• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক মুড়িমুড়কি -তে সুদীপ ভট্টাচার্য (পর্ব – ৪)

বল্টুদার সঙ্গে বেড়াতে যাওয়া – ৪

গাড়ি চলছে ফাঁকা রাস্তা দিয়ে। বাস পেয়াঁজের গন্ধে ভরপুর। একটা মনে রাখার মত ঘটনা ঘটে গেলো কিচ্ছুক্ষন আগে। এ বাসের প্রায় সব যাত্রীরই কয়েকবার পুরী ঘোরা। তবুও বাসে দল বেঁধে সবাই যাওয়ার আনন্দটাকে নিতে চলেছেন আরো একবার।আবার এই প্রথম পুরী তে যাচ্ছেন এমন মানুষও আছেন। আছেন নবদম্পতি।অষ্টমঙ্গলার পরের দিন চড়ে বসেছেন বাসে। কম পয়সায় মধুচন্দ্রিমা। বল্টুদাকে আলাদা করে বলে দিয়েছেন যে তারা দলের সঙ্গে সব জায়গায় বেড়াতে যাবেন না,শুধু সমুদ্র আর হোটেলেই থাকবেন তারা। বল্টুদার বোকাবোকা ভাবটা আর গেলো না। হঠাৎ প্রশ্ন জুড়ে দিলো,”এই…….কেন?
নন্দন কাননে বাঘ দেখাবো,চিল্কায় ডলফিন,কোনারকের মন্দির দেখিয়ে আবার উদয়গিরির বাঁদর।” সেই নবদম্পতির মধ্যে বরবাবাজি একটু লাজুক প্রকৃতির,মেয়েটি চালাকচতুর। মেয়েটি বল্টুদার একথা শুনে বললে……”না না,শুধু কোনারকের মন্দির দেখলেই হবে,একটু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখবো দুজনে। আপনারা চলে যাবেন,আমরা নিজেদের মত চলে যাবো হোটেলে।” এরপর আর কোনো কথা বলার থাকেনা। বল্টুদা বুঝতে পারলেন দুজনেই খুব স্থাপত্য ভালোবাসেন কিম্বা ইতিহাসের ছাত্র,ছাত্রী। গবেষনার ব্যপার স্যাপার আছে বোধহয়। তাই এ নিয়ে আর কথা বাড়ালেন না।
বাস চলতে থাকলো। বাসের একেবারে শেষে বসে আছেন অল্পবয়সী দুটি ছেলে মেয়ে,কলেজে পড়ে বোধহয়। দুজনেই আলাদা দুটো পরিবারের। আজ প্রথম আলাপ হলো ওদের। কিন্তু কি আশ্চর্য, ওদের দেখে একবারও মনে হবে না যে এই প্রথম ওদের দেখা হলো। একেবারেই জড়তা নেই। পিছনে বসার সিট নিয়ে সমাস্যা হচ্ছিলো।স্বামী,স্ত্রীর একটা ফ্যামিলির পিছনের দিকে সিট হওয়ায় তাদের সে কি চিৎকার। বল্টুদাতো রীতিমতো চিন্তায় পরলেন যে সামলাবেন কি করে এদের। সবাই যে যার সিটে বসে নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে। আওয়াজ কানে যাচ্ছে,তবুও চোখ খুলছে না। একেবারে এই আজকের সময়ের মত জনগন আর কি। নিজের ভালো হলেই হলো। বাকীরা ফালতু।
অবাক কান্ড,একদিকে সেই স্বামী,স্ত্রী চিৎকার করে যাচ্ছেন,অন্যদিকে কেউ তাদেরকে জায়গা ছাড়তে রাজী নয়। এমত অবস্থায় এগিয়ে এলো কলেজে পড়া ছেলে মেয়েটি। ওরা নিজেদের জায়গা ছেড়ে দিলে। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো বল্টুদা। রাত বাড়ছে। ঘুমোচ্ছে সবাই। বল্টুদা পিছন ফিরে দেখলেন ছেলে মেয়ে দুটো এত রাতেও নিজেরা গল্প করে যাচ্ছে।
বাসের মাঝামাঝি বাঁদিক ঘেঁষে বসেছিলেন এক কলেজের অধ্যাপক। সঙ্গে প্রায় তিন,চার জন ছাত্রছাত্রী। অধ্যাপকের কাছে এই ছাত্র ছাত্রীদের  সবাই নাকি পি এইভ ডি করছেন। বল্টুদার সাংঘাতিক কান। ঠিক বল্টুদার পিছনের সিটে বসেছেন সেই অধ্যাপক। একটা ফোন এসেছিলো রাত ১০ টার দিকে। কোন একজন ছাত্র করেছিলো অধ্যাপকের কাছে পি এইচ ডি করবেন বলে। আগে বোধহয় বিশ্ববিদ্যালয়ে এই অধ্যাপকের কাছেই পড়তেন। অধ্যাপক কোনো টাকার প্যাকেজ নিয়ে কথা বলছেন, সময়ের আগে আট লাখ,সময়ে সাত লাখ,আর সময়ের কিছুটা পরে ছ লাখ। আশ্বস্ত করছেন তাকে এই বলে যে,…..”না না তোমায় কোনো কষ্ট করতেই হবে না। বেশ কয়েকটা বিষয়ে পেপার আমার কাছেই রেডি আছে। এইতো গতমাসে একজন ছেড়ে দিলো। ওকে শুধু বাজারটা নিয়ে আসতে বলেছিলাম। কি রাগ রে বাবা,টাকাও দিবি না,আবার ফাইফরমাশও খাটবি না। কি হলো জানি না,হঠাৎ করে দিলো ওর পি এইভ ডি বন্ধ করে। কিন্তু ওর এত দিনের কাজ আর তার পেপার তো আমার কাছেই আছে,ওটা দিয়েই তোমার হয়ে যাবে। টাকা দিলে,তোমার নিয়মিত না এলেও চলবে।”
বাস হঠাৎ একটু ব্রেক কষে থেমে গেলো। সামনে বাম্পার,ড্রাইভার বুঝতে পারেননি।

(চলবে)

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।