যদি আহতদের কাছে ডানা মেলি তাদের ক্ষত এসে লাগে ডানায়। গ্রাস করে নিতে চায় তাদের অর্ধদগ্ধ শরীর। ছড়িয়ে দিতে চায় ছোঁয়াচে অবসাদ এক থেকে অনেকে। পোড়া ছাইয়ের গন্ধ আচ্ছন্ন করতে থাকে ধীরে ধীরে। সবটুকু আগুন শেষ হলে দু চারটে ফুলকি জ্বলতে থাকে ছাইচাপা। আমি খুব এলোমেলো হাত চালাই। উস্কে দিতে চাই ওই দু চারটে ফুলকির আগুন আর বুলিয়ে দিই শুশ্রুষা। আগুন মানে তো জীবন, যদি আবার বেঁচে ওঠে আহতেরা!
এসবের মাঝে বাঁচিয়ে রাখি আমার ডানার পালক, পোড়া ছাইয়ের গন্ধ লাগতে দিইনা। একটু যত্নের হাত বুলিয়ে দিই অসুখের তাপে। এত তাপ! তাপ থেকেই লেগে ছিল ধ্বংসের আগুন। কিছু কিছু তাপ চুম্বকের মত টানে, কিছু কিছু স্পর্শ করলে আঁকড়ে ধরে সুযোগসন্ধানীর মত। কিছু কিছু অসুখের তাপ স্থানান্তরিত হয় আমারও হাতে । রক্তের মত বয়ে যায় ধমনী বেয়ে। মনে পড়ে এরকমই জ্বর আমারও হয়েছে কখনো কখনো। আমিও পুড়েছি কখনো তাপে, আর ছাই থেকেই নিয়েছি নবজন্ম, জ্বলতে থেকেছি আর রূপ ধরেছি – আগুনের পাখির মত। সমস্ত আগুন শুষে নিই আমার পৃথিবী থেকে, জ্বলতে থাকি নিজে, ছড়িয়ে দিই শীতলতা, মাটির গন্ধ, পথ ঘাট মাঠ, রূপকথা।
এভাবে জ্বলতে থাকলে ক্লান্তি লাগে কখনো কখনো। আমারও লোভ হয় অবসরের, অবসাদের অসুখের। তখন ছাইয়ের গন্ধ টানতে থাকে আরও কিছু দুর্বোধ্য আকর্ষণে। গলা অবধি ডুবে গেছি তখন, আর তখনই জলের ভেতর থেকে ছটফটিয়ে উঠেছে আমার ডানা। আগুন ধরিয়ে ছোঁ মেরে উড়িয়ে নিয়ে এসেছে একটা বৃহদাকায় পাখি। আবার আগুনের মত জ্বালিয়ে দিয়েছে আমায়। বলে গেছে আজীবন যেন জ্বলে যাই এভাবে, শুধু চিরতরে ছাই হওয়া মানা। কথা দিয়েছি তাকে, যা কিছু সহজ তাতে আমারও যে অনীহা।
যদি আহতদের কাছে ডানা মেলি তাদের অবসাদ এসে লাগে ডানায়, শুশ্রুষা বুলিয়ে দিই, আর ডানায় লেগে থাকা অবসাদের অক্ষর গর্ভে ধারণ করে জন্ম দিই, তখন আবার ফিরে আসে মাতৃত্ব।
হ্যাঁগো, তুমি পালক কোথায় পাও!
দুপুরবেলাতো ভাত মাখো
খাওয়ার পরে কিছুটা রাখো
রঙীন শাড়ি পর আর নির্জন ছাদে যাও।
কৌশলে খসে পড়ে তোমার আঁচল
ছড়ানো থাকে তোমার এঁঠো ভাত,
কাক এসে বসে, তখনি বুঝি সুযোগ !
তুমি ছিঁড়ে নাও পালক ?
হ্যাঁগো, তুমি তো কাজল পর চোখে
এত কালো রং পাও কি পালকে,
যাতে রক্তও লেগে থাকে !
হ্যাঁগো তোমার কাজল পরা চোখে
তাই বুঝি মৃত্যু ফুটে ওঠে!
চোখের তারায়, চোখের পলকে।
হ্যাঁগো, যদি একদিন যাও ছাদে
রাতের বেলা হলে,
শূন্য হাতে যেও, দিও না কিছু কৌশলে।
আঁচল বিছিয়ে শুয়ে থেকো,
তারাদের সাথে কথা বোলো, বোলো –
তোমার সত্যিকারের মনখারাপ।