T3 || শক্তি চট্টোপাধ্যায় || স্মরণে নীলম সামন্ত

শক্তি-মহাশক্তি

মৃত মানুষের হাতেও আয়ুরেখা থাকে, সেই আয়ুরেখার পথ কখন যেন নিজের মত সমুদ্র হয়ে যায়। আমরা লবণাক্ত হতে চাই কিংবা না চাই সমুদ্রে পা ডোবাতেই হয় সমুদ্রে স্নান করতেই হয়।

‘ভালোবাসা পেলে সব লন্ডভন্ড করে চলে যাব’ –

সমুদ্র স্নানের পর হয়তো এভাবেই চলে যাওয়ার কথা বলা যায়। কিন্তু কোথায় যাব? এই লন্ডভন্ডের ভেতর দ্রাক্ষালতা বেড়ে ওঠে, মনসংযোগ করতে জবা ফুলের জোগাড় করি। আজ শক্তি নেই আজও শক্তির জন্মদিন। বয়স বেড়ে যায় গাছের মতো, পাথরের মতো। বয়সের সিঁড়িতে পা দিয়ে সে আরো খানিকটা বালক হয়ে যায়। সে যে রূপচাঁদ পক্ষী। মৃত্যুর পরেও হেটে যেতে চেয়েছিলেন। হেঁটে চলেছেন আদি অনন্ত জুড়ে। ইজমের উপর পা রেখে পাথর ভাঙতে ভাঙতে।

প্রথা ভাঙাও তো পাথর ভাঙ্গা। জীবনানন্দের সূর্যোদয়ের পর এ যেন আরও এক সূর্য। দাউ দাউ করে জ্বলছেন কোনদিন কফিহাউসে, কোনদিন রাস্তায়, চিরদিন শব্দে। এই তো চেয়েছিলেন।
‘চতুর্দোলা নিয়ে যম/ অপমান লাগে/… মৃত্যুর পরেও যেন হেঁটে যেতে পারি।’

মৃত্যুর পর হেঁটে যাওয়া পা দুটোয় আজও শ্যাওলা জমেনি। অথচ কত বৃষ্টি পড়ল, কত চশমা ভিজে গেল। হেমন্ত আসে হেমন্ত ফিরে যায়। কাশফুলের হাত ধরে অলক্ষ্য শুকিয়ে ঝরে পড়ে। শান্তিনিকেতনে বাড়ি গজায়। পুরনো বাড়ি হেরিটেজ হয় যায়৷ শক্তি হেরিটেজ হয় না৷ শক্তি পুরনো হয়না৷

এই তো দু’দিন আগে নন্দনে গিয়ে দেখলাম বিশালাকৃতির শক্তি, ঝকঝকে সাদাকালো মুখ নিয়ে আমাদের দেখছেন৷ মুখের সামনে দিয়ে মেজর কবি, জুনিয়র কবি হেঁটে গেলেন, কফি, আদা চা সাথে গোল্ড ফ্লেক। তিনি সবই দেখছেন। তাঁকে কে দেখছে? এতো আলোর মাঝে সব ঝলসে যায়, জন্মদিনের কবিতা পাঠ হয়ে যায়, ওয়েবজিনের নতুন ইস্যু বেরয়৷ তাঁকে কেউ জিজ্ঞেস করে না শক্তি আপনি আছেন কেমন? এই যে দীর্ঘদিন শব্দের খেলায় নীরব আবার কি ইজম ভাঙার কথা ভাঁজছেন ভেতর ভেতর? আপনার ক্ষিদে পায় না? এই যে জন্মদিনের এতো আড়ম্বর আপনি আসবেন? অন্তত একটা নতুন কবিতা শুনিয়ে যান যেখানে লেখা থাকবে আমি ছুটছি, মৃত্যুর এতো বছর পরেও ছুটছি। আমার জন্মদিন বাড়ছে। আমি বালক হচ্ছি আলোর গতিতে।

ঠিক যেভাবে ঝাঁজিয়ে বলেছিলেন “যেতে পারি কিন্তু কেন যাব?”

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।