কথা সাগরে মৎসাপুরুষ গোবিন্দ ব্যানার্জী (ধারাবাহিক ভ্রমণ কাহিনী) – তৃতীয় পর্ব

রূপকথার গাঁয়ে পাঁচদিন
চেপেচুপে ব’সে পড়লাম সিটে। বাইরের শীতলতা শরীরের উষ্ণতায় মিশে গেল কয়েক মিনিটেই। সোমনাথ উসখুস করছে। চোখের প্রশ্ন ওকে তুলে দিতেই বলল… মহিলাটিকে, “আপকো ঘরমে হামারে লিয়ে খানা হ্যায় ক্যা?” বেশ সতেজ উত্তর দিল মহিলা…”হ্যায় তো। কুছ লানা পড়েগা, ও তো মানেভঞ্জনমে মিল যায়েগা।” জিপ ছুটছে বাঁ দিকে
পাহাড়ী দেয়াল আর এ পাশের গভীর খাদ ঘেঁষে। বর্ষার পরে পরেই, গাছের সবুজে চলকে পড়ছে দুপুর পেরোনো রোদ্দুর। পথের নির্জনতার ফাঁকে ফাঁকে কিছু দোকান, কিছু মানুষের চলাচল পার হয়ে চলেছি। আর দেখছি কিছুটা আলস্যের ঢঙে। মানেভঞ্জন। সান্দাকফুর ট্রেকের প্রবেশপথ। বছর তিনেক আগেও এসেছি এখানে… সান্দাকফুর ট্রেক আর গল্পগুলো লেগে আছে এখানের বেঞ্চে। হাত তুলে সোমনাথ দেখালো সেই দোকান, সেই সীমা রেখা। যেখান থেকে শুরু হয়ে গেছে নেপাল। কিন্তু বছর কুড়ি আগের সেই মানেভঞ্জনের কিছুই খুঁজে পাচ্ছি না। সেই নির্জন গ্রাম… গোটা চার / পাঁচ মাত্র ট্রেকার্স হাট। খাদের দিকটা একদম ফাঁকা ছিল। বাঁ হাতে ওডিসি নামের আস্তানাটার কোন চিহ্নই নেই। আর একটা বৌদ্ধ মনাস্ট্রি ছিল বাঁ পাশে সেটা লুকিয়ে পড়েছে দোকানের ভীড়ে। আমি শুধু পাতা উল্টে যাই পুরোনোর ধূলো মুছে। সোমনাথ সেই মহিলাটিকে বলছে…”আধা ঘন্টা ওয়েট কিজিয়ে
ম্যাডাম, কুছ খরিদ করনা হোগা। থোরা, বাদমে যাউঙ্গা আপকে সাথ…” আমার পকেটে কাটাকুটি আর হিজিবিজি একটা লিস্ট। দ্রুত লেগে গেলাম কেনাকাটায় সেই অপাঠ্য লিস্ট মিলিয়ে।
পাহাড়ী সুন্দরী আমাদের অপেক্ষায় ব’সে না থেকে এ দোকান সে দোকানের কেনাকাটায় সাথে সাথে রয়ে গেল। আর প্রতিটা জিনিস কেনার সময়… যেমন… ম্যাগি, মুড়ি, বাদাম, চানাচুর, লজেন্স, ফ্রুট জুস, স্যুপ… ততবারই হাসছে হো হো ক’রে। মূলতঃ ওর হাসির দমকে বন্ধ করতে হ’ল আমার লিস্ট মিলিয়ে নেয়া। অতএব, আভি চলনা হ্যায়। রুকস্যাক, ন্যাপসাক উঠে গেল পিঠের পরিপাটি ব্যথার পাশে। হাতে ঝুলে গেল অতিরিক্ত ব্যাগ। এরই মধ্যে সুন্দরী মোবাইলে ডেকে নিয়েছে তার স্বামীকে। তার সাথেও কথা হয়ে গেল ওদের কাছে থাকা বিষয়ক। সেও সানন্দে আপ্যায়িত করল। ডান দিকে চেক পোস্ট। আমাদের কোন চেকিং নেই। আসলেই চেকপোস্ট বন্ধ। এই প্রায় বিকেলে এখানে কোন ট্রেকারও নেই। এটা প্রধানতঃ ওই সান্দাকফুর ট্রেকারদের জন্যে। আমরা চলেছি দুই
পাহাড়ী মানব মানবীর সাথে অচিন গাঁয়ে… সামনে পাঁচ কিলোমিটারের হাঁটা পথ। সামনে সেই বিরাট ধ্বস… আর অজানাকে দেখার ধুকপুকে চোখ।
ছোটোখাটো চেহারার অত্যন্ত ছটফটে সেই সুন্দরী আমার হাত থেকে অতিরিক্ত ব্যাগের বোঝাটা নিয়ে নিল। পোশাকের রঙে উড়ন্ত মনের ছাপ। আর তার ধরনে উচ্ছল নদীপ্রবাহ। চেক পোস্ট পার হতেই ডান দিকে নেমে যাওয়া পথের দিকে ইশারা ক’রে বলল… “ইয়ে হ্যায় ‘দশমাইল’ যানে কা বাইপাস রোড। রোড আচ্ছা নেহি, ইসি লিয়ে ধোত্রে যানে কা গাড়ি থোরা কমি হ্যায়।” সামনে পথটা বাঁক নিতেই অদৃশ্য সব। অতলান্ত খাদে ভেঙে পড়েছে গোটা রাস্তাটাই। একট বিকট হাঁ ক’রে আছে, ছিল-পথের আর্তনাদ। তবু পারাপার করতেই হবে, এপার ওপার সবার।
ভাঙনের অনেকটা উপর দিয়ে ধ্বসা মাটি আর পাথরের বোল্ডার ডিঙিয়ে, বেশ একটা দিগ্বিজয় সূচক জিমন্যাস্টিক করতে করতে পেরিয়ে গেলাম পরপারে। অপরপারে…
ডানদিকে খাদের ধার ঘেঁষে কয়েকটা ভাড়ার গাড়ি পর্যটকমুখী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের আয়েসী ভঙ্গীতে পর্যটকহীনতার উদাসীনতা। সোমনাথ একবার শেষ চেষ্টা করতে এগিয়ে গেল এক গাড়ি ড্রাইভারের কাছে। বিমর্ষ মুখ নিয়ে এমন ফিরে এলো যে… প্রশ্নই করতে পারলাম না। মিনমিন ক’রে ওই জানালো…”ধোত্রের শেয়ার গাড়ি নেই, রিজার্ভ করতে হবে, কুড়ি কিলোমিটার এই পথের ভাড়া বার’শ টাকা।” ওকে এবং নিজেকেও আস্বস্ত করতে বললাম… “চলো.. অনির্দিষ্টের দিকেই যাই।”
সুন্দরীর বর… বছর তিরিশের বেশ চাঙ্গা শরীর। সোমনাথের পিঠ থেকে ঢাউস রুকস্যাকটা নিয়ে বলছে…”আইয়ে স্যার, গাড়ি হ্যায় মেরা। চলিয়ে হামারা গাঁওমে। আনন্দ আ যায়েগা।” পিছনের সিটে বসলাম ইচ্ছে অনিচ্ছের টানাটানি ছিঁড়ে। সামনের সিট থেকে সুন্দরী বলছে… “থোরা সা। পাঁচ কিলোমিটার দূরী…” এপথ চলে গেছে ধোত্রে
হয়ে রিম্বিক। তারপর সেই শ্রীখোলা পর্যন্ত। একটু আড়চোখে সোমনাথের দিকে তাকালাম। ও বেশ আরাম ক’রে চোখ বুজে ব’সে আছে। বুঝতেই তো পারছি, ধোত্রের অত আদরনীয় প্ল্যানটা ফস্কে গেল নাগালের মুখোমুখি এসেও। মিনিট কুড়ি হয়েছে, গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ল পথের পাশে। উচ্ছল সুন্দরীর উল্লসিত শরীর। লাফিয়ে নেমে পড়ল গাড়ি থেকে। তারপর একটু ঝুঁকে দু’হাত ছড়িয়ে সারা মুখে আলোকিত হাসি ভরিয়ে বলছে…”আ গয়ে হামারা
গাঁও গুরদুং। আইয়ে আইয়ে… সুস্বাগতম্…”
ব্যাগপত্র নামাতেই চোখে পড়ল বড় সাইনবোর্ড। সোমনাথ প্রায় হাতজোড় ক’রে বোর্ডের ঠিক সামনে আমায় দাঁড় করিয়ে মোবাইল উঁচিয়ে গোটাকতক ছবি নিয়ে নিল। বোর্ডের উপরে লেখা “গুরদুং”… মানে…! শ্রীখোলার উপরে সেই ছোট্ট গ্রামটা…!” সোমনাথও বোবার মত চেয়ে আছে বোর্ডের দিকে। ব্যাপারটা বুঝে নিল সুন্দরীর বর।
বলল… “এ হামারা গুরদুং গাঁও হ্যায়। ও যো হ্যায় শিরিখোলাকা বগল মে… ও আলগ হ্যায়। ব্যস্… আইয়ে… থোরা উপরমে যানা পড়েগা…”
পাহাড়ী পথ উঠে গেছে উপরে। পাথরের পাশে ছোট বড় পাথর সাজিয়ে বালি সিমেন্টের মোটা পলেস্তারা তার ত্বকে। ফুট চারেক চওরা। আর সে পথের শরীরজুড়ে সিঁড়ির সারি। আরো পাশে ছবি ছবি বাড়ি। ছোট্ট অথচ সুন্দর। ঘরের সামনে এক বয়স্ক মানুষ রোদ উবে যাওয়া অবসরে পা দিয়ে শুকোতে দেয়া ঘাস জড়ো ক’রে তুলছে। উঠোনের চৌহদ্দিকে বেড়া দিয়ে না বেঁধে রঙিন ফুলের ঝাড়ে সাজিয়ে দিয়েছে। সে ফুলের কত রং। পথের পাশে
ঘরের লাগোয়া উঁচু একটা থামে পাথরে চাপা দেয়া সরু নল বেয়ে ঝ’রে পড়ছে অনেক উঁচু থেকে বয়ে আসা ঝর্ণার জল। সরু সরু নালা দিয়ে সেই জল পৌঁছে যাচ্ছে চারিপাশে ফুলগাছের গোড়ায়। এই যে দৃশ্য… একটা ফ্রেমে ধরা হয়ে গেল মস্তিষ্কের সংগ্রহশালায়। সামনে চলেছে সুন্দরী ক্ষীণাঙ্গী। না, তার বর এলো না আমাদের সাথে। নীচের রাস্তায় তার গাড়ি ঠিকঠাক স্ট্যাড ক’রে রাখার জন্যে রয়ে গেছে। সোমনাথ পিছনে ধীরে ধীরে সিঁড়ির চড়াই
ভাঙছে, আর দু’পাশে যতটা দেখা যায়…
প্রথম দিন পাহাড়ে চড়াই পথে হাঁটতে বেশ দম কমে যায় বুকের তাকতে। পা ভারি হয়ে যায়। মনে হয়, শরীরে শক্তি বুঝি কিস্স্যু নেই। তাই খুব ধীরে চলেছি। আরো একটা কারণ, এই ছড়ানো ছিটানো নতুন গাঁওখানাকে দেখা। দু’পাশের সজ্জা আর সৌন্দর্যকে প্রাণ ভ’রে আস্বাদন করা। সুন্দরী অনেকটা উপরে উঠে দাঁড়িয়ে আছে… তাকাতেই মুখ ভরিয়ে তুলছে হাসিতে। “অর থোরা সা, আইয়ে আরামসে…” বাঁধানো পথ কোথাও বেশ ভেঙে
গেছে, বড় বড় পাথরের বোল্ডারে শ্যাওলা জমে পিচ্ছিল হয়ে আছে। বাঁ’হাতে একটা ঘরের সামনে অনেকটা সবুজ ঘাসে মোড়া উঠোন। সেখানে গাঢ় সবুজ রঙা একটা ডোম টেন্ট (পাহাড়ী ভাষায়… কছুয়া টাইপ টেন্ট) শোভা পাচ্ছে। সোমনাথ ওই টেন্টের দিকে জুলজুল ক’রে চেয়ে আছে। অনুচ্চ স্বরে প্রায় আপনমনে বলছে…”মাশাই… এখানে একদিন টেন্টে থেকে গেলেই তো হয়…”
ডানদিকটা বাগান ধরনের। মাচায় ঝুলছে স্কোয়াশ। অনেক অনেক। বেশ বড় মাপের গয়ার পেয়ারার
মত গড়ন। লতানে গাছের পাতা অনেকটা শশা পাতার মত। স্কোয়াশ দেখেই সোমনাথ তার গভীর ইচ্ছেটাকে সজোরে প্রকাশ করল…”মাশাই, আজ মোমো খেতে হবে। এখানেই তো আসল মোমোর স্বাদ… দেখুননা ব’লে…” আমাকে বলতে হ’ল না। সুন্দরী বুঝে নিয়েছে ব্যাপারটা। হাঃ হাঃ ক’রে তার সারা শরীরে হাসির ঢেউ তুলে বলল… “ঠিক হ্যায়, আজ আপ কে লিয়ে মোমো বনাউঙ্গী। জিতনা খা সাকেঙ্গে…” বলেই আবার হাসির তরঙ্গে…
উঠছি তো উঠছিই। ডান দিকে একটা অপূর্ব ঘর। পরিচ্ছন্ন উঠোন। কাঠের বেড়া দেয়া দেয়াল, রঙে রঙে রঙিন তার বাহার। দরোজার বাইরে ঝুলছে শৌখিন মোটা পর্দা। সুন্দরীর হাসি শুনে সেই পর্দা সরিয়ে বেরিয়ে এলো বছর কুড়ির এক পাহাড়ী রূপসী। সুন্দরীকে উদ্দেশ্য ক’রে সে বলছে…
“হাই প্রিয়া, তেরে ঘর মে তো মেহমান আ গয়ে…” সেই হাসি। এক রকম। উথলে উঠছে শরীরময়।
আমাদের প্রিয়া সুন্দরী আলাপ করাল…” এ হ্যায় মেরা দোস্ত রঞ্জিতা। বহোত আচ্ছা লেড়কি হ্যায়।”
বলেই দুই সখী হাসিতে হাসিতে মাখামাখি…
বিকেলবেলাটা আরো উপর থেকে, ঐ দূর পাহাড়ে পাইনের গন সবুজ অন্ধকারকে ছুঁয়ে দিয়ে আলতো আলোর নরম রহস্যময়তা, আর শীতের কনকনে ঠাসা মুঠো নিয়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে এই গুরদুং গাঁওয়ের উন্মুক্ত শরীরে। চারিপাশের গাঢ় সবুজে, এই চড়াই পথের এবড়োখেবড়ো পাথরে তার আভা পিছলে পড়ছে, ঝিলকিয়ে উঠছে। দুই সখী সুন্দরী প্রিয়া আর রূপসী রঞ্জিতা একটু উপরে উঠে চলেছে… তারা গলা জড়িয়ে একে অন্যের শরীরে বিলিয়ে
দিচ্ছে আনন্দিত উচ্ছ্বাস। সোমনাথ একটু পিছিয়ে পড়েছে। পিছনে তাকালাম, নীচের বাঁকটার পরেও তাকে দেখা যাচ্ছে না। এই যে গড়িয়ে যাওয়া পথ, পাশে পাশে অজস্র ফুলের গাছ, সবুজের বিশুদ্ধ গন্ধ… সবটা মিলিয়ে গুরদুং হয়ে উঠেছে স্বপ্নময় রূপকথার গাঁ। আমার চোখের মণি চকচক করছে। ইচ্ছে হচ্ছে চরম উল্লাসে চীৎকার ক’রে উঠি। হ্যাঁ, চীৎকার করলাম… আর তার সাথে মিশিয়ে দিলাম “সো ম না থ…” অনেকটা নিচু থেকে ওর সানন্দ
প্রত্যুত্তর ভেসে এলো…”মাশা ই… এই তো….”
হঠাৎ সেই ম্লান আলোর নরম শরীর উদ্ভাসিত হয়ে উঠল। ডান দিকে অনেকটা জমি… কচিকচি ঘাস আর সবজি গাছে ভ’রে আছে লোভনীয় আহ্বান। একটু যেন পথবিশ্রামের ইশারা তার সবটা জুড়ে। সেখানে উন্মুক্ত উল্লাসে খেলে বেড়াচ্ছে এক জোড়া সাদা খরগোশ। তাদের সাদা শরীর থেকে যেআলো উপচে পড়ছে… তার ছটা লেগেছে বাতাসের গায়। তার আনন্দ এসে লুটিয়ে পড়েছে পথের পদক্ষেপে। তার মুগ্ধ আবেশ লেগেছে আমাদের চোখে। কেবল সেদিকে চেয়েই আছি নিশ্চল অবিভূত বিস্ময়ে। অন্য কোথাও, কতই তো খরগোশ দেখেছি… কিন্তু এই যে বিকেল, এই যে ক্লান্ত পায়ে ধীরে ধীরে উঠে চলা, এই যে দারুণ এক আবছায়াময় রহস্যময়তা, তার ভিতরে দুই অপ্সরা, আর আমাদের দু’জনের নতুন গন্ধ… দুরন্ত সময়ের একটা প্রতিবিম্বের মত স্থির হ’য়ে র’য়ে গেল।
সোমনাথ পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। ওর দ্রুত নিঃশ্বাস পড়ছে আমার কাঁধের পাশে। আর মোবাইলে উঠে চলেছে ফ্রেমের পর ফ্রেম। সুন্দরীর চোখে মুখে কী এক তৃপ্তি খেলে বেড়াচ্ছে। ও তাকালো আমাদের দিকে। হালকা খুশী উড়ছে ভিজে চোখের তারায়। খুব আলতো স্বরে বলছে… “আভি থোরা চড়াই হ্যায়, ইতনা নেহি… থোরা সা… আইয়ে।”
দুই সখীর বিমুগ্ধ উল্লাস আর অস্পষ্ট ভাষা ও বাক্য বিনিময়ের ভিতর হাসির ঢেউ উপচে পড়ছে পথে। সোমনাথ উঁচু পথের দিকে চেয়ে ভাবছে, এ পথের শেষ কোথায়… রূপসী পিছন ফিরে যেন প’ড়ে নিল সেই অবরুদ্ধ অনুসন্ধান। বেশ খানিকটা উপরে ডান দিকে উজ্জ্বল রঙের এক ঘরের দিকে ইশারা ক’রে বলছে… “ও হ্যায় আপকা ঘর… ইতনা দূরী নেহি হ্যায়…” তাকিয়ে আছি আর ভাবছি, ওখানে আমাদের বিশ্রাম অপেক্ষা করছে। কিন্তু সে যে এখনও অনেকটা পথ। করুণ হয়ে উঠছে বুকের ভিতরটা। সেই উপরে… পাহাড়ের প্রায় চূড়ার, ছুঁয়ে আছে রঙের নিশান। তারও উপরে ঘন পাইনের বন সারিসারি প্রহরীর মত দাঁড়িয়ে আছে প্রগাঢ় নীল আকাশটাকে সামলে। সেইখানে ছোট বিন্দুর মত এ গাঁওয়ের শেষে আরো একটা বাড়ি দেখা যাচ্ছে। অথবা ঐ বাড়িটাই গুরদুঙের শেষ সীমানা…
বেশ, চলো… চলতে রহো… সুন্দরী প্রিয়া আর রূপসী রঞ্জিতা অনর্গল কথা বলছে আর ঝমঝমিয়ে হাসছে। হাসতে হাসতেই ব’সে পড়ল পথের সিঁড়িতে। আমারা ওদের পাশ দিয়ে উপরের পথে এগিয়ে চলেছি। নির্দিষ্ট বাড়িটা
দেখছি চোখ তুলে, আর দূরত্ব মাপছি পদক্ষেপের। কিছুটা ওঠার পর বাঁ’দিকে সবুজ উঠোন, মূল পথ উঠে গেছে আরো উপরে। মনে হ’ল, ঐ পথে নয়, এই উঠোনের উপর দিয়েই যেতে হবে আমাদের। নীচের পথে তাকালাম। প্রিয়া আর রঞ্জিতাকে চাই, কোন্ পথে যাবো এখন…
সোমনাথ তো ছবি তুলছে পথ চিহ্নিতকরণ ছেড়ে। আমি উসখুস করছি। অধৈর্য্য হবার আগেই অবশ্য এসে পড়ল ওরা। হাসতে হাসতে হাত তুলে আমার ঐ সন্দেহজনক উঠোনপথটাকেই নির্দেশ করল। ছটফটে শিশুর মত একটা উদ্বেলিত আনন্দ বুকের মধ্যে থমথমিয়ে উঠছে। এত কাছে এসে পড়েছি… ঠিক তখনই বিদ্যুৎ চমকের মত চোখের সামনে ঝলমলিয়ে উঠল একটা ছবি। রঙিন একটা বাড়ির একটা সজ্জিত উঠোনের, একটা পরিপাটি স্বপ্নের
অপরূপ আলপণা…
ক্রমশ