T3 || ঘুড়ি || সংখ্যায় সুদীপ ঘোষাল

দেশ বিদেশের ঘুড়ি ও আমার ঘুড়ি -প্রেম প্রসঙ্গে দু চার কথা

বিশ্বকর্মা পুজো এলেই ছোটবেলার মনটা ঘুড়ির মত আকাশে উড়ত।পেটকাটা,চাঁদিয়াল, ঘয়লা দোকানে সাজানো সারি সারি।চোখ দুটো ওপরে আকাশে ঘুড়ির দিকে অথচ হাঁটছি।এক অপূর্ব অনুভূতি।যার এ অনুভূতি হয় নি সে বলবে পাগলামি এসব।মনে একটা বাঘ দাপিয়ে বেড়ায়, খিদে নেই, তেষ্টা নেই,আঙুল ঘুড়ির সুতোয় কেটে রক্ত পড়ছে অথচ ব্যথা নেই।এক অপূর্ব অনুভূতি। বাঘটা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। মনকে বাগে আনতে পারছি না।ঘরে ঢুকলেই মায়ের বকুনি।ঘুড়ি ছুটিয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে আমাকে।একটা ঘুড়ি উড়তে উড়তে এসে পড়ল আমাদের ছাদে।বাঘটা শান্ত হল।ঘুড়িটা নিয়ে, সুতোটা আঙুলে পেঁচিয়ে নিলাম।বিজয়ী বীরের মত মায়ের কাছে এলাম ঘুড়িটা দেখাতে।মা বললেন,ঘুড়ির ভালোবাসাটা বইয়ের প্রতি হোক সোনা। এখন ঘুড়ি ওড়ানো কমেছে,টিকটক আর রিলের দৌলতে।
ধারণা করা হয় যে, প্রায় ২,৮০০ বছর পূর্বে চীন দেশে ঘুড়ির সর্বপ্রথম ঘুড়ির উৎপত্তি ঘটেছে। পরবর্তীকালে অন্যান্য দেশ – বাংলাদেশ, ভারত, জাপান এবং কোরিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়াও, ইউরোপে ঘুড়ি খেলাটির প্রচলন ঘটে প্রায় ১,৬০০ বছর পূর্বে। প্রথমদিকে ঘুড়ি কাগজ অথবা হাল্কা তন্তুজাতীয় সিল্কের কাপড় দিয়ে উড়ানো হতো। ব্যবহৃত অন্যান্য উপাদানের অংশ হিসেবে ঘুড়িতে বাঁশের কঞ্চি কিংবা অন্যান্য শক্ত অথচ নমনীয় পদার্থ দিয়ে তৈরী করা হয়। এছাড়াও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে সুতা কিংবা পাতলা দড়ি ব্যবহৃত হয়।তবে ঘুড়ি তৈরি নিয়ে আরেকটি গল্প প্রচলিত রয়েছে। অনেকে বলে থাকেন, এক চীনা ব্যক্তি তার মাথার টুপির সঙ্গে সুতো বেঁধে নিয়েছিলেন যেন সেটি উড়ে না যায়। এখান থেকেই ঘুড়ি তৈরির ধারণা আসে।

আবিষ্কার যেই করে থাকুক না কেন, চীনেই সম্ভবত প্রথম ঘুড়ি তৈরি করা হয়। সেই ঘুড়িগুলো কিন্তু এখনকার ঘুড়ির মতো ছিল না। এগুলো তৈরি করা হতো সিল্ক কাপড় আর বাঁশ দিয়ে। কিছু কিছু ঘুড়ি তৈরিতে পাতলা কাঠও ব্যবহার করা হতো।

চীনারা কিন্তু আমাদের মতো খেলা হিসেবে ঘুড়ি ওড়াতো না। দূরত্ব মাপা, বাতাসের গতি নির্ণয়, সংকেত আদান-প্রদান ও সেনাবাহিনীর যোগাযোগের কাজে ব্যবহৃত হতো ঘুড়ি।

পরবর্তীতে পলিনেশিয়া, নিউজিল্যান্ড, ভারতবর্ষসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুড়ির প্রচলন হয়। তবে ইউরোপে ঘুড়ির প্রচলন ঘটে অনেক দেরিতে। বিশ্বের নানা প্রান্তে ঘুড়ির ব্যবহার নানারকম হয়ে ওঠে। ধর্মীয় উৎসব থেকে শুরু করে দৈনন্দিন প্রয়োজনসহ নানা কাজে ব্যবহৃত হতে শুরু করে ঘুড়ি। তার আকার-আকৃতিও পাল্টাতে থাকে। প্রথমে চৌকো থাকলেও পরবর্তীতে নানা আকৃতির ঘুড়ি তৈরি করা হয়। সেসব ঘুড়িতে নানা রকম নকশাও ব্যবহৃত হয়।

এভাবেই নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ঘুড়ি তার আজকের জায়গায় এসে পৌঁছেছে।
আধুনিককালের ঘুড়িগুলোয় সিনথেটিক পদার্থের প্রচলন রয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের ঘুড়ি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রচলিত। কোনটি আকারে খুব বড় ও দেখতে নয়ন মনোহর। আবার কোনটি আকারে খুবই ছোট যা দ্রুত উড়তে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

২০১১ সালে অনুষ্ঠিত ব্রিষ্টল ঘুড়ি উৎসব শেষে সবচেয়ে বড় ঘুড়িটি প্রায় ২০ মিনিট আকাশে অবস্থান করে। এটি ভূমির প্রায় ১০,৯৭১ বর্গফুট জায়গা দখল করেছিল।

ঘুড়ি কাটাকাটির লড়াই সারা বছরই দেখা গেলেও ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান প্রভৃতি ভারতবর্ষীয় অঞ্চলগুলোতে ঘুড়ি উড়ানোর বিশেষ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। ঘুড়ির লড়াইয়ে সাধারণত একাধিক লড়াকু মাঞ্জা দেওয়া সূতা দিয়ে ঘুড়ি উড়িয়ে একজন আরেকজনের ঘুড়িকে টানে অথবা ছেড়ে কাটার চেষ্টা করেন। বিজয়ী ঘুড়ি আকাশে উড়তে থাকে আর হেরে যাওয়া অর্থাৎ কেটে যাওয়া ঘুড়ি বাতাসে দুলতে দুলতে ভুপাতিত হয়। ভুপাতিত ঘুড়ি কুড়িয়ে নেয়ার জন্য কিশোর-যুবক-বৃদ্ধ চেষ্টা করেন।

ঘুড়ি আজীবন কিশোর জীবনে নিয়ে আসে খুশির আলো।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।