সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে অভিজিৎ চৌধুরী (পর্ব – ৩৭)

না মানুষের সংসদ

এই বলে শেয়াল চলে গেল ।
নন্দ-মাস্টার লাইট নিবিয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে গিয়েছে । তিনিও খুব সামান্য খান । দুটো রুটি আর বেগুন ভাজা খেয়েছেন । খুব ভোরে উঠে পড়বেন, অং বং ঢং মন্ত্র পড়বেন, স্নান সারবেন ।
সত্যিই তো পশুপাখি, কীটপতঙ্গদের রাজ্যে গণতন্ত্র আনতে গেলে সংবিধান তো চাই ।
টিকটিকি রাতে অ্যারিস্টলকে স্বপ্নে দেখল । মানুষটা একেবারে একগুঁয়ে । গ্রিক দেশের বাইরে কখনও যাননি । ভারতবর্ষের টিকিটিকির সঙ্গে কথাই বলেন না । গ্রিসের অধিবাসী ছাড়া সকলকেই ক্রিতদাস ভাবেন । স্বপ্নেও কোন সুরাহা হল না ।
তবে প্রতিদিনের চেয়েও আগে রাত তিনটের মধ্যে ঘুম ভাঙল টিকটিকির । বাইরেটা ফর্সা হতে হতে ভোর চারটে হয়ে গেল । রাতে জ্বর জ্বর ছিল বলে টিকটিকি ভাবল স্নানটা ভোর পাঁচটার সময় করবে ।
প্রচুর প্রচুর পাখি ডাকছিল । নন্দ-মাস্টার তখনও কুলকুচি করছে । টিকটিকির যে ঘুম ভেঙেছে মাস্টারমশাই টের পেয়ে গেছেন । চশমার কাঁচ মুছে কয়েকবার দেখে নিয়েছেন ওকে ।
টিকটিকি ভোরে একটু চোখ বুজে ধ্যান করল । ধ্যান করলে মন-সংযোগ বাড়ে । প্রথমেই মনে পড়ল পেঁচার কথা । ভারতবর্ষে লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা কিন্তু গ্রিক পুরাণে জ্ঞানের দেবী অ্যাথিনির সঙ্গী । ইংরেজিতে একটা কথা আছে – ‘ওয়াইজ আউল’ । নন্দ – মাস্টার প্রায়ই বলেন । স্বগতোক্তির মতন বলে থাকেন নন্দ–মাস্টার ।
এছাড়াও প্রাজ্ঞ পাখিদের মধ্যে গোরুড় এবং ঈগল পাখি পড়ে । মিশরে পক্ষিদেবতা হচ্ছে বাজমাথা হোরাস । তবে গোরুর, ঈগল বা বাজপাখি এদের দেখলে সাধারণ কীটপতঙ্গ, এমনকি প্রাণিকুলও ভয় পেয়ে যাবে । তাই টিকটিকি মনস্থির করল ‘সংবিধান’ রচনার জন্য পেঁচার সঙ্গেই সবার আগে কথা বলতে হবে ।
নন্দ-মাস্টার সকালবেলা হাঁটতে বের হয় । টিকটিকিও আজ সঙ্গ নিলো । নন্দ-মাস্টার দাতনের জন্য একটা আশশেওড়া গাছের ডাল ভাঙতেই মনে হল কারা যেন একগোছা চাবি নাড়িয়ে টিকটিকিকে ডাকছে । এই স্থানটা বেশ নির্জন । টিকিটিকির গা-টা কেমন জানি ছমছম করে উঠল ।
এইসময় একটা সবজেটে হলুদ রঙের ছোট্ট পাখি বলল –
কি ভাবছ তুমি – সভাপতি টিকটিকি !
এবার টিকটিকি মুখ তুলে তাকাল । সিতনয়ন বংশের পাখি এরা । চশমাপাখি ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।