সৈয়দ সাদেকায়েইন আহমেদ নকভি ১৯২৩ সালে ভারতের উত্তরপ্রদেশের আমরোহায় ক্যালিগ্রাফার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি পাকিস্তানের অন্যতম সেরা ক্যালিগ্রাফার, মুরালিস্ট এবং চিত্রশিল্পী হিসাবে গণ্য হন, তাঁর রচিত খাতায় ১৫,০০০-এরও বেশি ছবি রয়েছে, তাঁর করা বিশালাকার ক্যালিগ্রাফিক মুরাল, আলঙ্কারিক আর্ট এবং অঙ্কন ছাড়াও কয়েক হাজার কাব্যলেখা আছে।
শিল্পীদের মধ্যে পিকাসো এবং মিশেলঞ্জেলোর Picasso and Michelangelo একটি সংমিশ্রণ সাদেকের ছবিতে ছিল। তিনি তাঁর শিল্পটি এমনিই দিতেন এবং কখনও বিক্রি করেন না। সাদেকইয়েন নিজেই কখনও বিয়ে করেননি এবং তাঁর নিজের পরিবারও ছিল না তাই ডঃ সালমান আহমদ সহ তাঁর বড় ভাইয়ের পরিবার তাঁর ঘনিষ্ঠ ছিল।
তিনি তাঁর জীবনের প্রথম অধ্যায় ভারতে কাটিয়েছেন; তবে ১৯৪৮ সালে তিনি পাকিস্তানে পাড়ি জমান এবং পাকিস্তানের প্রগতিশীল লেখক ও শিল্পী আন্দোলনে যোগ দেন। সাদেকায়েইন ছিলেন একজন সামাজিক ভাষ্যকার, এবং এটি তার প্রাথমিক কাজেই প্রমাণিত হয় যেখানে তিনি সমাজের সামাজিক কুফলগুলিকে চিত্রিত ও তুলে ধরার করার চেষ্টা করেছিলেন। শিল্পী গভীরভাবে অজানা সম্পর্ক আঁকতে বেছে নিয়েছিলেন, যেমন তাঁর রচনায় প্রতিফলিত হয় যা সবারই প্রশ্ন যা সমস্ত পুরুষকে ভীতি প্রদর্শন করে। জীবনের অর্থ কি? কেন আমাদের এখানে এই পৃথিবীতে রাখা হয়েছে? ইচ্ছা বনাম নিয়তি – এধরণের প্রশ্ন এবং তাঁর কাজ তাকে আধ্যাত্মিকতার প্রতি টেনে নিয়ে গেছিল।
ক্যালিগ্রাফির চর্চা উঠে যাচ্ছিল,সাদেকায়েইন মরণাপন্ন শিল্পকে বিপ্লবিত ও রূপান্তরিত করেছিলেন শুধু তাই নয় এটিকে আবার এক উজ্জ্বল, বর্ণময় এবং জীবন্ত মাধ্যমের দ্বারা প্রাণি সৃষ্টি করেন। যা অন্য কোনও শিল্পকর্মের মতোই পাকিস্তানের বিখ্যাত জায়গাগুলির দেওয়ালে স্থান পেয়েছে।। তাঁর বিশ্বাস ছিল শক্ত, তাঁর শক্তি তাঁর শিল্প এবং তাঁর শিল্প ছিল তাঁর উপাসনা। এই মহান শিল্পী কেবল একজন বিনয়ী মানুষই নন যিনি অর্থ বা ক্ষমতা অর্জনের আকাঙ্ক্ষাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, তবে সততা ও সদয় মানুষ হতে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি কেন কখনও সুন্দর ল্যান্ডস্কেপ বা প্রজাপতি আঁকেন না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জবাব দিয়েছিলেন, “আমি সত্যের সন্ধান করি এবং আমি বাস্তবের পিছনে থাকি। আমি কাউকে কোনও ফুলদানি বা গোলাপী পর্দাতে পোজ দিয়ে দাড়ালে অনুপ্রাণিত হই না। যা আমাকে অনুপ্রাণিত করে তাহল কেউ যখন কয়েক ঘন্টা ধরে ক্ষুধার্ত হয়েছিলেন এবং বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করছেন। দিনের শেষে যখন কিছু খাবারের অংশ তাকে খুশি করে, তাঁর চেহারাটি আলোকিত করে সেই দৃশ্য আমাকে স্পর্শ করে। আমি বাস্তবতা প্রকাশের চিত্রকর।
সাদেকাইন একজন মানুষ যার জীবন তাঁর শিল্পের চারপাশে ঘুরে বেড়ায়, তার কাজের মধ্যে নিজেকে পুরোপুরি ডুবিয়ে রেখেছিলেন, লোকে বলত, যে তিনি এতটাই নিবেদিত প্রাণ ছিলেন ছবির জন্য, যে তাঁর ডান হাতের আঙ্গুলগুলি রঙের তুলি ধরতে ধরতে স্থায়ীভাবে বেঁকিয়ে গেছিল।
Below: Arz-o-Samawat (The Earth and the Skies), Frere Hall
এমনকি তিনি তাঁর একটি কবিতায় তাঁর নিবিড় নিবেদনের বর্ণনা দিয়েছেন:
Phir yeh kia Rangoon ka jhamela mein nay
Is tail say fun ka khel khela mein nay
Is apnay badan ki haddiyon ko din raat
Takhleeq kay kolhu mein hai pela mein nay
আরও একবার রং ছুঁড়ে দিলাম
এবং তাদের সাথে শিল্পের খেলা খেললাম
আমি দিনরাত আমার হাড়গুলিকে ঠেলে দিলাম
সৃজনশীলতার পেষণকারীযন্ত্রে
Fun ki chal to rahi hai rerhi yarab
Satrein likhta hoon terhi merhi yarab
Likhtay huey aayat-e-junoon bachpan say
Ab ungliyan ho chuki hein terhi ya rab
হে ঈশ্বর, শিল্পের ঠেলাগাড়িটি চলছে অলসভাবে
আমি যে লাইনগুলি লিখছি তা উল্টেপাল্টে যাচ্ছে হে ঈশ্বর
আমি যেমন শৈশব থেকেই আমার আবেগ আঁকছি
হে ঈশ্বর, এখন আমার আঙ্গুলগুলি বেঁকিয়ে উঠেছে
সাদেকায়েইন মুরাল তৈরির অসাধারণ শিল্পকে পাকিস্তানের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন, এটি একটি শিল্পরূপ যা রেনেসাঁ থেকে উদ্ভূত হয়েছিল এবং লিওনার্দো দা ভিঞ্চির “দ্য লাস্ট সাপার” এবং মাইকেল এঞ্জেলোর “অ্যাডামের ক্রিয়েশন” এর মতো কয়েকটি বিখ্যাত রচনা। তাঁর মহান রচনা পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারটি “জ্ঞানের কোয়েস্ট”, মঙ্গলা বাঁধ এবং তার “আরজ-ও-সামাওয়াত” (পৃথিবী ও আকাশ) যা ফ্রেয়ার হলের সিলিংয়ে নীচে
সাদেকের সাথে ফিদা হোসেনের বেশ কিছু দিকে মিল আছে। যেমন ভারতের সেরা শিল্পী মকবুল ফিদা হোসেন, তেমন পাকিস্থানের সেরা শিল্পী সাদেকোয়ান নকভী। দুজনেই বিশাল বিশাল ম্যূরাল আঁকতেন। দুজনেই মুসলিম পরিবারের, দুজনেই ক্যালিগ্রাফির সাথে যোগ। দুজনেই কবিতা লিখতেন এবং বিমূর্ত ছবি আঁকতেন।
অমিল হলো, সাদেক বিয়ে করেননি। ফিদা হোসেন বিয়ে ছাড়াও বহু নারীর প্রেমে আসক্ত ছিলেন। সাদেক ১৫০০০ ছবি করেন, হোসেন প্রায় ৬০,০০০ ছবি এঁকেছেন। সাদেক বিতর্ক সৃষ্টি করেননি, বিনয়ী ছিলেন, হোসেন তার উল্টো। সাদেকের ছবির মূল ছিল মানুষের সংগ্রাম, হোসেনের ঘোড়া আর নারী প্রিয় বিষয়।, সাদেক হোসেন প্রায় অর্ধেক বছর বে৬চেছিলেন, ৫৭ বছর , হোসেন ৯৫ বছর।
একনজরে সৈয়দ সাদেকোয়ান আহমেদ নকভি, তমঘা-ইমতিয়াজ, প্রাইড অফ পারফরম্যান্স, সিতারা-ই-ইমতিয়াজ, প্রায়শই সাদেকায়েন নককাশ নামে পরিচিত, তিনি একজন পাকিস্তানি শিল্পী ছিলেন, তিনি
(below): Sadequain Mural National Geophysical Research Institute Hyderabad Deccan 40×12 feet..
একজন ক্যালিগ্রাফার হিসাবে দক্ষতার এবং চিত্রশিল্পী জন্য বেশি পরিচিত ছিলেন। তিনি পাকিস্তান সব সময়ের সেরা চিত্রশিল্পী এবং ক্যালিগ্রাফার হিসাবে বিবেচিত হন। ্সূত্রঃউইকিপিডিয়া
জন্ম: ১৯৩০ সালে, আমরোহা। মকবুল ফিদা হুসেনের চেয়ে ১৫ বছরের ছোট বয়েসে।
মৃত্যু: ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৭, করাচি, পাকিস্তান
পিরিয়ড: হুরফিয়া আন্দোলন
পিতা: সৈয়দ সিবতৈন আহমেদ নকভি
শিক্ষা: ডঃ ভীমরাও আম্বেদকর বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৪৮)
মকবুল ফিদা হোসেন, বহুল প্রচারিত ভারতীয় চিত্র শিল্পী ছিলেন নিঃসন্দেহে। কিন্তু তার শিল্পী চরিত্র বেশি প্রচার পেয়েছে তার উস্কানিমূলক ছবির জন্য। তিনি যতনা সমসাময়িক শিল্পী তার চেয়ে অধিক বেশি সাধারণ মানুষের মনে আঘাত এনে হিন্দু দেব-দেবীর ছবি এঁকে প্রচার পেয়েছেন। তার প্রিয় বা অধিক সংখ্যার ছবির মধ্যে পাওয়া যায়, ঘোড়া ও নারী/ নগ্নিকা। তার ছবির বিতর্ক উস্কে দিতেন পৌরাণিক কাহিনীকে অশ্লীল ভাবে দেখিয়ে। যা ইসলাম ধর্মে করলে মকবুলের কোতল অনেকদিন আগেই হয়ে যেত। সামাণ্য এক গল্পের চরিত্র নিয়ে সালমান রুশদী কে এখনো মৃত্যুর ফতোয়ার জন্য লুকিয়ে থাকতে হচ্ছে। আর ফিদা হোসেনের মত কাজ বা অশালীন বিকৃত ছবি আঁকলে ইসলাম বিশ্বাসীরা ছেড়ে দিত?
একটা ছবিতে তিনি দেখাচ্ছেন হনুমানের লাংগুল জড়িয়ে সীতা, এর মানে দাড়াচ্ছে হনুমানের সাথে সীতার যৌন সম্পর্ক।
অন্য আরেকটি ছবিতে রাবণের সাথে সীতার অবৈধ সম্পর্ক, রাবণের উরুতে সীতা।
শিল্পীর স্বাধীনতা থাকে, কিন্তু কতটুকু? অখন্ড স্বাধীনতা বলে কিছুই নেই কোন রাস্ট্রে। অসংখ্য হিন্দু ধর্মীয় গোষ্ঠি মকবুল ফিদা হোসেনের উপর অসন্তোষ্ট ছিল। তার নামে ভারতীয় আইনে অনেক মামলা মোকদ্দমা হয়। তার স্টুডিও বাড়ি ভাঙ্গচূর করে হিন্দু মৌলবাদীরা। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করছিলেন মকবুলের জন্য কোন দাঙ্গা যেন না হয়।
হোসেন প্রচুর ছবি বিতর্ক উসকে দিয়ে এঁকেছেন। শুধু হিন্দু নয় মুসলিমরাও তার উপর ক্ষিপ্ত ছিল। হিন্দু দেবদেবী সম্পর্কে তার শ্রদ্ধা ছিল, কিন্তু তিনি অশালীন ছবি না এঁকে পারছিলেননা। কোথাও তাঁর একটা ভুল বোঝাবুঝি ছিল। তিন দেখেছেন , পৌরাণিক গল্পগুলি, সেখানে অনেক কিছুই খোলামেলা। এই প্রসংগে পরে সুযোগ হলে আলোচনা করব। দেবদেবী একটা তার বিষয় বাতিক।এছাড়া তিনি প্রচুর নারী মোহে আচ্ছন্ন ছিলেন সিনেমার অনেক নায়িকাই তার অনুপ্রেরণা ছিল। সবার চেয়ে মাধুরী দীক্ষিত ছিল, তার কাছে উজ্জ্বল ভারতীয় নারী, শারীরিকভাবে।তিনি মাধুরী দীক্ষিতের পূজারী হয়ে উঠেছিলেন।