১৮৯৬ সালে, মাতিশ তখন এক অনামা সাধারণ ছাত্র, ছবি আঁকা ভালবাসেন। জন রাসেল (John Russell on the island of Belle Île off the coast of Brittany) নামে এক শিল্পীর কাজ দেখতে যান। জন রাসেল ছিলেন একজন ইম্প্রেসনিস্ট। মাতিশ ইম্প্রেসনিস্টদের কাজ সরাসরি আগে দেখেননি। তার অনেক কৌতূহল। জন রাসেলের কাজ দেখে তিনি তাজ্জব হয়ে যান। একটা ঝাঁকুনি খেলেন মনে হল। দশদিন তিনি অভিভূত ঘোরে ছিলেন। তিনি স্থির করে নেন তিনি জন রাসেলের শিষ্য হবেন। ও পরের বছর থেকে জনের ছত্র হয়ে যান। আগে তিনি আর্থ কালারে কাজ করতেন। জনের কাছে দীক্ষা নেবার পর তিনি আর্থ কালার পরিত্যাগ করেন। পরবর্তী কালে তিনি বলেন,রাসেলই আমার একমাত্র শিক্ষক , তিনিই আমাকে রঙ শিখিয়েছেন। “Russell was my teacher, and Russell explained color theory to me.”
John Russell, Australia/France 1858-1930 / La Pointe de Morestil par mer calme (Calm sea at Morestil Point) 1901 / Oil on canvas / 61 x 95cm / Gift of Lady Trout 1987 / Collection: Queensland Art Gallery | Gallery of Modern Art
Henri Matisse (1869 – 1954)
রাসেল ভ্যান গঘের ঘনিষ্ট বন্ধু ছিলেন, তার কাছে ভ্যান গঘের একটা ড্রয়িং ছিল সেটি মাতিশকে দিয়ে দেন। রাসেলের ল্যান্ডস্কেপে ভ্যান গঘের আদল দেখা যায়।
(ফরাসি আধুনিক শিল্পী হেনরি ম্যাটিস Henri Matisse(৩১ ডিসেম্বর ১৮৬৯- ৩ নভেম্বর ১৯৫৪) তিনি রঙের ব্যবহার এবং তার তরল, উজ্জ্বল এবং মূল ড্রাফটসম্যানশিপের (use of color and his fluid, brilliant and original draughtsmanship) জন্য প্রশংসিত। তিনি একজন মাস্টার ড্রাফটসম্যান, প্রিন্ট মেকার এবং ভাস্কর ছিলেন, তবে প্রাথমিকভাবে চিত্রশিল্পী হিসাবে পরিচিত।)
১৯০০ আগে ১৮৭২ সাল নাগাদ ক্লদ মনেট দের গ্রুপের ইম্প্রেসনিজম Impressionism, ভ্যান গঘের সময় পোস্ট ইম্প্রেসনিজমের কাজ, ছবির আন্দোলন বা রীতি পেরিয়ে ১৯০০ র শুরুতে ফভিজম, কিউবিজম ইত্যাদিতে এলাম। এই প্রতিটি আন্দোলনে শিল্পীর ভাবনা প্রতিফলিত হয়েছে। ছবি মেধাবী ও সৃজনশীল হয়েছে।
অস্কার-ক্লোড মোনেট ( Oscar-Claude Monet) ১৪ নভেম্বর ১৮৪০ – ৫ ডিসেম্বর ১৯২৬) একজন ফরাসি চিত্রশিল্পী ছিলেন, ফরাসি ইমপ্রেশনবাদী French Impressionist চিত্রকর্মের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রকৃতির সামনে নিজের উপলব্ধি প্রকাশের আন্দোলনের দর্শন তার ছবিতে ব্যবহার করতেন।
জর্জেস ব্রাক (Georges Braque ১৩ মে ১৮৮২ – ৩১ আগস্ট ১৯৬৩) বিংশ শতাব্দীর একটি প্রধান ফরাসি চিত্রশিল্পী, কোলাজিস্ট, ড্রাফটসম্যান, প্রিন্ট মেকার এবং ভাস্কর ছিলেন। শিল্পের ইতিহাসে তাঁর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল ১৯০৫ সাল থেকে ফৌভিবাদের Fauvism সাথে তাঁর জোট, এবং কিউবিজমের বিকাশে তিনি যে ভূমিকা রেখেছিলেন
১৯০৭ সালে কিউবিস্ট ভাবনা শুরু হল। চলতে লাগল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ অতিক্রম করে। জর্জ ব্রাক (Georges Braque) ও পাবলো পিকাশো (Pablo Picasso) কিছু নতুন করতে চাইলেন।এই করতে চাওয়ার মধ্যে কেউ পটুয়া হতে চাননি। অর্থাৎ যা দেখবেন বা দেখা যায় তা করতে চাননি। তখনও এই ধরণের পঙ্গু ভাবনা ছিল, যে যা বিক্রী হবে তাই শিল্পী নাম নিয়ে আঁকবে। অনেকেই ছবি বিক্রী করে খাওয়ার জন্য মোটাদাগের ছবি আঁকতেন। কিন্তু পিকাশো আর ব্রাক ছিলেন অ্যাডভেঞ্চার প্রিয়। তারা বললেন যা উপলব্ধি করব, তাই আঁকব (what they perceived, not what they saw)।
পল সেজান (Paul Cézanne) তার ছবিতে যে রূপকল্প সৃষ্টি করেছিলেন , বিমূর্ততার মাধ্যমে, অর্থাৎ বস্তুর আসল রূপ বিকৃত করে, কিছুটা জ্যামিতিক আদলের আকৃতি, তা শিল্প প্রেমিকদের কাছে অধিক স্বাধীনতা ও আনন্দ দিয়েছিল। পিকাশো নীল, গোলাপী ও ফভ (Blue, Rose and Fauve)ধারা শেষ করে, নতুন প্যাটার্ণ , তিনি যা উপলব্ধি করেন দৃশ্যজগত থেকে তা নিয়ে ব্যস্ত রইলেন , অর্থাৎ ঘণকবাদে স্বাচ্ছন্দ্যতা ও আগ্রহ অধিক খুঁজে পান।
শিল্প সৃজনে মহিলা বা মডেলের সাথে একাত্ম হওয়া বড় প্রয়োজনীয়তা আছে। মহিলা অনুপ্রেরণার মডেল ছিল।প্রয়োজনে ভংগিমা তৈরি করে ধারণা নকল করা যেত। তখনকার দিনে আজকের মত ফটোগ্রাফ বা ল্যাপটপের বালাই ছিলনা। মহিলাদের অনায়াসে পাওয়া যেত। মহিলাদের মনে ঈর্ষা তখনও ঢুকেনি। এছাড়া পয়সা পেলে নারী পুরুষ প্রেম করতে বা সং সাজতে আপত্তি করেনা।
Pablo Picasso Les Demoiselles d’Avignon Paris, June-July 1907
আমরা দেখি ১৯০৭ সালে পিকাশো Les Demoiselles d’Avignon বেশ্যাদের নিয়ে একটি পেইন্টিং। একদিকে পেইন্টিঙয়ের মধ্যে বেশ্যাদের শরীর অন্য দিকে তাদের মুখগুলি আফ্রিকার আদিম মুখোশের ঢং, একসাথে দুটি বিষয় রাখা। এই ছবিটা তার কিউবিস্ট ধারার ছবি মনে করেননা পন্ডিতগন। এটাকে আদিমতার বাহক হিসাবেই গণ্য করেন। স্পেনের বার্সিলোনার Barcelona’s Carrer d’Avinyó এই রাস্তাটি বেশ্যাদের জন্য বিখ্যাত। পিকাশো ছবিটি অনেক বিতর্ক টানবে, বুঝেও প্রদর্শনীতে রেখেছিলেন। কারণ সাধারণ লোকে যৌনতা মাখা বেশ্যার ছবি দেখতে তখনও অনেকেই অভ্যস্ত ছিলনা। অন্যদিকে আফ্রিকার মুখোশ তখন ইউরোপে প্রচুর প্রচার পাচ্ছিল। পিকাশো ছবিটি করে,পশ্চিমী সংস্কৃতির সাথে আফ্রিকার এক দৃড় বন্ধন তৈরি করলেন। ছবিটি পিকাশো প্রদর্শনীর পর দশ বছর স্টুডিওতে ফেলে রেখেছিলেন। সে এক অন্য গল্প।