সাপ্তাহিক শিল্পকলায় শিল্পের জন্য শিল্প – লিখেছেন অ্যালবার্ট অশোক (পর্ব – ৬৫)

ভারতে কেন শিল্পী আর গড়ে উঠবেনাঃ সংশয়ের শিকর

(charity-or-the-indigent-family) William-Adolphe Bouguereau 1865 painting
ভারতে ছবি আঁকার তো কলেজ আছে অনেক, কিন্তু জানবেন সেই সংস্থানের যোগ্য চাকরি নেই। প্রথমে জেনে নিন কে কি বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করে। ছয়ের দশকে যে মূল্যবোধ ছিল, তা নয়ের দশকে ছিলনা বা বিংশ শতাব্দীর গোড়ায় ছিলনা। সময় মানুষকে নানা আবহাওয়াতে, পরিবেশে ও নানা সংকটের মধ্য দিয়ে নিয়ে যায়। সময়ের দাবী অনুযায়ী মানুষ নিজেকে খাপ খাইয়ে চলে।
ভারতের সংস্কৃতির যারা ধারক ও বাহক তাদের হেয় করে পশ্চিমী গ্ল্যামার ও উপভোগের আয়োজনে সাধারণ মানুষ চলে এসেছে। সাদা চামড়ার মানুষদের উপর কালো ও বাদামী মানুষের অধিকাংশই আকর্ষণ রয়েছে। তার কারণ মানুষের এই বিশ্বাস তৈরি হয়েছে যে, তারা যদি সাদা চামড়ার মানুষের সম্পর্শে যদি থাকে তবে তারাও সাদা চামড়ার মানুষদের মত সুখী থাকবে। দেখা গেছে আফ্রিকা ও এশিয়ার লোকেরা আমেরিকা ও ইউরোপে থাকতে আগ্রহী। এশিয়াতে ৫০ বা ৫১ টি রাস্ট্র আছে। দরিদ্রতম রাস্ট্র অনেক। শীর্ষতম রাস্ট্র এশিয়ায় ১) জাপান, তার বিশ্ব অবস্থান হল পঞ্চম। ২) সিংগাপুর, বিশ্বের ১৬ নং,৩) চীন বিশ্বের ২০নং, ৪) দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বের ২২ নং, ৫) ভারত,বিশ্বের ২৫ নং, ৬) থাইল্যান্ড ৭) মালয়েশিয়া ৮)ইন্দোনেশিয়া ৯) ভিয়েত্নাম ১০) ফিলিপিন্স ( Mar 15, 2018, তে প্রকাশিত ফোর্বস ম্যাগাজিনের প্রতিবেদন ফিনান্স ইয়াহু থেকে নেওয়া পরিসংখ্যনঅনুযায়ী) আফ্রিকাতেও ৫৪ টি রাস্ট আছে। তার আর্থ-সামাজিক অবস্থা আরো খারাপ।
অথচ প্রতিটি ভৌগোলিক অঞ্চলের ঐশ্বর্য প্রায় সমান, তাহলে কেন ইউরোপ আমেরিকা আর্থ-সামাজিক দিক থেকে এত উন্নত? নিশ্চয়ই ধরে নিতে হবে সাদা চামড়ার বোধ-বুদ্ধি কালোদের থেকে বেশি। তার উপর একটা রাস্ট্র চলে তার নেতাদের যোগ্যতা ও মেধার উপর। ভারতের নেতাদের যোগ্যতার তুলনায় শূন্য। রাস্ট্রের সম্পদ লুটেরা, গান্ধী পরিবার থেকে বহু কংগ্রেসি নেতা সহ অনেক অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাই দস্যু। তাদের আয় হিসাব বহির্ভূত। সম্পদ স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ কেউ সঠিক জানেনা। তাদের পারিষদ দল আরো বিপজ্জনক, কেবল আমলাদের মত কালো অর্থের সন্ধানে থাকে।
ভাবুন স্বাধীনতার ৭২ বছর পরেও ৬৯% মানুষ দারিদ্র সীমার নীচে বাস করে। (wo-thirds of people in India live in poverty: 68.8% of the Indian population lives on less than $2 a day. Over 30% even have less than $1.25 per day available – they are considered extremely poor. This makes the Indian subcontinent one of the poorest countries in the world; women and children, the weakest members of Indian society, suffer most.According to UNICEF, about 25% of children in India have no access to education. সূত্রঃ https://www.soschildrensvillages.ca/news/poverty-in-india-602)
১৯৬০ সাল থেকে ১৪৫ কোটির চীন যদি বিশ্ব অবস্থান ২০ নং এ যেতে পারে, ১৯৪৭ এর পর থেকে ১৩৫ কোটির ভারত কেন যেতে পারেনা? লোকেরা কি অকর্মন্য? তাতো নয়। আম্বানীদের সম্পদের পাহাড় বা সিনেমার নায়ক নায়িকাদের আয়, বা রাজনৈতিক নেতাদের হিসাব বহির্ভূত আয় আকাশ থেকে তো আসেনা। ৬৯% লোকদের ঘামের টাকা চুরি হয়ে ওখানে যায়। সরকার গরীব ও অশিক্ষিত মানুষদের ভুল বোঝায়। আর মানুষ সাধারণত নিজেকে জ্ঞানী ভাবে। তার ভুলটাকেও ঠিক ভাবে। না হলে ভারতের এমন দশা হবে কেন?

Le repas frugal, (The Frugal Repast), Pablo Picasso, 1904 (Etching)
এই আর্থ সামাজিক রূপ এবং অশিক্ষা মানুষকে পিছিয়ে রেখেছে। ফলে আমাদের সন্তানেরা আমাদের বা পিতামাতার আর্থিক সংগঠনের উপর পড়াশুনা করে। যার বাবা মা শিক্ষিত সে শিক্ষিত হবেই। যার বাবা মা গরীব আর্থিক সংস্থান নেই সে অশিক্ষিত হবেই। এবার দেখা যায় গরীবদের মধ্যেও স্বপ্ন থাকে অনেক বড়লোক হওয়ার ও নামী লোক হওয়ার। যাদের মেধা নেই পড়াশুনা করার তারা আর্টস ও কমার্স নিয়ে পড়ে। আর্টসের ছেলেরা অধিকাংশই ভারতের অর্ধশিক্ষিত, বা পিছিয়ে পড়ার শ্রেণি থেকে আসে। আর্ট কলেজে আসে, ভাবে ছবি বিক্রী করে কোটিপতি হয়ে যাবে। বাস্তবে তা একেবারেই অসম্ভব। ভাগ্যে লাখে দু একজন হয়ত হয়ে যায় কিন্তু এটা তো পথ নয়।

ছবি বা যেকোন সাংস্কৃতিক কলাবিদ্যার জন্য পড়াশুনা প্রয়োজন। এর পিছনে অনেক অর্থ ব্যয় হয়। ফাঁকি দিয়ে কোন সিদ্ধিলাভ হয়না।
ধরুন একটা ছবি একজন কিনবে লাখ টাকা দিয়ে কিনবে। ১) ক্রেতা কখনো মূর্খ নয়, সে লাখটাকা খরচ করার আগে ৫ জনের পরামর্শ নেবে ও ৫ বার হিসাব করবে। ২) শিল্পীর ছবি লাখটাকা মূল্যের এমন ভাবাটা একেবারেই উচিত নয়।কোন নামী শিল্পীর ছবি কোটি টাকায়ও পাওয়া যায়না, অথচ কোন শিল্পী তার একটা প্রতিলিপি এঁকে দিলে কয়েক হাজার টাকায় ( ১ থেকে ৫হাজার টাকায়) পাওয়া যায়। আর মেসিনে প্রিন্ট নিলে আরো সুলভ। তাহলে ভাবুন, কোটি টাকা দামের ছবিটা একটাই হয়, আর তার নকল অনেক হয়। আর্ট কলেজথেকে বেরিয়ে হাজার হাজার ছেলে মেয়ের মধ্যে দু একজনই মেধাবী ও সার্থক শিল্পী হয় বাকীরা প্রতিলিপি স্রষ্টা। মূল্যহীন কেরাণীবৃত্তি করে। কেরাণী বৃত্তির মাইনে অফিসারদের মত হয়না। তারা সারাজীবন অন্ধকারেই থাকে। শিল্পী হলে এই অন্ধকার মেনে নিয়েই থাকতে হবে।

এছাড়া ভারতে মনে হয়না শিল্প সাহিত্য নিয়ে সরকারি উদ্যোগ বা বেসরকারী উদ্যোগ আগামী ৫০ বছরে দেখা যাবে। তার উপর রোবট শিল্পী অনেক ছবি সে নিজেই সৃষ্টি করে নিতে পারে। মানুষের চেয়ে রোবট অনেকবেশি সার্থক। এরপর এই যুগে ইন্টারনেট খুবই জীবন্ত। মানুষের সৃজনশীল ভাবনা চুরি হয়ে যায়। মানুষ হাতের নাগালে অনেক কিছুই পায় ফলে শিল্প সাহিত্যের বাজার দর কমে গেছে। আমেরিকার লোকেরা ঘরে বসে গরীব দেশের শ্রমিকের শ্রম কেনে। ৩০ কোটি মানুষের ৫০টি স্টেটের আমেরিকা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ধনী। কি করে? তারা চুরি করে নিজের দেশে বসে। বিশ্বের সাধারণ মানুষ চায় কিছু টাকা উদ্বৃত্ত, নিজের বাড়ী গাড়ী ও স্বাধীন যৌনসুখ। আমেরিকা তা তার কর্মীদের দিতে পারে ফলে আমেরিকার জীবন যাত্রার ধারা সবাই নকল করে। কিন্তু এটা অত্যন্ত ক্ষতিকর দিক। আমেরিকার মহিলারা – প্রায় প্রতিটি – স্বাধীন চলাফেরা করে। বহু পুরুষের সাথে তাদের বিছানা পাতা। নারীবাদের কেন্দ্রস্থল ১৯২০ থেকে। সে দেশের মানুষের আয়ের মত ভারত নয়। ৬৯% গরীব। স্বপ্ন দেখলে কিহবে, হাতের নাগালের বাইরে। ফলে, ভারতের লোকেদের নৈতিকতা নষ্ট। তারা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের চাটুকার। এ দেশ আমেরিকাকে আগাপাস্তলা অনুসরণ করে নিজের চরিত্র নষ্ট করেছে। চরিত্র নষ্ট একদিনে হয়না, চরিত্র একদিনে সংশোধনও হয়না।
ভারতে আর্ট কলেজ মানুষ গড়তে ব্যর্থ।শিল্পী তৈরী করতে ব্যর্থ। এ লজ্জা তো ভারতবাসীরই।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।