যদিও ওরা মুক্ত প্রকৃতির বাসিন্দা । কারাগার সেভাবে প্রাচীর নির্মিত নয় । আসলে তা হবে এক ধরণের নির্বাসন নিজস্ব প্রজাতির কাছ থেকে । দীর্ঘদিন এলাকা ছাড়া থাকতে হবে । যেহেতু না-মানুষদের গড় আয়ু সংক্ষিপ্ত, তাই তিন বছরের নির্বাসন খুনের পক্ষে উপযুক্ত শাস্তি হবে ।
নন্দ-স্যার ঠিক করেছেন বিচার সভার প্রধান হবেন টিকটিকি । পরক্ষণেই ওঁর সুভাষ বসুর কথা মনে পড়ে গেল । আজাদ-হিন্দ ফৌজ গঠন হওয়ার পর তোজো নাকি বলেছিলেন – নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু আগামী স্বাধীন ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী । সুভাষবাবু প্রতিবাদ করেছিলেন । বলেছিলেন – সেটা ঠিক করবেন স্বাধীন ভারতবর্ষের জনগণ ।
ইতর প্রাণিকুল যে পরাধীন তা কিন্তু নয় । মানুষের লোভ, প্রযুক্তির অপব্যবহার ওদের বিপন্ন করে তুলেছে । চড়াই পাখিদের আর দেখা যায় না । মোবাইল টাওয়ারের কারণে তাদের নাকি মৃত্যু ঘটেছে । নন্দ-মাস্টার অতোটা জানেন যে, এর মধ্যে অন্য কোন বৈঞ্জানিক সত্যি লুকিয়ে রয়েছে । তবে তিনি নিজে চলভাষ যন্ত্র ব্যবহার করেন না । টেলিভিশন দেখন না । খবর শুনতে হলে রেডিও রয়েছে । এর আগে ওঁর ফরাসি রেডিও ছিল । সেটা খারাপ হওয়াতে ফিলিপসের রেডিও নিয়েছেন । এফ. এম. তরঙ্গে কখনও কখনও পুরোনো দিনের গান শোনেন ।
ফলে কোন কিছু চাপিয়ে দেওয়া নয় । না-মানুষের সংসদ গঠনের কাজ বেশ শক্ত । সংসদ মানে লোকসভা, রাজ্যসভা দুটোকেই ধরতে হয় । ভারতবর্ষের না-প্রাণিদের পলাশিপাড়ায় হাজির করতে হবে । এটা কতোখানি সম্ভব খানিকটা চিন্তায় পড়লেন নন্দ-স্যার ।
বিধানসভা হলে আয়ত্বের মধ্যে থাকে । তবে পশ্চিমবঙ্গেও ভূ-বৈচিত্র কম নেই । দার্জিলিং আর দীঘার প্রাণিকুল এক হবে না । এছাড়াও দার্জিলিং এখন অশান্ত । মানুষের স্বার্থপর লড়াই প্রাণিকুলকে কতোখানি বিপন্ন করেছে এ নিয়ে কোন খবর নেই ।
টিকটিকি দেখল নন্দ-স্যার নিমগ্ন রয়েছেন । দেখে তার শ্লাঘা হল । সে কিছুটা কাজ শুরু করে দিয়েছে কোকিল দম্পতিকে দিয়ে । তারা পাখিদের পরিসংখ্যান সংগ্রহ করছে । যেমন দোয়েল ১০০, ফিঙে -৫০ এরকম আর কি । সংখ্যার বিচার করতে গিয়ে পাখিদের বাসায় বাসায় যেতে হচ্ছে । কোকিলের নিজের বাসা নেই, কাকেদের বাসাও সৃষ্টিছাড়া, কেউ কেউ মগডালে বসেও ঘর-সংসার করে । সব্বাইকে ধরা হচ্ছে । টিকটিকি নিজে তার প্রজাতির গণনা করেছে । শেয়াল, হুলো, কুকুরও তাই । শুধু পাখিদের জন্য কোকিল বিশেষ দায়িত্ব-প্রাপ্ত হয়েছে ।
কোকিল দম্পতি টিকটিকির কাছে এসে বসল ।
মহিলা কোকিল বলল,
সভাপতি মহাত্মন, একটা বিশেষ অসুবিধের মধ্যে পড়েছি ।