সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে অভিজিৎ চৌধুরী (পর্ব – ৪১)

না মানুষের সংসদ

বেশ ছিলেন ইলেকট্রন, প্রোটন, নিউট্রন নিয়ে । কখনও কখনও পারমুটেশন, কম্বিনেশনের অংক । তাঁর সহোদর বয়সে সামান্য বড় ছিল পুলিসের গুলিতে বেঘোরে মরে । চুরি নয়, ডাকাতি নয় – সব মানুষ সমান হবে এরকম একটা ইউটোপিয়ার জন্য লড়াই করতে গিয়ে ।
নন্দ-মাস্টার বাঁচতে চান । ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ওঁর প্রাণ । টিকটিকি, আরশোলা, প্রজাপতি, পাখিরা ওঁর বন্ধু । তিনি ভোরে ওঠেন বলে ওদের ভাষা বোঝেন কিন্তু অনেকেই হিংস্র । তাদের তিনি ভয় পান ।
এইসময় ঢোঁড়া সাপ নন্দ-মাস্টারকে দেখতে দেখতে চলে গেল । হাসলেন নন্দ-মাস্টার । কোলা ব্যাঙও রয়েছে ওর সঙ্গে । সচারাচর সাপ ব্যাঙ ধরে খায় কিন্তু এখানে ঢোঁড়া আর কোলার মধ্যে প্রগাঢ় বন্ধুত্ব । খাদ্য-খাদকের সম্পর্ক ছাড়িয়ে এই বন্ধুত্ব নন্দ-মাস্টারকে আজকে নতুন করে মুগ্ধ করল ।
তবে ইতর প্রাণিদের মৌলিক অধিকার একেবারেই কি মানুষের মতো হবে! মানুষ যে প্রতিনিয়ত ওদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করছে এই নিয়ে নন্দ-মাস্টারের কোন সংশয় নেই ।
ধরা যাক শিক্ষার অধিকার । ওদের তো কোন স্কুল, কলেজ নেই । নেই কোন বিশ্ববিদ্যালয় । ভাবার সঙ্গে সঙ্গে হাসলেনও নন্দ-মাস্টার । যারা মানুষের মধ্যে কেরানির চাকরি করে বা আধিকারিকও হয় – স্কুলের শিক্ষায় তাদের কি হয়! ক্যালকুলাস তো তাদের আর লাগে না । শিক্ষা কি সত্যিই চেতনা আনে! ভেবে ভেবে তল পান না নন্দ-মাস্টার । মানুষ দেরীতে ঘুম থেকে ওঠে । ফলে ভোর দেখে না । ইতর প্রাণিরা কেউ ভোরে ঘুমিয়ে থাকে না । প্রকৃতি তখন শান্ত, সমাহিত । সেই শিক্ষা মানুষের বিশ্ব-বিদ্যালয়ে হয় না । মৌলিক অধিকার থেকে শিক্ষার অধিকারটুকু বাদ দিলেন নন্দ-মাস্টার ।
এরপর তাঁর ভাবনা হল জীব জগতের পিরামিড নিয়ে । এতেও নিয়ন্ত্রণ আনা কঠিন । খাদ্য-খাদক সম্পর্কের ওপর জীব-জগৎ দাঁড়িয়ে রয়েছে । তবে রসনার ব্যাভিচার নিয়ে একটা অনুচ্ছেদ লিখতে হবে – ভাবলেন নন্দ-মাস্টার । এর নিয়ন্ত্রণ আনা দরকার ।
টিকিটিকি, শেয়াল, ব্যাঙ – এদেরও তো সুগার, কোলেস্টেরল, হাই-প্রেসার থাকতে পারে । চিকিৎসার অধিকার একান্ত আবশ্যক । মনে মনে টুকে নিলেন নন্দ-মাস্টার । মানুষ যেদিক থেকে ইতর প্রাণিদের থেকে এগিয়ে রয়েছে তা হল আইনে । বিচার-বিভাগীয় ব্যবস্থা । জঙ্গলে এমনিতে কোন আইন নেই । আর পলাশিপাড়া জঙ্গল না হলেও জনবসতির সঙ্গে প্রচুর গাছপালা রয়েছে । বাঘ, হাতী দেখা না গেলেও শেয়াল তো রয়েছে । কুকুর-শেয়ালের এলাকা দখল তো নিত্যকার ব্যাপার ।
মানেই আইনের শাসন চাই । খুনের শাস্তি মৃত্যদণ্ড । না – নন্দ মাস্টার সংশোধন করে নিলেন । এতে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রতিহিংসা চরিতার্থ হতে পারে । খুনের জন্য যাবজ্জীবন কারাবাসই যথেষ্ট
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।