সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে অর্পিতা বোস (পর্ব – ২)

বৃত্ত

৫|
গাড়িতে ফিরছে রূপসা মন খুব চঞ্চল। বাবার জন্য। উহু! সাথে আরও কিছু আজ রূপসার মনকে অস্থির করে তুলেছে। ওসি মানে অর্জুন মন্ডলকে চিনতে পেরে। প্রথমে একঝলক দেখে একটু খটকা হয়েছিল। কিন্তু সাথে বাবার চিন্তায় অস্থির থাকায় পুরো মেলাতে পারেনা।
কিন্তু তারপরের ঘটনারা আজ অনেক স্মৃতি মনে করায়। যদিও বর্ধমানের কথা কখনও মনে করতে চায়না রূপসা। তবুও এমন করেই হঠাৎ হঠাৎ সামনে দাঁড়িয়ে যায় অতীতটা।
একদিন এই অতীতটাকেই ভুলতে বলেছিলেন বাবা। অথচ আজ বাবা নিজেই সব ভুলে যাচ্ছে। চোখ ভিজে আসে রূপসার। স্কুল টিচার বাবা একটানা বলতেন ইতিহাসের কথা , কখনও আবৃত্তি করতেন , কখনও দেশবিদেশের গল্প বলতেন। ছোট্ট রূপসা অবাক হয়ে ভাবত এতকিছু কীকরে মনে রাখে বাবা! আর আজ সেই বাবা সবভুলে গেছে! হয়তো বাড়ি ফেরার পথটাও ভুলে গেছে। ফুপিয়ে কেঁদে ওঠে রূপসা। কাঁধে ভরসার হাতের স্পর্শ পায়।

৬|
অনিমেষ রায়ের ছবিটা হাতে নিয়ে বসে আছে অর্জুন মণ্ডল। থানায় ঢুকতেই রূপসাকে দেখে থমকে গিয়েছিল। চিনতে পেরেছিল ঠিকই কিন্তু নিশ্চিত হওয়ার জন্যই অনিমেষ স‍্যারের ছবিটা দেখতে চাইল।
কিছু স্মৃতি ভুলে যায় মানুষ। স্মৃতির ওপর স্মৃতির প্রলেপ পড়ে। আবার কখনও হঠাৎ করে পুরোনো স্মৃতি টাটকা হয়। সত্যিই কী ভুলে গেছিলো! না কি জোর করে ভুলতে চেয়েছে!

সেদিন থানায় ডাইরি করতে এসে সেকেন্ড অফিসার অর্জুনকে দেখে আস্বস্ত হয়েছিলেন অনিমেষ স‍্যার। প্রিয় ছাত্রদের মধ্যে একজন ছিল অর্জুন । তাই ভরসা করে বলেছিলেন,
— বাবা আমার ভরসা আছে তোমার ওপর। মেয়েটা আমার সুবিচার পাবে। তুমি ওদের চরম শাস্তির ব‍্যবস্থা যেন হয় দেখো।

স‍্যারের মুখের ওপর কিছুই বলতে পারেনি সেদিন অর্জুন। তবে সেদিন ইচ্ছে করলে অনেককিছু করতে পারত। কিন্তু মাথায় চাড়া দিয়েছিল মনের ভেতরে লুকিয়ে রাখা প্রতিশোধস্পৃহা।
রূপসার প্রত‍্যাখানের অপমানটা ভুলতে পারেনি।

হ্যাঁ, অপমান করেছিল রূপসা। নিজের
মনের কথা বলতে গেছিল অর্জুন। আর রূপসার উত্তরে কান ঝাঁ ঝাঁ করছিল,
— কী বলছ! আমি তেমন করে তোমাকে দেখিইনা। তাছাড়া তোমার আর আমার পরিবারের আকাশপাতাল পার্থক্য। কখনও হবেনা এ সম্পর্ক। নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী স্বপ্ন দেখতে হয়। বুঝেছ!

এখনও মনে পড়লেই মনটা বিষিয়ে ওঠে। ঠিক করেছে অর্জুন। খুব গুমোর ছিল রূপসার। সেদিন রূপসার গুমোর ভেঙে যেতে দেখে মনে মনে তৃপ্তি পেয়েছিল অর্জুন। মনে পড়ে সেই দিনটার কথা।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।