ও বেড়ে চলেছে। পাহারাদারের ফেরার নাম নেই। এমন ভাবেই তারা গল্প করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পরলো ওরা জানেনা!
এখন প্রায় মাঝ রাত । জোৎস্নার আলোয় উদ্ভাসিত পুরো এলাকা। একটা কুকুর দীর্ঘক্ষণ ধরে ডেকে চলেছে। এই কুকুরটি মাঝে মাঝে গ্রাম থেকে ফিসারিতে আসে। পাহারাদার তাকে মাঝে মধ্যে খাওয়ায়। সারাদিনের মাছ ধরা, সালতি চড়া, স্নান করার পরিশ্রমে ওরা ক্লান্তি নিয়ে রাতে ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু ওটা কিসের আওয়াজ! মাঝ রাতে সাবিরের ঘুম ভেংগে গেল! ফিসারির শেষ কিনারায় একটু উচু মতন জায়গা! ওই দিকটা সচরাচর কেউ যায়না! যেতে চায় ও না! মাঝে মধ্যে কোনো জেলে বন বিবির থান হিসাবে ওখানে ধুপ, মোমবাতি জ্বালিয়ে দিয়ে আসে। ওই পর্যন্তই। ওই উঁচু মতন জায়গাটার দিকে এলাকার মানুষজন তো বটেই আশপাশের ফিশারির পাহারাদার, জেলেরাও ওদিকে যেতে চায়না ! মাঝ রাতে ওই দিক থেকেই কুকুরের ডাক আসছিল। টিংকু মামা আর সুবীর তখন গভীর ঘুমের মধ্যে। সাবির ওই কুটিরের বাইরে নেমে এলো! ওই উঁচু দিকটাতে যাবার জন্য কেমন যেনো মনে সাড়া দিল। এখন কিন্তু কোনো কুকুরের আওয়াজ নেই!বেশ গা ছমছমে পরিবেশ। কিন্তু কি যেনো একটা আওয়াজ আসছে ক্ষীণ ভাবে । কাছে যেতে আওয়াজ টা আরো তীব্র হতে লাগলো!