T3 || আমার উমা || বিশেষ সংখ্যায় উত্তম বনিক

ছেলেবেলার পুজো
ছোটো বেলাতে পুজোর সময় এক টাকার জন্যে মায়ের কাছে কতো বায়না করেছি তার কোনো ঠিক নেই। জামা তো দুর তখন, যখন দুবার খাবার পাওয়ারও নিশ্চয়তা ছিলনা… অভাবের সংসারে ওই এক টাকার মূল্য যে কতটা ছিল তার ধারনা তখন আমার ছিলোনা। শত অভাবেও মা তখন চেষ্টা করতেন ছেলের বায়না পূরণ করার… অনেক বায়না রাগ অভিমানের পালা শেষে পয়সা পেয়ে ভুবন জয় করে নাচতে নাচতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতাম… কিন্তু আমার আব্দার মেটানোর পরে পরিবারের বাজেটে কতটা প্রভাব পড়তো তা শুধু মাই জানত… ত্রিশ বছর আগে এক টাকার মূল্য কতটা ছিল তা হয়তো এখন বোঝা কঠিনতম কাজগুলোর মধ্যে একটি… যাইহোক সময়ের সাথে সাথে সবাই পরিবর্তিত হয় তার সাথে আমরাও… প্রতিবার যেমন দুর্গাপুজো হয় এবারেও তা আসন্ন, মায়ের জীবনের লড়াই ও তার আশীর্বাদ এ আজ আমি প্রতিষ্ঠিত। তাই যতোটা পারি তাঁকে খুশি রাখার চেষ্টা করি…
প্রকৃতির নিয়মেই মা আজ বৃদ্ধা। নানা রকম রোগ বাসা বেঁধেছে শরীরে, সেই চুড়ি পড়া হাত গুলো শুকিয়ে আজ জীর্ণ…
কাল হঠাৎ করে মায়ের ঘরে মা ডেকে পাঠাল, পাশে বসিয়ে বললেন… “কিরে বাবা এখন তো বড় হয়ে গেছিস, নিজেই রোজগার করছিস…” উদাস গলায় বললেন, “তোর কি ছোটবেলার পুজোর কথা কিছু কি মনে পড়ে… সেই এক টাকার জন্যে…” তখন আমি নির্বাক শ্রোতা হয়ে মায়ের মুখে আমার ছেলেবেলার কথা শুনে এক অন্য জগতে বিচরণ করছি… তারপর হঠাৎ মা তার একটি পুরনো কাপড় থেকে কিছু একটা বের করে বললেন, “বাবা আমাকে এটা একটু খুলে দিবি…” খুলে দিয়ে দেখি, তার মধ্যে কিছু খুচরো পয়সা ও কিছু দশ, কুড়ি, পঞ্চাশ টাকার নোট। মা বললেন, “গুনে দেখ তো…” গুনে বললাম, “মা এখানে পাঁচ শো বারো টাকা আছে…” এবার আমার হাতে পাঁচশো টাকা দিয়ে বললেন, “বাবা এই টাকাটা দিয়ে তোর ছেলেকে একটা জামা কিনে দিবি, আর এই বারো টাকা দিয়ে মা দুর্গার প্রণামিতে দিয়ে দিবি…” আমি বললাম, “মা এটা যে তোমার অনেক কষ্টের পুরোনো শেষ সম্বল…” মা বললেন, “আমি তোর ছেলের মধ্যেই তোকে, তোর ছেলেবেলার দিনে খুঁজে পেতে চাই, আর তুই আমাকে খুঁজে পাবি যখন আমি থাকবো না এই পৃথিবীতে, ওই শেষ সম্বল দিয়ে কেনা নতুন জামা টা তে… …” আর পারলাম না, চোখে যে জল ভরে এলো…