কবিতায় অনির্বাণ চ্যাটার্জি

তারপর একদিন আমরা আলাদা হয়ে যাব
তুমি আমি অনেক দূরে চলে যাব…
তুমি তোমার পৃথিবী সাজাবে
আমি আমার সংসারে ব্যস্ত থাকব
তুমি তোমার ঘড়ির কাঁটার শব্দ গুনবে
আমি দুই মলাটের মাঝে তোমায় আঁকব

তোমার দুনিয়ায় নতুন আলো ঝলমল করবে
আমি মোমবাতি জ্বালিয়ে আকাশে তারা গুনব

তোমার বয়স বাড়বে, পৃথিবীর রং বদল হবে
আমি তখনও বইয়ের ওপর প্রচ্ছদ আঁকব

তারপর একদিন আমি ক্লান্ত হব, ঘেমে যাব
আমার দুই চোখের দৃষ্টি কমে আসবে
চামড়ার টান শিথিল হবে, চুল বিবর্ণ হবে
সেদিন মলাটের ভাঁজ ভুলে যাব,
আমার কাঁপা হাত তখনও তোমায় আঁকতে পারে

তুমি তখন নাগরিক সচেতন মঞ্চে ভাষণ দেবে
আমি জনতার মাঝে ঝান্ডা ধরে তোমায় শুনব
তোমার নেতৃত্বের মিছিলের ভিড়ে আমিও দ্রুত হাঁটব
আমিও চিৎকার করব ক্লান্ত স্বরে- ‘দাবি মানতে হবে’

আবার মিছিলের শেষে তুমি হঠাৎ হারিয়ে যাবে
আমি আমার সংসারে দিনের শেষে ফিরে আসব
তোমার কবিতার সেই পুরনো মলাট বই বের করব
আধবোজা চোখে তোমায় খুঁজব
শেষে বইটি টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলব।

বাইরে মিছিলের আওয়াজ তখনও সমান তেজে
আমার আলেক্সা মাতবে শুভা মুদগলের গানে
আমার শরীর ভিজবে ঘামে আর চোখের জলে
আমি আবার সেই ছিঁড়ে ফেলা বই সযত্নে গুছিয়ে রাখব
আমি আবার তোমার মিছিলের ভিড়ে ঝান্ডা হাতে শামিল হব
আমি আবার সেই ছিঁড়ে ফেলা বইয়ে ভালোবেসে মলাট দেব।।

প্রিন্সেপ ঘাটে আবার কখনো আমাদের দেখা হবে
কিন্তু কোন কথা থাকবে না, শুধু বুঝে নেওয়া থাকবে
তুমি তোমার সংসার নিয়ে হেসে ফুচকা খাবে
আমিও জোর করে সেজে গুজে হাসতে থাকব
আমার কোলে তখন বছর তিনেকের ভারী থাকবে
আমি তার ভরে সামনের দিকে সামান্য ঝুঁকে যাব
তুমি আমি দুজনেই আবার হারিয়ে যাব
তুমি পরদিন তোমার দপ্তরের কাজে চলে যাবে
আমি পরদিন আবার সেই পুরোনো বইয়ে মলাট দিতে বসব।।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।