T3 শারদ সংখ্যা ২০২২ || তব অচিন্ত্য রূপ || বিশেষ সংখ্যায় অর্পিতা চ্যাটার্জী

ইতিহাসে গল্পের সন্ধানে

সেই মেয়ে –
তাপুত্তি
সুগন্ধি ইতিসাসের সঠিক উৎস আজও আমাদের অজানা। তবে প্রাচীন মিশরীয় ইতিহাসে আমরা পারফিউমের উল্লেখ পাই। ফারাও তুতানখামুনের সমাধিতে, প্রাচীন ধূপ রাখা প্রায় তিনহাজারটি পাত্র আবিষ্কৃত হয়েছিল।
বিশ্বের প্রথম পেশাদার রসায়নবিদ, তাপুত্তি নামে একজন নারীকেই এই সুগন্ধি শিল্পের রসায়নের অন‍্যতম স্রষ্টা বলে মনে করা হয়। খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতাব্দীর একটি কিউনিফর্ম ট্যাবলেটে ওঁর নামের উল্লেখ পাওয়া যায়। আরও একজন মহিলা রসায়নবিদের এ প্রসঙ্গে উল্লেখ পাওয়া যায় তবে তার নামের প্রথম অংশটি জানা যায় না দ্বিতীয় অংশটিতে নিনু নামটি পাওয়া যায়। রসায়নবিদ তাপুত্তি সুগন্ধি তৈরির শিল্পটিকে খুব গুরুত্ব সহকারে নিয়েছিলেন। মিশরীয়রা বিশ্বাস করতেন যে যদি তারা ভাল গন্ধ পায়, যদি তারা নিজেদেরকে মনোরম ঘ্রাণে ঘিরে রাখে তবে দেবতারা তাদের পক্ষে অনুকূল হবেন। এমনকি তারা এটাও মনে করতেন মৃত্যুর পরেও, শবকে সুগন্ধে ভরিয়ে রাখতে হবে। শুধু তারা রাখতে হবে ভেবেই থেমে থাকেননি একটি শবদেহেও একটি মনোরম গন্ধ বের করতে সক্ষম হয়েছিলেন। প্রাচীন মিশরীয়রা আত্মার স্থানান্তরে বিশ্বাস করতেন। তারা মনে করতেন, মানব আত্মা দেহ ত্যাগ করার পর, যেকোন একটি প্রাণীর প্রাণ ধারণ করে এবং তিন হাজার বছর ধরে সমস্ত ধরণের প্রাণীর প্রাণ ধারন করতে করতে শেষ পর্যন্ত, এটি আবার মানব রূপ ধারণ করে। এই বিশ্বাসটি ব্যাখ্যা করে মিশরীয়রা অত্যধিক যত্নের সঙ্গে তাদের মৃতদেহকে সুবাসিত করে রাখতে সক্ষম হয়েছিল। যাতে আত্মা, দীর্ঘ ভ্রমণের পরে, তার পূর্বের শরীরকে আবার খুঁজে পায় এবং সেটিতে যাতে ফিরে যেতে পারে সহজে এইজন‍্য তাদের ছিল এই প্রচেষ্টা।

। ব‍্যবিলনে রসায়নবিদ তাপুত্তি – বেলিত্তেকালীন সুগন্ধি নিয়ে নানারকম পরীক্ষা নিরীক্ষা করছেন। বারশো খ্রীষ্টাব্দের একটি ট‍্যাবলেটে এর উল্লেখ পাওয়া যায়।
শুধু সুগন্ধিকে প্রসাধন হিসাবে নয় ওষুধ হিসেবেও কিভাবে কার্যকরী করা যায় সে নিয়েও প্রচেষ্টা করেছেন। বেলাত্তিকালীন উপাধির অর্থ গৃহকর্তা। তাপুত্তি বেলাত্তিকালীন কিন্তু শুধু মাত্র তার বাড়ির গৃহকর্ত্রী ছিলেন তা নয় তার বিষয়েও তিনি ছিলেন সেসময় শ্রেষ্ঠ। শুধুমাত্র রাজার সুগন্ধি নির্মাতা রূপে তিনি সুপরিচিত ছিলেন না। তিনি একজন সুদক্ষ সুগন্ধি শিল্প নির্মাতা ছিলেন যিনি রাজার সুগন্ধি শিল্পের দেখাশোনা করতেন। সুগন্ধি নির্মানে যে গভীর রসায়ন আছে সেই রসায়নবিদ‍্যা সেসময় সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে সুপরিচিত করে তুলেছিল।তাপুত্তির ছোটবেলা সম্পর্কে আমরা তেমন জানতে পারিনা। তবে তার একটি সুগন্ধির রেসিপি যেটা তাকে আজও মানুষের কাছে পরিচিত করেছে সেটি হল তৎকালীন ব‍্যাবিলনের রাজার জন‍্য একটি সুগন্ধি মলম। অসাধারণ দক্ষতায় সুন্দর ও যুক্তি সম্মতভাবে প্রতিটি ধাপে ধাপে এই সুগন্ধি। মলমটির তৈরীর পদ্ধতিটি তিনি পাথরে লিপিবদ্ধ করেছিলেন। মলমের উপকরণে আমরা জল তেল ফুল ও ক‍্যালামাসের ব‍্যবহার পাই। এই সুগন্ধি মলম তৈরীর ক্ষেত্রে উপকরণ পরিশুদ্ধির জন‍্য তাপুত্তি নিজের তৈরী করা একটি যন্ত্র ব‍্যবহার করতেন। আজকের দিনেও বড় বড় রসায়নাগারে বিভিন্ন পরিশুদ্ধিকরণের যন্ত্র আমরা দেখি তার প্রাচীন চেহারাটি তাপুত্তি আমাদের সেই কবেই দিয়েছিলেন।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।