সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব – ৩৯)

সুন্দরী মাকড়সা
— মানেটা ঠিক বুঝলাম না, একটু বুঝিয়ে বলবেন প্লিজ?
— কোন মানেটা?
— ওই যে, আপনি থানায় না কোথায় যেন যেতে বললেন।
— বুঝলেন না, তাই না? মানে বুঝিয়ে বলতে হবে?
— অফ্ কোর্স। আমি দেশের একজন প্রথম শ্রেণীর নাগরিক। তাছাড়া, আপনি যে ঠিক কে সেটাও আমার কাছে ক্লিয়ার নয়, আমাকে থানায় যেতে বলার মতো এক্তিয়ার কি আপনার আদৌ আছে কিনা, সেটাও তো..
স্নেহা মনে মনে প্রমাদ গুনলো। সত্যিই তো, ভদ্রলোকের কথাগুলোকে ও কীভাবে কাটবে? হঠাৎ করে ওর মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। ও হাতের পার্সটার মধ্যে থাকা আই কার্ডটাকে ব্যবহার করবে বলে সিদ্ধান্ত নিলো।
— যদিও আমার পরিচয় আপনাকে দেখাতে আমি বাধ্য নই, ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট এ বিষয়ে —
কথা বলতে বলতে স্নেহা গম্ভীরমুখে পার্সটাকে সামান্য খুলে ভেতরে থাকা ওদের কোম্পানির আই কার্ডটার একটা কোণা তুলে আবার সাথেসাথেই সেটাকে ভেতরে ঢুকিয়ে রাখলো।
— আশাকরি আমাদের ইনভেস্টিগেশনে আপনি আমাদের হেল্প করবেন কারণ সেক্ষেত্রে আপনার স্বার্থও জড়িয়ে আছে।
এইবারে ভদ্রলোক যেন সামান্য নরম হলেন।
— কিন্তু আমি তো –
— কিছু জানেন না, রাইট?
স্নেহা ধীরেধীরে হাঁটতে শুরু করলো। মনে মনে তাড়াহুড়ো করে ফেলার জন্য নিজেকেই নিজে গালাগাল দিলো স্নেহা।
— তাহলে আপনার কাছেই কি ওর দলিলগুলো আছে? আপনি কি জানেন যে —
— না ইন্সপেক্টর বিশ্বাস করুন আমার কাছে ওর কোনো কাগজপত্র নেই। আমার জামাইবাবু আর ওর প্রেমিকা মিলে..
— আপনার দিদিকে যে ওরা সরিয়ে দিয়েছে সেটা আপনি কবে আর কীভাবে জানলেন?
— এটা মাস দেড়েক আগের ঘটনা। দিদি আমার সাথে কথা বলছিলেন। যেটা বুঝলাম, আমার সাথে কথা বলার সময়ই জামাইবাবু ঘরে ঢুকলেন। চেঁচিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন কার সাথে কথা বলছো? দিদি উত্তর করলেন ভাইয়ের সাথে। — সেই লোচ্চা ছেলেটা? যে বিয়ে করার আগেই বাবা হয়ে গেছে? — তুমি চুপ করো। কাকে লোচ্চা বলছো তুমি? আগে ওর মতো সৎ ও শিক্ষিত হও। ওদের প্রেম ছিলো, ঘটনাটা ঘটে গেছে, তখন তুমিও তো ওকে পরামর্শ দিয়েছিলে এবররশন করিয়ে নেওয়ার জন্য, ও সেটা করেনি, ওই অবস্থায় বিয়ে করে ঘরে বৌ করে নিয়ে এসেছে সামান্তাকে। — হুঁ, থাক আর গলাবাজি করতে হবে না। বিয়ে না করে উপায় ছিলো কিছু? অফিসে সবাই জেনে গেছিলো ঘটনাটা। মুখে চুনকালি পড়ে গেছিলো ওদের।
— ফোনটা অন করাই ছিলো বুঝি? নইলে এসব কথাবার্তা আপনি শুনলেন কীভাবে?
—- আজ্ঞে হ্যাঁ, ইন্সপেক্টর। আমি ওদের সমস্ত কথাবার্তাই রেকর্ড করে রেখেছি।
— ওয়াও —
রাস্তাতেই পারলে একপাক নেচে নেয় স্নেহা। ভদ্রলোক যে ওদের কাজে সহায়ক হবেন সেটা ও বুঝেছিলো, কিন্তু তাই বলে এতোটা আশা করেনি।
— তারপর — তারপর কী হলো মিষ্টার —
— অভিমন্যু ব্যানার্জী। হ্যাঁ, ওটা আমার নাম। আমার দিদি ইন্টারকাস্ট বিয়ে করেছিলেন বলে বিয়ের পর দত্ত হয়েছিলেন।
— তারপর? তারপর কী হলো মিষ্টার ব্যানার্জী?
ক্রমশ