T3 || লক্ষ্মী পুজো || সংখ্যায় সুজাতা দাস

কোজাগরী

প্রকৃতি তিন আধারে বিভক্ত হলেন, এক আধার হলেন শক্তি এক আধার জ্ঞান বা মোক্ষ আর এক আধার হলেন অর্থ যশ,
শক্তি রূপে মা মহামায়া আদিশক্তি শিবপত্নী, জ্ঞান রূপে মা সরস্বতী ব্রহ্মাপত্নী,
আর অর্থ যশ রূপে মা লক্ষ্মী নারায়ণ পত্নী।

এই মা লক্ষ্মীর বাহন হলেন পেঁচা তিনি শুভর প্রতীক হিসেবে সঙ্গী হলেন যশ অর্থের দেবীর,
ইনি আঁধারে আলো দেখান মায়ের ছায়াসঙ্গী হয়ে,অনাথের নাথ হয়ে পথ দেখান দুঃখিজনে।
কোজাগরী অর্থাৎ “কে জাগো এই রাতে”—
কথিত আছে এই কোজাগরী পূর্ণিমার দিনে মা লক্ষ্মী তার সঙ্গী পেঁচককে সাথে নিয়ে অনেক রাতে গৃহস্থের দরজায় কড়া নাড়েন এই বলে কে জেগে আছো।

এখানে একটা ছোট্ট গল্প বলি যদিও পুরোটাই সবার জানা শোনা,
এক গ্রামে খুব ভক্তিমতি মহিলা বাস করতেন, তিনি সকলের কাছে শুনেছিলেন মালক্ষ্মী ভীষণ চঞ্চলা,
তিনি মনে মনে ঠিক করলেন মা লক্ষ্মীকে বেঁধে রাখবেন তার এই ঘরে।

সেই মতো এই কোজাগরী পূর্ণিমার রাতে জেগে বসে রইলেন মায়ের আসার অপেক্ষায়,
একসময় দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ পেলেন দেখলেন এক স্ত্রীলোক দাঁড়িয়ে আছেন দরজায়—-
তিনি এতটাই সাত্ত্বিক ছিলেন যে সাধারণ বেশে থাকা মাতা লক্ষ্মী ঠাকরুনকে চিনতে তার এতটুকুও অসুবিধা হয়নি,
তাই‌ সেই মহিলাকে ঘরে এনে বসিয়ে জল মিষ্টি দিয়ে বললেন মা আপনি এটুকু খান আর কথাদিন আমি না ফেরা পর্যন্ত আপনি এই ঘর ছেড়ে কোথাও যাবেন না।

তারপর তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে বাড়ির মানুষকে ঐ দরজা কখনও যেন না খোলেন এই কথা বলে চলে গেলেন মা গঙ্গার স্মরণে,
মা লক্ষ্মীও দেওয়া কথা রাখতে বাঁধা পড়লেন সেই গৃহে—
আসলে এই সময় কৃষকের জমিতে সোনার ফসলে ভরে ওঠে যার নাম ধান,
এই ধানকেই মা লক্ষ্মী রূপে পুজো করা হয়, এই লক্ষ্মী পূজা বৈভবপ্রাপ্তির জন্য করা হয় দুর্গা পূজোর পরের পূর্ণিমাতে যার না কোজাগরী।

এই পূজো কেউ মূর্তি দিয়ে কেউ ধান মাপার সেড় দিয়ে কেউ আবার সরাতে পুজো করেন,
অনেকে কালীপূজার দিনে অলক্ষ্মী তাড়িয়ে লক্ষ্মী ঘরে নেন, পৌষে ভাদ্রে ও চৈত্রে যখন নতুন ধান ওঠে সেই সময় ও লক্ষ্মীপুজো করে অনেকে এর নাম ধান্যলক্ষ্মী পুজা।।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।