গল্পেরা জোনাকি তে অসীম বিশ্বাস, মুম্বাই

হোলি ও প্রেম

“রং বারসে ভিগে চুনার ওয়ালি…রং বারসে…!” মাইকে গান ভেসে আসছে,  আজ ডিভিসি,  ডিটিপিএস ওল্ড কলোনির রিক্রিয়েশন ক্লাবের উদ্যোগে ক্লাবের মাঠে হোলি খেলার আয়োজন করেছে ক্লাব কতৃপক্ষ।
গতকাল রাতে মহা ধুমধামে নেড়া পোড়ানো উপলক্ষে পূজারি ও মহিলারা মিলে পুজোর আয়োজন করেছিলেন।
হটাৎ গান থেমে মাইকে ভেসে এলো – “একটি ঘোষণা আজ হোলি খেলা উপলক্ষে সকলকেই অনুরোধ করা হচ্ছে কেউ যেনো রঙের পরিবর্তে কোনোরকম ভাবে কেমিক্যাল জাতীয় জিনিস ব্যবহার করবেন না এবং হোলি খেলতে খেলতে কোনো রকম অসদ্ব্যবহার করবেন না। অনুষ্ঠানে পুলিশের ব্যবস্থা আছে সুতরাং কারও কোনো কমপ্লেনের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারে!
হোলি সকাল দশটা থেকে দুপুর বারোটা অবধি খেলা হবে এবং বেলা সাড়ে বারোটা থেকে দেড়টা অবধি হোলি উপলক্ষে একক অথবা গ্রুপ ড্যান্সের থাকবে।
সবশেষে মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন রয়েছে এবং আগামীকাল হোলি উপলক্ষে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে, ঐ অনুষ্ঠানে নাচের প্রতিযোগিতা থাকছে। একক বা দলগত ভাবে নাচের প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করতে পারেন কলোনির বাসিন্দারা।
যারা যারা এখনো নাচে নাম দেননি তারা মলয়’দাকে কিংবা কাকলি’দিকে নাম দিয়ে যান…”।
সুতপা বললো- এই জানিস আমার খুব নাম দিতে ইচ্ছে করছে কিন্তু বাবা পারমিশন দেবে না বোধহয়!
মহুয়া – তোর আবার প্রবলেম কি, তোর বাপিদা’কে বল না, বাপিদা বললে কাকু রাজি হয়ে যাবে।
সুতপা- তুই তো আরেক জন, বাপি’দা যদি এ কথা তোলে, তাহলে আমাকে আজ হোলিই খেলতে দেবেনা!
মহুয়া – এই জানিস অঙ্কুশ’দা আজ হেভি মাঞ্জা দিয়েছে, আমি সকালে যখন আসছিলাম, অঙ্কুশ’দাকে সাদা পাঞ্জাবি’ ও জিন্সের প্যান্টে রোদ চশমা পরে তিন মাথার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম, হেভি লাগছিল!
আজ তোদের সাথে আলাপ করিয়ে দেবো যদি ওদের কলোনিতে সন্ধ্যায় ফাংশন দেখতে যাই সবাই!
রিতা – কোন লাভ নেই ।
মহুয়া- কেন?
রিতা- ওর অমৃতা বলে একটা মেয়ের সাথে চলছে, তোর বলার আগে আমি খোঁজ নিয়েছি।
মহুয়া – কে বললো?
রিতা- আমাকে ওর বোন বলেছে।
মহুয়া – দূর বাজে কথা ওর বোনের সাথে আমার রোজ কথা হয়।
রিতা – কি ব্যপার রে মৌ, তুই খুব ভাব জমাচ্ছিস অঙ্কুশ’দার বোনের সাথে?
মহুয়া – এই অমৃতা টা কেরে?
রিতা – আরে থার্ড ইউনিট কলোনির মেয়ে, RE Model School  থেকে  pass out।  তাই আমরা অতোটা চিনি না। চোখে মুখে কথা, দেখবি অঙ্কুশদাকে চড়কির মত ঘোরাবে। বিকেলে যাবি ওদের কলোনিতে হোলির ফাংশনে? তোর সতিন আসবে,  হা হা হা!
মহুয়া – রিতা খুব বাড়াবাড়ি করবি না।
রিতা – এই সুতপা, বাপিদা’কে বল একটা গাড়ি জোগাড় করে দিতে, দেখবো মহুয়ার সতিন ভালো না মহুয়া ভালো!
সবাই মিলে হোলি খেলে লাঞ্চ করে যে যার বাড়ি চলে গেলো। সন্ধ্যায় নিউ কলোনি যাবে বলে।
সন্ধ্যার একটু পরে সবাই পৌঁচ্ছে গেলো নিউ কলোনিতে। সবাই ক্রপ টপ ও জিন্স পরেছে, মহুয়া যেন একটু বেশি মাঞ্জা দিয়েছে । একটা লাল ক্রপ টপ ও তার সাথে ব্লু ডেনিমের রিলাক্স ফিট হাই রাইজ জিন্স পরেছে! ভীষণ সুন্দর লাগছে ওকে।
মহুয়া যেন আজ মনে মনে তৈরিই হয়ে এসেছে, যে করেই হোক অমৃতা নামের মেয়েটার সাথে টক্কর দিতে হবে।
অডিটোরিয়ামে ঢুকতেই অনন্যা অর্থাৎ অঙ্কুশের বোনের সাথে দেখা হ’ল,  ও ওদের সকল কে এক’টা সাইড দিয়ে স্টেজের সামনে নিয়ে গেল, মহুয়া দেখলো অঙ্কুশ’দা বিভিন্ন রকম এলইডি ফোকাস লাইট জ্বালানোর ব্যবস্থাপনায় বেশ ব্যস্ত ।
অনন্যা বললো -দাদা কে ডাকছি, তোদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য।
ও ‘দাদা’ বলে ডাকতেই অঙ্কুশ তাকালো।
অনন্যা বললো -একটু এ দিকে আসবি,আমার বান্ধবীরা এসেছে ।
অঙ্কুশ বললো – ওদের ভলান্টিয়ার রুমে নিয়ে বসা, আমি আসছি।
মহুয়ার সাথে অঙ্কুশের চোখাচোখি হ’ল, মহুয়ার সারা শরীরে যেন বিদ্যুৎ তরঙ্গ বয়ে গেলো। মনে মনে বললো -অঙ্কুশদা কে হোয়াইট ভি- নেক টি সার্ট ও ব্ল্যাক জিন্সে কি ভীষণ ভালো লাগছে।
সবাই ভলান্টিয়ার রুমের দিকে পা বাড়ালো। ভলান্টিয়ার রুমে এসেই অনন্যা চিৎকার করে- ‘অ.. মৃ ..তা’ বলে ডেকে জড়িয়ে ধরলো।
অনন্যা সকলের সাথে অমৃতার পরিচয় করিয়ে দিল। অমৃতা বললো ও পনেরো মিনিট হ’ল এসেছে, অঙ্কুশ ওকে মাসিও মেসোমশায়ের ( অঙ্কুশ ও অনন্যারা মা ও বাবা) সাথে বসিয়ে রেখে কোথায় যেন গেলো।
মহুয়া আর অমৃতার চোখে চোখে দৃষ্টি বিনিময় হ’ল।
অনন্যা নিজের মা বাবার সাথে’ও সকলের পরিচয় করিয়ে দি’ল।
কিছুক্ষণ পরেই অঙ্কুশ এলো, সবাই উঠে দাঁড়াতেই অঙ্কুশ বসতে বললো এবং নিজেও বসলো। অমৃতা উঠে এসে অঙ্কুশের পাশে বসলো। তাই দেখে রিতা মহুয়ার হাতে চিমটি কাটলো। সকলের সাথে আলাপ পরিচয় শেষ হতে হতেই গরম গরম কাটলেট আর ঘুগনি প্লেটে প্লেটে চলে এলো।
মাসিমা আর মেসো মশাই উঠলেন,
মাসিমা বললেন -তোমরা গল্প করো আমরা অডিটোরিয়ামে যাই।
আধা ঘন্টা বেশ জমিয়ে আড্ডা চললো, অঙ্কুশের দু-একজন বন্ধু এসেও যোগ দিল তাতে।
অঙ্কুশ বললো মহুয়ার ড্রেসটা খুব সুন্দর।
অমৃতা তখন অনন্যা সাথে গল্প করতে করতে হঠাৎ থেমে গেল কথাটা শুনে এবং বলতে গেলে সকলকে শুনিয়েই অঙ্কুশ কে বললো – রাতে যেন আমাকে তুমি বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসো।
অঙ্কুশ ‘হ্যাঁ’ বললো।
সেদিন ফাংশনে ওরা শেষ অবধি ছিল। মহুয়া এক ফাঁকে অঙ্কুশ’কে একা পেয়ে আস্তে করে বলেছিলো – আগামীকাল সন্ধ্যায় আসুন না আমাদের ফাংশনে ।
গাড়িতে ফেরার সময় সকলে মহুয়ার ফিসফিস করে কথা বলার রহস্যটা জানতে চাইলো।
বাড়িতে ফিরে মহুয়া খেতে বসেও অঙ্কুশের কথা ভাবতে লাগলো। বিছানায় শুয়েও ঘুম এলো না ,শুধু এ’পাশ ও’পাশ করতে লাগলো। মহুয়া বারবার ভাবতে লাগলো অঙ্কুশ’দা ফেরার সময় হ্যান্ডসেক করতে গিয়ে ওর হাত টা একটু বেশি সময়ের জন্য ধরে ছিল – এটা ইচ্ছাকৃত না অনিচ্ছাকৃত?!
হঠাৎ মহুয়ার মনে অমৃতার মুখটা ভেসে উঠলো, মহুয়া নিজের মনে হেসে উঠলো, মনে মনেই বললো কি সব ভাবছে!  অঙ্কুশ’দা তো অমৃতাকেই ভালবাসে। অমৃতা নিজের অধিকার ব’লেই তখন সকলকে শুনিয়ে বললো অত রাতে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা ! মহুয়া নিজের মনে কল্পনা করলো বাড়ি ফেরার পথে অঙ্কুশদা বাইক চালিয়ে যাচ্ছে আর অমৃতা দুই হাতে অঙ্কুশ’দাকে জড়িয়ে ধরে গালটা অঙ্কুশ’দার পিঠে রেখে পেছনে বসে আছে!  মহুয়ার চোখের কোনায় বিন্দু বিন্দু জল চিকচিক করে উঠলো! ও নিজের অজান্তেই ঘুমিয়ে পরলো।
পরের দিন সন্ধ্যায় ওল্ড কলোনির ফাংশন শুরু হয়েছে। সুতপাও প্রতিযোগিতায় নাম দিয়েছে। সব বান্ধবীরাই তাই সুতপাকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য হাজির হয়েছে।
তখন বাচ্চাদের নাচের প্রতিযোগিতা চলছিলো। ঠিক ঐ সময় অডিটোরিয়ামে অঙ্কুশ কে ঢুকতে দেখে সুতপা ও রিতা অবাক হয়ে গেলো। মহুয়া নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিল না!  মহুয়া মনে মনে খুব একটা সুখানুভূতি অনুভব করলো-যে অঙ্কুশ’দা তার কথা রেখেছেন!  কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সংযত করে নিলো অমৃতার কথা মনে পড়ে যাওয়ায়। অঙ্কুশদার সাথে অমৃতা এবং আরো একজন অপরিচিত ব্যক্তিও এসেছেন।
ওরা তিন জনেই এগিয়ে গিয়ে অভ্যর্থনা জানালো। অঙ্কুশ অপরিচিত ব্যক্তিটিকে ডেকে সকলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য বললো – ও অভিজিৎ দাঁ, কলেজ হোস্টেলের রুমমেট ছিল, এখন চাকরি সুত্রে মুম্বইয়ের বাসিন্দা।
অভিজিৎ হাসি মুখে সকলকে হাত জোড় করে প্রণাম করলো।
সকলে মিলে বাইরে এসে একটা খাওয়ার দোকানের সামনে দাঁড়ালো। একটা সুন্দর আড্ডা জমে উঠলো,  অভিজিৎ সকলকে চিংড়ি আর মোচার চপ খাওয়ালো । অমৃতার চিংড়ির চপ টা খুব ভালো লেগেছে জেনে অঙ্কুশ নিজের প্লেট থেকে ওর  চিংড়ির চপটা অমৃতার প্লেটে দিয়ে দিলো। ওদিকে অভিজিৎ মোচার চপ’টার  আধখানা ফট করে মহুয়ার প্লেটে তুলে দিলো।
সেই সময় হঠাৎ মাইকে ঘোষণা করলো – বড়দের নাচের প্রতিযোগিতা আর কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হবে এবং প্রথম প্রতিযোগিনী সুতপা রায় এন্ড পার্টনার।
সকলে ফিরে এলো অডিটোরিয়ামে, সুতপা নিজেকে নাচের জন্য তৈরি করে নিলো ।
অবশেষে সুতপার নাচের ঘোষণা হ’ল;
মা দুর্গা কে স্মরণ করে একটা বিদেশি মিউজিকের তালে তালে সালসা নাচ শুরু করলো সুতপা! সুতপা ওর ভাইকে সালসা নাচের পার্টনার করেছে।
অঙ্কুশ, অভিজিৎ, মহুয়া, অমৃতা ও রিতা খুব উৎসাহ দিতে লাগলো ওদের দুজনকে। সুতপা এত অদ্ভুত সুন্দর নাচছে দেখে অমৃতা অবাক হয়ে এবং আনন্দে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মহুয়াকে জাপটে ধরলো।
মহুয়াও দু হাতে কাছে টানলো অমৃতাকে।
নাচ শেষ হয়ে গেল, সুতপা ঘেমে নেয়ে ওদের কাছে এসে হাঁপাতে লাগলো। অঙ্কুশ ছুটে গিয়ে দোকান থেকে  জল নিয়ে এলো। সুতপা এক নিমেষেই জলের বোতলটা প্রায় খালি করে দিলো।
সবাই খুব প্রশংসা করলো সুতপার নাচের।
আবার সকলে ভিড় ঠেলে বাইরে এলো। সবাই এক কাপ করে চা নিয়ে আড্ডায় মেতে উঠলো। অঙ্কুশের সিগারেটের ধোঁয়াটা মহুয়ার নাকে আসতেই কেমন যেন একটা অনুভূতি হলো! অমৃতা অঙ্কুশের পাশের জায়গাটা সেই আসা থেকেই পার্মানেন্টলি দখল করে রেখেছে।
কি ভাবে যেন সন্ধ্যার আড্ডা টা দারুণ ভাবে জমে উঠলো!
হঠাৎ অঙ্কুশ বলে উঠলো – সকলের জন্য একটা সারপ্রাইজ নিউজ আছে!
কথাটা শুনে সকলেই অবাক হয়ে অঙ্কুশের দিকে তাকালো।
অঙ্কুশ নিজের পাশে অমৃতাকে টেনে আনলো,
মহুয়ার বুকের মধ্যে তখন ধরাস্ ধরাস্ করে দামামা বাজতে শুরু করলো !  মনে মনে ভাবলো কি এমন ঘোষণা করতে চাইছে অঙ্কুশ’দা ?! এমন কিছু কি, যা শুনেই মহুয়ার আজকের সন্ধ্যা’টা কাঁচের মত ভেঙ্গে খান খান হয়ে যাবে?! অঙ্কুশ’দা দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টে বছর দুই হলো চাকরী করছে। তাহলে কি….!
অঙ্কুশ অমৃতাকে প্রায় তাঁর বুকের কাছে টেনে নিয়ে বললো – আমি তোমাদের সকলকে জানাতে চাই,  আগামী মাঘ মাসে অমৃতার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চলেছে আমার প্রিয় বন্ধু অভিজিৎ দাঁ!
মহুয়ার মনে যেন এই কথা গুলো সেতারের ঝঙ্কারে বেজে উঠলো।
রিতা মহুয়ার কোমরে চিমটি কেটে দিলো,
সুতপা মহুয়ার পায়ে ওর পা দিয়ে মাড়িয়ে দিলো।
অমৃতা এগিয়ে এসে ওদের’কে একে একে জড়িয়ে ধরলো।মহুয়া যেন একটু বেশি জোরেই বুকে চেপে ধরলো অমৃতাকে, মহুয়া আরো আশ্চর্য হল যখন অমৃতা মহুয়ার কানের কাছে মুখ এনে ফিস ফিস করে বললো –  Congratulations!
মহুয়ার মুখটা এক মুহূর্তের জন্য রাঙা হয়ে গেল, তবুও  নিজেকে সামলে নিয়ে অমৃতাকে বললো – congratulations you too!
অঙ্কুশ অভিজিৎ কে অমৃতার পাশে দাঁড় করিয়ে দিল এবং বললো ওদের প্রেম কলেজ জীবন থেকেই ।
অভিজিৎ এক হাতে অমৃতাকে আর এক হাতে অঙ্কুশকে চেপে ধরে বললো- আমার প্রিয় বন্ধু অঙ্কুশের জন্যই আজ আমরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চলেছি। প্রেমের মান অভিমানের খেলায় ও আমাদের দু’জনকে সব সময় সাহায্য করেছে ।
অমৃতা বললো অঙ্কুশ’দার মত মানুষ প্রতিটি ঘরে ঘরে যেন জন্ম নেয়।
অঙ্কুশ বললো- চলো এবার বাড়ি ফেরার পালা।
সকলেই ওদের দুজনকে আসন্ন বিবাহের শুভেচ্ছা জানালো।
ফিরে যাওয়ার আগে অভিজিৎ সকলকে পরের দিন দুপুরে নিউ কলোনির পাঞ্জাবি ধাবায় লাঞ্চের জন্য নিমন্ত্রণ করে গেল।
অঙ্কুশ যেতে গিয়ে মহুয়ার দিকে তাকাতেই মহুয়া লজ্জায় চোখ দুটো নামিয়ে নিলো। তবে মহুয়া এটুকু বুঝলো ঐ চাহনির মধ্যে একটা আবেগ এবং আহ্বানের চিহ্ন ছিল।

পরের দিন দুপুরে তিন জনেই তৈরি হয়ে নিউ কলোনির পাঞ্জাবি ধাবায় পোঁচ্ছে গেল।
ওখানে গিয়ে ওরা তিনজন দেখলো পুরো ধাবাটাই অভিজিৎ বুক করেছে এবং অনেকেই নিমন্ত্রিত হয়ে এসেছেন।
সামনে ডিজে’র মিউজিকের তালে তালে অনেক নারী পুরুষ তাল মিলিয়ে নেচে চলেছে!
ওরা পৌঁছাতেই অভিজিৎ ওদের অভ্যর্থনা করে নিয়ে গেলো একদম সামনের দিকে।
অঙ্কুশ, অমৃতা ও অনেকে ভিড়ের মধ্যে ডিজের তালে তালে নেচে চলেছে। মহুয়া, সুতপা ও রিতা চেয়ারে বসে ওদের নাচ দেখতে লাগলো!
হঠাৎ অমৃতা এসে মহুয়াকে হিড় হিড় করে টেনে নিয়ে গেলো নাচের মধ্যে এবং অভিজিৎ মহুয়ার ডান হাত টা ধরে অঙ্কুশের হাতে গুঁজে দিল।
অমৃতা মাইক্রোফোনটা হাতে নিয়ে ঘোষণা করলো- আজকের অনুষ্ঠানের একটি বিশেষ জুটি’র সাথে পরিচয় করিয়ে দিই আপনাদের – ইনি আমাদের প্রিয় অঙ্কুশ’ দা, আপনারা সবাই চেনেন, আর ইনি মিস্ মহুয়া বসুরায়, অঙ্কুশ’দার বিশেষ বান্ধবী!
অমৃতা তারপর একে একে সুতপা ও রিতার সাথেও সকলের পরিচয় করিয়ে দিলো।
অভিজিৎ চিৎকার করে বলে উঠলো – থ্রি চিয়ার্স ফর অঙ্কুশ ও মহুয়া, হিপ হিপ!
সকলেই এক সাথে বলে উঠলো – হুররে!
বারবার তিনবার আকাশে বাতাসে অঙ্কুশ ও মহুয়ার নামটা ‘প্রতিধ্বনি হ’ল!
মহুয়ার চোখ দুটো চিকচিক করে উঠলো এক অপরূপ অনুভূতিতে! অঙ্কুশ মহুয়ার হাতটায় জোরে চাপ দি’ল, মহুয়া জানে এটাকে ভরসা দেওয়া বোঝায়। অঙ্কুশ আস্তে করে বললো – চোখের জল মোছো। মহুয়া সযত্নে রুমালের কোনা দিয়ে চোখ দুটো মুছে নিলো!
পরক্ষণেই অঙ্কুশ মাইক্রোফোনটা নিয়ে অভিজিৎ ও অমৃতাকে কাছে ডাকলো, অভিজিৎ ও অমৃতা কাছে আসতেই অঙ্কুশ মাইক্রোফোনে বললো – প্রিয় বন্ধুগণ আমি ও মহুয়া বিশেষ জুটি হলেও আজকের অনুষ্ঠানের নায়ক ও নায়িকা হলেন – অভিজিৎ ও অমৃতা!
আমার প্রিয় বন্ধু যেমন অভিজিৎ ঠিক তেমনই প্রিয় বান্ধবী হলো অমৃতা! আর সেই কারণেই আমি বিশেষ দ্বায়িত্ব নিয়ে এবং ওদের অনুমতি নিয়ে সকলের সামনে ঘোষণা করছি যে – ওরা আগামীতে বিবাহ বন্ধনে বাঁধা পড়তে চলেছে এবং এতে দুই পক্ষের প্যারেন্টসের অনুমতি রয়েছে!
ঘোষণার সাথে সাথে সকলে পাশে রাখা ফুলের বাস্কেট থেকে মুঠো মুঠো ফুল নিয়ে অভিজিৎ ও অমৃতার ওপর বর্ষণ করতে লাগলো!
অঙ্কুশ ঐ ভিড়ের মাঝ থেকে মহুয়াকে হাত ধরে টেনে ধাবার বাইরে নিয়ে এলো!
মহুয়া বললো – কি হলো অঙ্কুশ দা?
অঙ্কুশ বাইকটা স্টার্ট দিতে দিতে বললো – অঙ্কুশ’ দা নয় বলো অঙ্কুশ!
বাইকটা স্টার্ট হতেই অঙ্কুশ বললো – বসো!
মহুয়া ইতস্ততভাবে বললো- কোথায় অঙ্কুশ?
অঙ্কুশ বললো – বসোই না!
মহুয়া আর এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে বাইকে বসলো!
অঙ্কুশ এক নিমেষে হাইওয়েতে পৌঁছে গেলো!
মহুয়া বললো – এ মা! সুতপা ও রিতা আমাদের খুঁজে না পেলে কি ভাববে?!
অঙ্কুশ বললো – আজ তোমাকে কারও কথা ভাবতে হবে না! আজ শুধু তুমি আর আমি!
মহুয়া অঙ্কুশের কথায় আরও ঘন হয়ে বসে নিজের হাত দুটো দিয়ে অঙ্কুশকে জাপটে ধরলো!
আস্তে আস্তে রাস্তার দু’ধারে বাড়ি ঘর কম হতে হতে শেষ হয়ে গেলো!
অঙ্কুশ এক্সেলেটরে চাপ দিতেই বাইকের স্পিড আরও বেড়ে গেলো!
মহুয়া আস্তে করে নিজের মাথাটা অঙ্কুশের পিঠে রেখে পরম সুখে চোখ বুজলো!

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।