সাপ্তাহিক শিল্পকলায় শিল্পের জন্য শিল্প – লিখেছেন অ্যালবার্ট অশোক (পর্ব – ৫৩)

ক্যানভাস, দেহ নিষ্কাসিত পদার্থ ও তুলি ৪

মার্সেল ডুচাম্পের পেইজেজ ফৌটিফের (Marcel Duchamp’s Paysage Fautif) (“Faulty Landscape”) ত্রুটিযুক্ত দৃশ্যচিত্র

মার্সেল ডুচাম্পের বিখ্যাত রেডিমেডস (famous readymades) ছাড়াও, তাঁর জীবনে তিনি এমন সব কাজ তৈরি করেছিলেন যা কম পরিচিত ছিল কিন্তু উস্কানিমূলক এবং জনসাধারণের মধ্যে কেলেঙ্কারী সৃষ্টি করেছিল। একদিকে যৌনতা একইসাথে বিদ্রূপ এরকমই ডুচাম্পের  জীবনের পরবর্তী শিল্পকর্মগুলির প্রধান পরিকল্পনা ছিল। ১৯৫০ এর  শুরুতে, তিনি দেহ, প্রেমমূলকতা এবং যৌন প্রতীকী   বিষয় নিয়ে তাঁর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিলেন। তার কাজগুলি দর্শকদের চ্যালেঞ্জ করে, কারণ এগুলি দেখে দর্শক অস্বস্তি বোধ করে,এমনকি সেগুলি স্পর্শ করতেও । তিনি বলতেন, “যেকোন কিছুই শিল্প যদি কোন শিল্পী বলে।”
“আমি বিশ্বাস করি যে  শিল্পই ক্রিয়াকলাপের একমাত্র রূপ যেখানে মানুষ নিজেকে আশ্বাস দেয় একজন সত্যিকারের মানুষ হতে এবং জন্তু জানোয়ারের জগতের বাইরে যেতে সে সক্ষম । কারণ শিল্প হ’ল এমন একটা  অঞ্চল, যা সময় এবং স্থান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না। এবং বেঁচে থাকতে চাইলে বিশ্বাস করতে হবে। এটাই আমার বিশ্বাস ” (১৯৫৬)
হঠাৎ উপরের ছবিটি দেখলে মনে হবে,এটি একটি নিরীহ,রঙ ছিটকানো কাজ। ১৯৮৯ এর দশকে  কালো সাটিনের উপর একটা প্রলেপ  splotch ডুচাম্পের  নিজস্ব বীর্য বলে প্রমাণিত হয়েছিল। এক্স-রে এবং রেডিও কার্বন ডেটিংয়ের X-rays and radiocarbon dating মাধ্যমে আপনি কিছু জিনিস জানতে পারেন, তবে এমন কিছু কিছু রয়েছে যার জন্য আপনাকে কেবল শিল্পীর দুষ্টু বোধের রসিকতা (এবং সম্ভবত কিছু পুরানো প্রেমের চিঠির বিষয়বস্তু) সম্পর্কে জানতে হবে।
পেইজেজ ফৌটিফ বা ত্রুটিযুক্ত ল্যান্ডস্কেপ মার্সেল ডুচাম্পের অন্যতম মূল কাজ। এটি ১৯৪৬ সালে তৈরি হয়েছিল এবং ব্রাজিলের ভাস্কর এবং ডুচাম্পের প্রেমিকা মারিয়া মার্টিনকে Maria Martins, উত্সর্গ করা হয়েছিল যার সাথে তিনি ১৯৪২ সালে পরিচিত হয়েছিলেন।
এটি শরীরের একটা অভিজ্ঞতা দেখানো হয়েছে। এবং শিল্পে শরীরকে। এরকম একটি অনুশীলন ছড়িয়ে পড়ে বিশেষত পঞ্চাশের দশকের শেষের দিকে।
এটিকে মৌলিক এবং উত্তেজক/উস্কানিমূলক original and provocative piece  অংশ হিসাবে বিবেচনা করা হয় কারণ তিনি যে উপাদানটি তৈরি  করেছিলেন – তা ছিল তার নিজের শুক্রাণু। অর্থাৎ নিজেকে অপব্যবহার করে কাজটি করেন। যদিও ১৯৮৯ সাল অবধি কেউ জানতে পারেনি ডুচাম্প এই কাজটিতে নিজের বীর্য ব্যবহার করেছেন।
ব্রাজিলিয়ান কূটনীতিকের স্ত্রী মারিয়া মার্টিন্সকে  Brazilian diplomat’s wife, Maria Martins এই কাজটি উৎসর্গ করা হয়েছিল, এবং ডুচাম্পের প্রেমিকার এটা খুব পছন্দ হছিল।মারিয়া তিনি নিজেই একজন ভাস্কর ছিলেন এবং কখনও কখনও পরাবাস্তববাদীদের মতো কাজ করতেন। কাজের শিরোনামটি “ত্রুটিযুক্ত” বা “আপত্তিকর আড়াআড়ি” হিসাবে একটা অর্থ করে – যার অর্থ ডুচাম্প সচেতন ছিলেন যে ক্যানভাসের উপর ছড়িয়ে দেওয়া বীর্য তার নিজের অপব্যবহারের ফলাফল কেবল প্রাপককেই নয়, আর্ট ওয়ার্ল্ডকেও অসন্তুষ্ট করতে পারে।
এটিকে বিকৃত দেখাচ্ছে না যতক্ষণ না আপনি আসল কথাটা জানতে পারছেন। কেউ এটিকে “রেডিমেড স্ব-প্রতিকৃতি” বলে অভিহিত করেছেন এবং অনেকে যার যার মত করে ভেবেছেন।

মার্সেল ডুচাম্পের প্রতিকৃতি।

 

 

 

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।