২
আর শুরু হয় বুধুর দৌড় । সে যেন এক সার্কাসের খেলা । পায়রারা কখনও বুধুর পীঠে বসছে, কখনবা উড়ে যাচ্ছে । তেমন কেউ সাক্ষী থাকে না কারণ ভোরবেবলা ব্লক অফিস ফাঁকাই থাকে । তবে সাক্ষী থাকে না বলাটা ভুল – এইসব দৃশ্য বুকে ভর দিয়ে চলতে চলতে উপভোগ করে ঢোঁড়া । আরো একজন ইদানিং ছুটোছুটি করে বেড়ায় । তার নাম টোপর । বাবা-মা কেউ নেই তার । সোনা ব্যাঙ, ঢোঁড়া, বুধু সকলের সে আদরের নেংটি ইঁদুর – টোপর । ইন্দ্রই নাম দিয়েছে টোপর । ফরাসি ভাষায় ইঁদুরকে নাকি ‘টপর’ বলা হয় । ইন্দ্র শুধুমাত্র একটা ও-কার যোগ করেছে । মৌমাছিদের চাকে সাদা ন্যাকড়ায় কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিল সোনুর মা । মৌমাছিগুলির বেশ কয়েকজন মারা গেল আবার কয়েকজন আহত হল ।
জীবিত যারা ছিল দুপুরবেলা তারা এলো ফুলেদের কাছে । সাদা জবা, হলুদ গোলাপ, বকুল – সোনুর মায়ের ব্যবহারে সকলেই ব্যথিত । টোপরও এসেছে । এরকম ভাবে না হলেও রুটির মধ্যে বিষ মিশিয়ে তার মা-বাবাকে হত্যা করেছিল সোনুর মা ।
সোনুর মায়ের নাম পাপিয়া খুব দজ্জাল । সকলেই ভয় করে । তার ভাই আবার পুলিশ । সিধেল চোরকে একদিন ব্যাপক লাঠিপেটা করেছিল । অবশ্য যুধিষ্ঠির এখন চুরি ছেড়ে দিয়েছে কারণ গাঁ- ঘরে
আর মাটির বাড়ি নেই । প্রায় সকলেই সরকারি অনুদানে পাকা ঘর বানিয়ে ফেলেছে । এখন যুধিষ্ঠির মুদির দোকান খুলেছে । তার দোকানে ছোট ছেলেমেয়েদের ভীড় বেশী কারণ সেখানেই একমাত্র টিকটিকি লজেন্স পাওয়া যায় ।
এতোক্ষণেও বলা হয়নি ভুল হয়ে গেছিল এই যে না মানুষের সংসদ বলে একটা নতুন ‘ক্লাব’ সবে স্থাপিত হয়েছে । সেই ক্লাবের সভাপতি হচ্ছে ‘টিকটিকি’ । টিকটিকি সত্যিই ভবিষ্যৎ দেখতে পায় । দ্রষ্টা পুরুষ । যেবার ভূমিকম্প হয়েছিল সবার আগে কীটপতঙ্গ, ফুল, বেড়াল, ইঁদুর, আরশোলা, পায়রা, ঘোড়া, মৌমাছি, পাখি – সক্কলকে আগাম জানিয়েছিল টিকটিকি । তাই কোন মৃত্যু হয়নি সেবার । ফলেই টিকটিকি কে সভাপতি করতে সকলেই একবাক্যে রাজী হয়েছিল ।
অক্ষয় বটের কোটর তাদের ক্লাবঘর । ফুলেরা হাঁটতে পারে না, উড়তেও পারে না কিন্তু তাদের গন্ধ আলাদা আলাদা বিশিষ্টতা নিয়ে হাওয়ায় ভর করে হাজির হল ।
শেয়াল পণ্ডিত হচ্ছে ক্লাবের সচিব । দিনমানে তাকে দেখা যায় না । তবে দুপুরবেলায় গেরস্ত ঘরের বউয়েরা হয় তাস খেলে না হয় টি.ভি. দেখে । পুরুষেরা অনেকেই আপিসে গেছে । সোনু, বিশ্ব ওরা গেছে স্কুলে । যারা হাটুরে বা ব্যবসা করে তারা এখন ঘরে দোর এঁটে ভাতঘুম দিচ্ছে ।
লালু, ভুলু কুকুরদের সঙ্গে শেয়াল এলো নাকের ডগায় মানুষদের ফেলে দেওয়া চশমা ঝুলিয়ে ।
সে এসেই বয়োজ্যেষ্ঠ এবং প্রাজ্ঞদের প্রণাম জানাল । প্রণাম জানাল অক্ষয় বটবৃক্ষকেও ।