সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব – ৩৪)

বাউল রাজা

তৃতীয় খণ্ড, পর্ব – ৩৪

এই হোলো গে কানাইক্ষ্যাপার সমস্যা। নিজের মনে কিছু একটা নিলো তো ব্যাস। অন্যের মনের আর ধার ধারবে না। নিজের মনটা অন্যের মনের পিঁড়িতে বসিয়ে দেবে।
— ঠিক আচে, তালেপরে না হয় আগে গানই শোনা যাক, তামাকটামাক পড়ে হপে খনে।
কথাগুলো বলেই বিশুবাউল যতকিছু কৌটো থেকে বের করেছিলো, সেসবকিছু ফের কৌটোবন্দী করতে শুরু করে দিলো। বিশুবাউলও যে আমার মনের কথাগুলোকেই বলে ফেললো সেটা ভেবে অবাক হলাম।
— এই হচ্চে তোমার বদ দোষ। বুজেচো বিশু, মানুষকে কারণে অকারণে শাস্তি দাও।
— কেন আমি আবার কি কল্লুম গো গোঁসাই? একমনে গান শুনপো বলে আপদগুনোকে গুইচে রাকলুম। হাত ব্যস্ত থাকলে মন কীবাবে থির থাকে কও দেকিনি?
— হা হা হা হা — তোমার এই ধরতাইগুলোর জন্যই তোমাকে এতো বালোবাসি গো বাউল। এটা কি আমার মনরে বশে রাকার পালটি হলো? তবে সত্যি বলতে কি জানো বিশু, একন যদি আমি তোমার কথায় সায় না দে একথায় সায় দিই যে ঠিক আচে। আগে না হয় তামাক সেবনই চলুক, বাদে গান, তবে পদীপদাদার গানের অপমান করা হপে, এ মানুষটার কন্টে যে সুরের যাদু খেইলে ফেরে, তেমনি সোহাগ ভরে বুজি একতারাও পিড়িং করে না। পদীপদাদার গান তো তুমি শোনোনি, শুইনলে বুজতে।

আমি মনে মনে গড় করলাম কানাইদাকে। এতো সুন্দরভাবে নিজের অবস্থানে অনড় থাকতে একমাত্র বুঝি তিনিই পারেন।

বিশুবাউল তার কাঁধের ঝোলা থেকে ডুগডুগি বের করে কয়েকবার চাঁটি দিয়ে নিলেন। ছুটকি ঘর থেকে কানাইদার খমকটা এনে তাঁর কোলে রাখলো। খমকটার তারগুলোকে মনযোগ দিয়ে দেখলেন, তারপর সোহাগেভরা তর্জনী ছুঁইয়ে ডুব দিলেন সুর সাগরে। আমাকে যে গান গাইতে বলে এতোকিছু কথা সেসবই বুঝি বেমালুম ভুলে গিয়ে আত্মমগ্ন হলেন। বিশুদার ডান হাতের পাঁচ পাঁচটা আঙ্গুল যেন নেচে বেড়াচ্ছে ডুগডুগির ওপর। বেশ কিছুক্ষণ পর আমি চমকে উঠলাম। এ কোন সুরের বাঁধনে কানাইদা মগ্ন হয়ে আছেন। কানাইদা যে আমারই গানের ক্ষেত্র তৈরী করেছেন, আমি কতবড়ো মুর্খ যে আমি সে সুরলহরীকে বুঝতে পারলাম না? কানাইদার আঙুলে তখন বেজে চলেছে –” আমি প্রণমি তোমারে চলিব নাথ –“

ক্রমশঃ

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।