সাপ্তাহিক শিল্পকলায় শিল্পের জন্য শিল্প – লিখেছেন আলবার্ট অশোক (পর্ব – ৩৬)

‘ইজম ও শিল্প রচনার বিবর্তন’ আলোচনার উপসংহার

পরপর অনেকগুলি পর্বে আমি বোঝাবার চেষ্টা করেছি, শিল্প ও তার একটা বিশাল ইতিহাসের অস্তিত্ব।

যে কোন শিল্পই, গান, নাটক, সাহিত্য ইত্যাদি সহ ছবি ভাস্কর্য, এগুলির নির্মাতা মানব সভ্যতা। এগুলি মূলত সমাজের নানা মূল্যবোধ, আন্দোলন নির্ভরশীল, এবং সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য কাজ করে। পুকুর বা হ্রদের জলের মতো স্থির নয়। নদীর মত পলি-প্লাবন বহনকারী চলমান শক্তি। সময়ের তালে তালে সে চলে আর সময়কে চিহ্নিত করে। সমাজকে চিহ্নিত করে। এইভাবে শিল্প সাহিত্য নাটকে মানব সভ্যতার ইতিহাস লেখা হয়।

অধিকাংশ শিল্পী সাহিত্যিক নাট্যকার শিল্প সংস্কৃতির মানে বুঝেননা। নাম যশ আকাঙ্খা করে সমাজের বাহুল্যতা থেকে  অংশ ধার করে কাজ করেন। অর্থ উপায়ের চিন্তা থাকে পিছনে। যেমন ধরুন, সাহিত্যে কোন লেখকের কোন কাহিনী প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, অমনি অনেক লেখক সেই কাহিনীর অনুপ্রেরণায় একই নকশায় অনেক কাহিনী লিখে ফেলল। প্রকাশকরাও তেমন। এতে রিক্স নেই। অর্থাৎ লগ্নির টাকা ফেরত আসবেই, লাভ নাই বা হোক।  যেমন সিনেমা শিল্পে, মুম্বাই অধিকাংশ পরিচালক ও প্রযোজক সিনেমা বানায়  একই মসলায়, প্যাটার্ণে। যেন কুমোরটুলির দূর্গা প্রতিমা। একই ছাঁচে/ ছাদে দূর্গা প্রতিমা বানানো। মানে যন্ত্রের সাহায্যে কপি প্রিন্ট নয়, হাতে বানানো কপি বা নকল। আমাদের বাংলার হাজারো হাজারো কবি।  আপনি ১০০০ কবিতা সংগ্রহ করে  সমীক্ষা চালান দেখবেন, আমি তুমি সে বা যৌনতার একই প্রকাশ অধিকাংশ কবিতায়।

তো নতুনত্ব বা আন্দোলিত নির্মাণ না থাকলে সবই বেনো জলে ভেসে যাবে।
একটা স্থাপত্যশিল্প তৈরি করতে স্থপতির অনেক পড়াশুনা করতে হয়, সঠিক ভাবে বিল্ডিং্যের ওজন  বিতরণ না করতে পারলে বিশাল নির্মাণ তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে যায়। রাজমিস্ত্রী ও ঘরামী তো  লাখো লাখো, তারা তো যুগান্তকারী স্থাপত্য সৃষ্টি করেনা।যেমন এখানে দেখানো হল Anish Kapoor : Cloud Gate ।
ইজমগুলি শিল্প ও ভাস্কর্যে যুগান্তকারী সৃষ্টি করে গেছে। এগুলি চর্চা বাদে নতুন কিছু সৃষ্টির মগজ আচমকা তৈরি হয়না। ইতিহাস জানার প্রয়োজন এখানেই।
শিল্প কি?
শিল্পের কোনও সর্বজনস্বীকৃত সংজ্ঞা নেই। যদিও কোনও সৌন্দর্যের বর্ণনা বা একটি দক্ষতা নান্দনিক ফলাফল যদি উত্পন্ন করে আমরা শিল্প বলি।নীতিগত কোনও স্পষ্ট লাইন বা নিয়ম নেই। হতে পারে কোন ব্যক্তির হাতে তৈরি ভাস্কর্য বা অনেকের মিলিত তৈরি আকর্ষনীয় কাজ।
 আমরা বলতে পারি যে শিল্পের জন্য চিন্তা প্রয়োজন – একরকম সৃজনশীল প্রবণতা। এই কথা বললে একটি প্রশ্ন জাগে: কতটা চিন্তা বা চর্চা প্রয়োজন? এরকমও দেখা যায় কেউ কোনও ক্যানভাসে কিছু রঙ ছুড়ে দিলেন, কোনও শিল্পকর্ম তৈরির আশায়, তাহলে কি শিল্প হয়ে যাবে? বা হতে পারে?
এমনকি ‘সৌন্দর্য’ ধারণাটিও সুস্পষ্ট প্রশ্ন উত্থাপন করে। আমি যদি মনে করি আমার ছোট বোনের সম্পূর্ণ বিছানাটি ‘সুন্দর’ বা নান্দনিকভাবে আনন্দদায়ক কিছু হয়েছে তবে কী এটি শিল্প বলে আখ্যাত হবে? যদি তা না হয়, যদি এক কোটি লোক য়ামার ছোট বোনের অসম্পূর্ণ বিছানাকে আর্ট বলে তবে কি এটা আর্ট বা শিল্প হয়ে যাবে? আমার ছোট বোন মনে করে এটি কেবল কাপড়ের গাদা।

Tracey Emin’s “My Bed”

এস্থেটিক্সের AESTHETICS অর্থ নান্দনিকতা (বা সৌন্দর্যে) – এটি  গ্রীক শব্দ থেকে উদ্ভূত “এস্থেসিস” অর্থ “উপলব্ধি” –

দর্শন শাখার বিষয়,শিল্প ও সৌন্দর্য চর্চায়  নিবেদিত (a term derived from the Greek word ” aisthesis” meaning “perception” – is the branch of philosophy that is devoted to the study of art and beauty.)। এটি  নানা  শিল্প সম্পৃক্ত প্রশ্নের উত্তর দেবার  চেষ্টা করে যেমন প্রশ্ন: শিল্প কি? পেইন্টিংয়ের  বা ভাস্কর্যর মান কী? কোনও কাজের (শিল্প) মূল্যায়ন কীভাবে করা যায় ? শিল্পের উদ্দেশ্য কী? ইত্যাদি।

শিল্প: বহু আকারের, ধরণের ও প্রশাখার (Multiplicity of Forms, Types and Genres)

শিল্প একটি বিশ্বব্যাপী কার্যকলাপ যা বিভিন্ন শৃঙ্খলা জুড়ে রয়েছে যা বিভিন্ন শব্দ এবং বাক্যাংশের বিভিন্নতার দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যা এর বিভিন্ন রূপ বর্ণনা করার জন্য উদ্ভাবিত হয়েছে। (a global activity which encompasses a host of disciplines, as evidenced by the range of words and phrases which have been invented to describe its various forms. )  উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে: “ফাইন আর্টস”, “লিবারেল আর্টস”, “ভিজ্যুয়াল আর্টস”, “ডেকোরেটিভ আর্টস”, “অ্যাপ্লাইড আর্টস”, “ডিজাইন”, “ক্রাফটস”, “পারফর্মিং আর্টস” ইত্যাদি। (Examples of such phraseology include: “Fine Arts”, “Liberal Arts”, “Visual Arts”, “Decorative Arts”, “Applied Arts”, “Design”, “Crafts”, “Performing Arts”,)

নানা তথ্য বা বিষয় ঘেঁটে দেখা যায়,এর অনেক রকম  শ্রেণি আছে। যেমন: অঙ্কন, চিত্রকলা, ভাস্কর্য (সিরামিক ভাস্কর্য সহ), “কাচ শিল্প”, “ধাতব শিল্প”, “আলোকিত সুসমাচার পান্ডুলিপি”, “অ্যারোসোল আর্ট”, “ফাইন আর্ট ফটোগ্রাফি”, “অ্যানিমেশন” এবং আরও অনেক কিছু (drawing, painting, sculpture (inc. ceramic sculpture), “glass art”, “metal art”, “illuminated gospel manuscripts”, “aerosol art”, “fine art photography”, “animation”, )। এর  উপ-বিভাগগুলির মধ্যে রয়েছে: তেল রঙ, জলরঙ, এক্রিলিক, কালি কলম ইত্যাদির  চিত্রকর্ম; ভাস্কর্যের মধ্যে ব্রোঞ্জ, পাথর, কাঠ, চীনামাটির বাসন , এগুলি তো সামান্য কয়েকটা বললাম।

অন্যান্য উপ-শাখাগুলিতে বিভিন্ন ধরণের অন্তর্ভুক্ত আছে, যেমন: narrative, portrait, genre-works, landscape, still life

তদুপরি, বিংশ শতাব্দীতে শিল্পের সম্পূর্ণ নতুন রূপ উদ্ভূত হয়েছে, যেমন: assemblage, conceptualism, collage, earthworks, installation, graffiti, and video, এছাড়াও নানা কিছু একবিংশ শতাব্দীতে যোগ হয়েছে। যেমন সমসাময়িক বালি শিল্প (2010) sand art  আজকের শিল্প  সমস্ত ধরণের মিডিয়ায় কাজ করে । দেখতে হবে সমস্ত কিছুর সম্ভাবনা ও বর্জন গ্রহন কিভাবে করা যায়, কোনটা অধিক মূল্য বহন করে।

Sand Art

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।