অথ শ্রী উপন্যাস কথায় আরণ্যক বসু (পর্ব – ৩০)

শালজঙ্গলে বারোমাস ছয়ঋতু
মা ,আমি বাঁচতে চাই আলো- দুনিয়ায়
চিরমুক্ত অনর্গল সুখে-বেদনায় ;
মা আমি কবিতাজন্ম এঁকে যাবো ধীরে ,
জীবনযুদ্ধে মগ্ন মানুষের ভিড়ে।
মা,আমি বাঁচতে চাই…
রাত সাড়ে নটা নাগাদ বাড়ি ঢুকতেই , মা মৃত্তিকার থমথমে মুখের সামনে দাঁড়িয়ে কিছু বলতে গিয়েও চুপ করে গেল উন্মনা। তাঁর আত্মজা , ছোট্ট মেয়ে তোয়াও যেন , এত রাতে ইচ্ছে করেই অঙ্ক খাতার মধ্যে মুখ ডুবিয়ে রয়েছে । অথচ এখন তার টিভিতে কার্টুন দেখার সময় । স্বাভাবিক অনুভূতি থেকে উন্মনা বুঝলো — ফাল্গুনের শেষাশেষি আজ একটু অতিরিক্ত গুমোট। মৃত্তিকা আর তোয়া দুজনেই কোনো কথা বলছে না । ওদের স্তব্ধতাই প্রমাণ করে দিচ্ছে আজ এ বাড়িতে হাসিমুখ নির্বাসিত হয়েছে। সারাদিনের উচ্ছ্বাস শতকন্ঠে প্রকাশিত হতে চাইছে ,অথচ…
গম্ভীর মুখে চা নিয়ে বাইরের বারান্দায় বসতেই বুঝতে পারলো– মা তার নাতনিকে রাতের খাওয়া খাইয়ে দিচ্ছে। সাইলেন্ট মোডে রাখা উন্মনার ফোন নিঃশব্দে কিছু বলতে চাইছে। উন্মনা সেদিকে তাকাচ্ছে না । ও জানে, অমলেন্দু স্বাভাবিক ভাবেই নিরাপদে বাড়ি পৌঁছোনোর খবর জানার জন্য উদগ্রীব হয়ে মেসেজ লিখছে। উন্মনা নিঃশব্দে লিখলো– ঠিকঠাক পৌঁছে গেছি। তুমি বিশ্রাম নাও। কাল কথা বলবো। গুড নাইট।
নিজের কবিতার খাতা টেনে নিয়ে কয়েকটা লাইন লেখবার চেষ্টা করলো , কিন্তু পারলো না।মনের অস্থিরতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে গ্রামীণ স্তব্ধতা । আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকেই প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করছে উন্মনার। এখানে তার ভূমিকাটা ঠিক কী ?
একটাও কথা না বলে তোয়া নিঃশব্দে ঘুমিয়ে পড়লো।মা দুটো প্লেটে খাবার বেড়ে গম্ভীর গলায় বললো — ভিতরে এসে খেয়ে নাও। নিঃশব্দে খেতে খেতে উন্মনাই শেষ পর্যন্ত মৌনতা ভেঙে মুখর হলো — কী হয়েছে মা ? উত্তরে মা মৃত্তিকা রাতের খাবারটা যেন প্রাণপণে শেষ করতে চেষ্টা করছিল । কোনোরকমে বললো — খাওয়া শেষ হলে উঠোনের খাটিয়ায় বোস , কথা বলবো। এখানে কথা বললে তোর মেয়ের ঘুম ভেঙে যাবে। খাটিয়ায় বসে সামনের প্লাস্টিকের চেয়ারে পা তুলে দিয়ে নার্ভাস উন্মনা দাঁতে নখ কাটছিলো । কিশোরী বেলায় এটা করলে , মার কাছে প্রচন্ড ধমক খেতো । অথচ আজ মৃত্তিকা দূরের শুশুনিয়া পাহাড়ের মতো স্তব্ধ।
— কী হয়েছে মা ? তুমি আমার সঙ্গে কথা বলছো না কেন ?
–কি বলবো বলতো ? তুই যে জীবনটা কাটাচ্ছিস ,তার ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু ভেবেছিস ? তালবাগিচায় তোর স্বামী প্রাণতোষের কাছে তোর এখনকার খবরাখবর পৌঁছলে কি ঘটবে ভেবে দেখেছিস? আমি তোর ব্যাপারে মাথা ঘামাতাম না , কিন্তু তুই এমন কোনো কাজ করিস না যাতে তোর উঁচু মাথা হেঁট হয়ে যায় । এটা তোর বাবা মায়ের বাড়ি । তোর নিজের গ্রাম । তাই হয়তো তোর দিকে এখনও কেউ আঙুল তুলছেনা । কিন্তু এভাবে চললে তো–
স্তব্ধ, নির্বাক উন্মনা এতক্ষণে কথার খেই খুঁজে পেলো। মা , আমি তো একটা স্বাধীন মানুষ। নিজের দুর্ভাগ্য জয় করতে চেষ্টা করা একজন শিক্ষিতা নারী । বাবার ফ্যামিলি পেনশন আর আমার ছেলেমেয়ে পড়ানোর দুমুঠো রোজগার দিয়ে মোটামুটি ভাবে সংসার তো চালিয়ে নিচ্ছি। আমি কি শ্বশুরবাড়ি তালবাগিচায় গিয়ে ভিক্ষের ঝুলি পেতেছি ? নাকি , মেয়ে আর আমার জন্য খোরপোষের মামলা ঠুকেছি ? তোমার জামাই কি তোমাকে ফোন করে আমার বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেছে ?
— আজ বলেনি, কিন্তু আগামীকাল যে বলবে না তার কোনো গ্যারান্টি আছে ?
–হ্যাঁ বলতেই পারে। সেই অভিযোগের উত্তর দেওয়ার মতো মনের জোর আমার আছে মা । আমি তো তোমারই মেয়ে। ভালো যা কিছু সব তো বাবা মা আর এই বনতুলসী গ্রামের মাটি থেকেই পাওয়া। আমার স্বামী প্রাণতোষ মাইতিকে আমি চিনি। তাঁর ইগো , তাঁর আত্মসর্বস্বতা নিয়ে ,তাঁর নিজের কাজের জগৎ নিয়ে তিনি ভালো থাকুন , এটাই প্রার্থনা করি। বদমেজাজি হলেও তিনি কিন্তু অমানুষ নন । আমার মেলামেশা বা আমার সাহিত্যের জগৎ নিয়ে তাঁর বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। আমাদের খোঁজ খবর না নেওয়াটা তাঁর গোঁয়ার্তুমির নামান্তর মাত্র। কিন্তু মেয়ের প্রতি ওর ভালোবাসা আছে এটাই আমি বিশ্বাস করি। বিধাতা যেমন নারীকে আপন ভাগ্য জয় করবার অধিকার দিয়েছে , তেমনি পুরুষকেও দিয়েছে সব্যসাচী অর্জুন থেকে বিজ্ঞানের অধ্যাপক প্রাণতোষ মাইতি পর্যন্ত নিজস্বতার মহাদিগন্ত।
মা এবার সত্যি সত্যি অসহিষ্ণু হয়ে উঠলো। এতই যদি জানিস ,তাহলে বিয়ে করলি কেন ? ছেড়ে চলে এসে চিত্রাঙ্গদার মতো নারী স্বাধীনতার পতাকা ওড়াবি বলে ?
মা , বিয়েটা আমি সিরিয়াসলিই করেছিলাম।ইনফ্যাক্ট আমি বিশ্বাস করি , পৃথিবীর সব নারীই স্বামীর সঙ্গে ঘর সংসার পাতে ,বাবুই পাখির বাসার মতো সুন্দর একটা জীবন কাটাতে। কিন্তু কোনো কোনো পুরুষের কাছে বিয়ে ব্যাপারটা একটা ঘটনা মাত্র। কয়েক বছর বাদেই তাদের ঘোর কেটে যায় । তখন গোটা ব্যাপারটাকেই তার কাছে দুর্বিসহ মনে হয়। মা , তোমার উচ্চশিক্ষিত জামাই সেই গোত্রের মানুষ , যারা বৌকে কোনোমতে মেনে নিতে পারলেও ,তার বাড়ির লোককে সহ্য করতে পারে না। কে বলেছে আমার স্বামী খারাপ ? তিনি তাঁর পড়াশুনো, নিজস্ব সংস্কার , ছাত্রছাত্রী নিয়ে খুব ভালো আছেন — এটুকুই জানি। মনে রেখো মা,ঐ বাড়ি ছেড়ে আসতে আমরা বাধ্য হয়েছিলাম।ভাগ্যিস এই শান্ত গ্রাম বনতুলসীর এক টুকরো আশ্রয় আমাদের জন্য ছিলো ! তা নয়তো তোয়া আর তোমাকে নিয়ে কোথায় গিয়ে দাঁড়াতাম ?
মায়ের চোখ মাটির দিকে নামানো। কোনোমতে টেনে টেনে বললো–তবু ওটাই ছিলো তোর স্বামীর আশ্রয়। বিবাহিত মেয়েদের জীবনে স্বামী কত বড় সম্পদ তা তুই জানিস না ? থালা বাসনে ঠোকাঠুকি হয় ,এটা যেমন সত্যি,তেমনি ঘটিতে জল আর থালায় অন্ন থাকলে তারা পাশাপাশি হাত বাড়ানো বন্ধু হয় ,এটাও সত্যি । আমার অসুস্থতার সময় তোর স্বামী যখন দুর্ব্যবহার করছিলো ,তখন আমাদের এটাও বোঝা উচিৎ ছিল যে, ওরা তো আমাদের ওই অবস্থায় রাস্তায় বার করে দেয়নি , বা আমাকেও বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলেনি।আমরা তো আর একটু ধৈর্য দেখাতেই পারতাম। দুজনেই জেদ নিয়ে বসে থাকলি , তার জন্য ভুগছে ওই কচি মেয়েটা । তিন বছর বয়সে বাবাকে শেষ দেখেছে । দেখতে দেখতে ওর বয়স ছ’ বছর হয়ে গেল । ও যেমন ওর বাবাকে পাচ্ছে না , তেমনি তুইও তো—
ব্যস মা । এনাফ ইজ এনাফ।আমার স্বামী কোনোদিনও আমার চায়ের কাপ ছিল না,বা আমিও তার চায়ের কাপ নই ।মন দিয়ে সংসার করতে চেয়েছিলাম। নিজের উচ্চশিক্ষা ভুলে স্বামীকে আঁকড়ে বাঁচতে চেয়েছিলাম। তা যখন হল না ,তখন বাস্তবটাকেই মেনে নিতে হবে। এই দুনিয়ায় হাজার হাজার বিবাহ বিচ্ছিন্না আছেন ,তাদের জীবন কি কালাহারি মরুভূমি হয়ে গেছে ? বৃদ্ধাশ্রমে, ছেলেমেয়ের সংসারে জায়গা না পাওয়া যে বয়স্ক মানুষগুলো থাকেন , তাঁরাও তো সবাই সবাইকে আঁকড়ে , রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সুকান্ত ,রজনীকান্ত, ডি এল রায় আর অতুলপ্রসাদে বেঁচে থাকেন, লালনে, কীর্তনে, আজানে,রামপ্রসাদে বেঁচে থাকেন, রামকৃষ্ণ,বিবেকানন্দ ,মা সারদাকে আঁকড়ে আনন্দে থাকেন । পঁচিশে ডিসেম্বর, প্রথম জানুয়ারি, একুশে ফেব্রয়ারি, উনিশে মে, পয়লা বৈশাখ, ঈদ, পঁচিশে বৈশাখ ,বাইশে শ্রাবণ,বিজয়া সম্মিলনী,পৌষ ফাগুনের পালা –সবই তাঁদের আছে। জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত বেঁচেবর্তে থাকা আছে। আমাদের কেন থাকবে না মা ? দূরের পাহাড় , কাছের জঙ্গলে ঘেরা এই ছোট্ট বাড়িটায় তুমি আমি তোয়া — এই তিন প্রজন্মের নারীজন্ম তো রয়েছেই । আমার জীবনে স্বাভাবিকভাবে যদি কোনো পরিবর্তন আসে এবং আমি যদি সেটা মেনে নিতে পারি ,আমার মেয়ে তোয়াও ধীরে ধীরে মানিয়ে নেয় ,তাহলে তুমিও…
— আমি জানি , তুই যা করছিস ভেবে চিন্তেই করছিস ; তবু , আমাদের সংস্কার এই শিক্ষাই দিয়েছে যে, বিবাহিত নারীর জীবনে স্বামীই সবচেয়ে বড় আশ্রয় ।
আবেগে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে মৃত্তিকা উন্মনার দুটো হাত জড়িয়ে কাছে টেনে নেয়। মা রে , তুই আরেকবার ভেবে দেখ না , যদি শেষ চেষ্টা করে সবকিছু আবার মিটিয়ে নেওয়া যায় ! যতদিন শরীরের শেষ জোরটুকু থাকবে,আমি ততদিন একাই এখানে থাকতে পারবো । গ্রামের মানুষজন আজও একে অন্যের খোঁজ খবর নেয়। তারপর না হয় যে কোনো বৃদ্ধাশ্রমে চলে যাবো। সেখানে আমি আমার কবি মেয়ের কবিতা সবাইকে পড়ে শোনাবো।
চোখের জল মুছে উন্মনা ধীরে ধীরে বললো–এই তো মা , তুমি তোমার মেয়ের কবিতা লেখাকে স্বীকৃতি দিলে । এর চাইতে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে ? আমাকে গর্ভে নিয়ে তুমি স্বামী , সংসার সামলে পড়াশুনো চালিয়ে গ্রাজুয়েট হয়েছো , একই সঙ্গে রান্নাঘরে আমাকে বসিয়ে প্রতিদিন নিয়ম করে সকাল সন্ধ্যা পড়িয়েছো । আমি বর্ণপরিচয় , কথামালা ,সহজ পাঠের দুনিয়ায় মিশে যেতে যেতে দু’ মুঠো ভাতের গন্ধে ডাঁটো হয়েছি । বাবা আমার মাথায় ওপরে ছাদ হয়েছে,আর তুমি হয়েছো প্রতিদিনের অন্নব্যঞ্জন। তাই , এই মাঝবয়সে এসেও বিরিয়ানির গন্ধের চেয়েও ডালফোড়নের সুবাসটাই আমার কাছে প্রিয়। ওই গন্ধের মধ্যে থেকেই আমার কবিতারা জন্ম নেয় । উন্মনা একটা ছোট্ট হাই তুলে আবার বললো — আমাদের ভেঙে যাওয়া বিবাহিত জীবনকে জোড়া দেওয়ার জন্য তোমার পরামর্শের কথা আমি আবার ভাববো । দুবার , তিনবার, চারবার ভাববো। কিন্তু তারপর আমার সিদ্ধান্ত আমিই নেবো।মা , তুমি বিশ্বাস করো ,প্রতিটি মানুষের জীবনেই পঞ্চদশী চাঁদের মতো কবিজন্মের ছোঁয়া থাকে , কবিতাজন্মের ছোঁয়া লাগে। প্রত্যেকের জীবনকে কবিতার মতো সুন্দর হতে হয়। অ্যারিস্টটল , সক্রেটিস, শেক্সপিয়র , রবীন্দ্রনাথের মতো, দ্য ভিঞ্চি , কোপার্নিকাস, আর্যভট্ট, নিউটন , আইনস্টাইন — এঁরাও জীবনকে কবিতার মতো করে দিয়েছেন । কেউ খাতার পাতায়,কেউ আকাশে আকাশে। সেই জন্যেই কল্পনা আর বাস্তব মিলেমিশে যে ইতিহাস রচিত হয় ,তা কবিতার মতো সুন্দর হয়। মা , প্রাণতোষের জীবনকেও কবিতার মতো সুন্দর হতে হবে। আমি না পারলেও অন্য কেউ নিশ্চয়ই পারবে। তবে, এবারে আমাকে কাগজে কলমে বিচ্ছেদের কথা ভাবতেই হবে মা। কারণ , এই ব্রহ্মান্ডে মনুষ্যজন্ম একবারই আসে । দেখতে দেখতে সেটা জ্বলন্ত মোমবাতির মতো ফুরিয়ে যায় । আছাড়ি পিছাড়ি কাঁদলেও সে জীবন আর ফিরে আসে না। রামপ্রসাদ থেকে লালন ফকির এই কথাগুলোই বলে গেছেন । আমরা সকলেই বাঁচতে চাই মা , বাঁচার মতো করে বাঁচতে চাই , নারী হয়ে বাঁচতে চাই, পুরুষ হয়ে বাঁচতে চাই , অর্জুন হয়ে বাঁচতে চাই, চিত্রাঙ্গদা হয়ে বাঁচতে চাই , এমনকি, মাইক্রোস্কোপের নিচে দেখা এককোষি অ্যামিবা হয়েও বাঁচতে চাই। সবুজ পাতার ক্লোরোফিল হয়ে বাঁচতে চাই ,সূর্যের আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মিতে বাঁচতে চাই , রংধনুর সাত রঙ নিয়ে বাঁচতে চাই।প্রাণতোষ হয়ে বাঁচতে চাই ,উন্মনা , মৃত্তিকা ,করতোয়া হয়ে বাঁচতে চাই । বেঁচে থাকাটাই যে সবচেয়ে সুন্দর মা !
স্তব্ধ , নির্বাক মা মৃত্তিকা নিঃশব্দে উঠে গিয়ে উন্মনার লেখার খাতাটা নিয়ে আসে। মেয়ের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে — মাঝে মাঝে অনেক রাতে , তুই তোর বন্ধুকে যেমন করে তোর লেখা কবিতা শোনাস , তেমন করে একটা কবিতা শোনাবি আমাকে ? আমি প্রার্থনা করি ,স্বর্গ থেকে তোর বাবাও প্রার্থনা করছেন– তোর জীবন , তোর মেয়ের জীবন যেন কবিতার মতো সুন্দর হয়।
উন্মনা তার লেখা কবিতা পড়ছে মা মৃত্তিকার কোলের কাছে বসে।শুনছে রাতের আকাশ,দূরের পাহাড় ,নিবিড় বনভূমি আর শেষ ফাগুনের নিশি- সুবাতাস।
এক আকাশের নিচে ,এই আমাদের ঘর,
রোদ ,ছায়া,আর হাওয়া, শ্রাবণের ঝরঝর।
এই আমাদের থাকা, দুঃখ জড়িয়ে থাকি ,
রঙ তুলি জুটে গেলে, পৃথিবীর ছবি আঁকি।
চালে ডালে মিলে মিশে, পাগলের আয়োজনে ,
স্বজন সুজন ব’সে, হৃদয় ভাসিয়ে শোনে ।
এই আমাদের গতি ,এই থামা, থেমে যাওয়া ,
বৃষ্টিবিহীন দিনে , আসে যে পাগল হাওয়া!
আসে ,আসে , ঢেউ আসে , ঢেউকে সঙ্গী করি ,
সবুজে সবুজ হয়ে, শেষে একদিন ঝরি।
এভাবেই উপকথা, ছায়ানির্জন গ্রামে ,
নীলদিগন্ত জুড়ে, ভোরের আকাশ নামে।
কবিতা শেষ হয় , মা মেয়ে দুজনেই নিজেদের রাতের শয্যায় ফিরে যায়। মা জেগে থাকে ,মেয়েও নিদ্রাহীন। মৃত্তিকা মেয়ের জীবন নিয়ে আকাশ পাতাল ভাবে। মেয়ে ভাবে,তার প্রিয় কবিমনকে এই রাতে কি কিছু বলার ছিল ? এই রাত দেড়টার সময় নতুন করে কিই বা লিখবে ? অমলেন্দুর অনেকগুলো মেসেজ ওর জন্য অপেক্ষা করছে । সেখানে অভিভাবকের উৎকণ্ঠা আর প্রেমিকের আবেগ একাকার হয়ে আছে। উন্মনার আত্মরক্ষার কাচের দেয়াল একটার পর একটা ভেঙে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে একবার ফোন করতে ভীষণ ইচ্ছে করছে । কিন্ত মানুষটার বয়সের কথা চিন্তা করে, সকালে উঠেই অফিসের ব্যস্ততার কথা ভেবে নিজেকে সংযত করলো উন্মনা। অমলেন্দুর প্রতি একটা গভীর মায়া যেন ক্রমশ ছায়া বিছিয়ে দিচ্ছে নারী উন্মনার জীবনে। কিছুক্ষণ ভেবে চোখের ভারী পর্দার ওপর নেমে আসা ঘুমকে সরিয়ে রেখে, মোবাইলের পর্দায় নিঃশব্দে লিখলো– ও কবিমন, আমি ভালো আছি । আমরা সবাই ভালো থাকবো। সারা পৃথিবীকে ভালো থাকতে হবে। আমরা সবাই সবার ভালো থাকাকে সম্মান জানাবো।
এবার ঘুমিয়ে পড়ি , কেমন ?
ক্রমশ…