T3 নববর্ষ সংখ্যায় অঞ্জনা চট্টোপাধ্যায়

শুভ নববর্ষ
“আরে বাবলা’দা তুমি এখানে?”
অবাক চোখে সামনে দাঁড়ানো মাঝবয়সী মহিলাটিকে আপাদমস্তক জরিপ করে নিল ষাটোর্দ্ধ সমীরণ ওরফে বাবলা’দা। না, একেবারেই চেনাজানা লাগছে না এই সম্ভ্রান্ত মহিলাটিকে।
“আমাকে চিনতে পারলে না? আমি তুলি।“
সমীরণ আরও একবার আপাদমস্তক জরিপ করল ফর্সা, গোলগাল, পরিপাটি করে তাঁতের শাড়ি পরা মহিলাটিকে। এবার মনে পড়েছে! সব মনে পড়েছে এবার।
বুকের ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল সমীরণের।
“আরে তুলি! তুই এখানে! তোর তো মুর্শিদাবাদে বিয়ে হয়েছিল।“
“আর বোলো না! মেয়ের বাড়িতে এসেছি, নাতনিকে পাহারা দিতে। মেয়ে এখন অফিসের কাজে সিঙ্গাপুর গেছে। জামাই কি আর একা হাতে সংসার সামলাতে পারে! তাই এখানে এসে রয়েছি।“ তারপর একটু দম নিয়ে জিজ্ঞেস করল “তুমি এখানে কি করছ বাবলা’দা?”
“বিয়ে-থা করিনি। ভাইপোর কাছেই থাকি এখন।“
আজ পয়লা বৈশাখ। পাশের পার্কে প্যান্ডেল হয়ে গিয়েছে। সন্ধ্যেবেলায় ছোট্ট করে একটা অনুষ্ঠান হবে। পাড়ার সবাই অংশগ্রহণ করবে। ছোটবেলায় ওদের পাড়ায় ফাংশান হলেই তুলি গান গাইত আর সমীরণ তবলা বাজাতো। খুব ভালো জুটি ছিল ওদের। গান গাইতে গাইতে তুলির কোথাও তাল কেটে গেলে সমীরণ ঠিক সামাল দিয়ে দিত।
পার্কের প্যান্ডেলটার দিকে তাকিয়ে মাঝবয়সী মহিলাকন্ঠ বলে উঠল “বাবলা‘দা আজ নববর্ষের ফাংশানে আমি গান গাইছি। তুমি আমার সাথে তবলা বাজাবে তো?”
সমীরণ দেখল এতো বছর পরেও তুলির চোখে সেই একই ভরসা। কোথাও তাল কেটে গেলে ওর বাবলা’দা ঠিক সামাল দিয়ে দেবে।
হাসিমুখে মাথাটা একদিকে কাত করল সমীরণ। আজকের দিনটা বড়ই আনন্দের। কারন আজ শুধু পয়লা বৈশাখ নয়। আজ নববর্ষ। শুভ নববর্ষ।