মার্গে অনন্য সম্মান মিনতি গোস্বামী (সহ সম্পাদকীয় কলম)

অনন্য সৃষ্টি সাহিত্য পরিবার

সাপ্তাহিক প্রতিযোগিতা পর্ব – ১২৩
বিষয় – বাসন্তিকা

বসন্ত সমাগমে

শীতের হালকা চাদর ছুঁড়ে ফেলে ন্যাড়া অরণ্যে শুকনো পাতায় পা পেলে প্রকৃতি সুর ধরেছে বসন্ত গানের। ডালে ডালে শিমূল পলাশ জ্বেলেছে আগুন, আসবে আসবে এবার ফাগুন। রঙে রঙে রাঙিয়ে নেবে নিজেকে আঠারো থেকে আটাশের দল। ফাগুনেই যৌবনের চোখে আগুনের ঢল, হৃদয় টলোমল। বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার ধূসর বুকেও যৌবনের ছলাৎছল.। মহুয়ার মদে, পলাশের সাজে দেহে হিল্লোল, ধামসা মাদলের তালে তালে কোমর দুলিয়ে নাচ। ধন্য বসন্ত , বসন্তের ছোঁয়ায় সবাই বাসন্তিকা।

কোকিলের কুহুতানে উন্মনা মন। চোখে কাজল, চুলে পলাশের মালা গেঁথে, বাসন্তী রঙের শাড়ি পরে আজ নেমেছি রাঙামাটির পথে। কিন্তু কেউ তো আমাকে বাসন্তিকা বলে ডাকলো না। সামনে দাঁড়িয়ে কেউ তো আমার রাস্তা আটকালো না।
তবে কি বসন্তে কেউ এসে রাস্তা না আটকালে , কেউ সাজের তারিফ না করলে, বৃথা যায় বসন্ত!
আমি তো এতদিন বুঝিনি, এই প্রথম বুঝলাম, হাতে হাত রাখার মত কেউ না থাকলে, কেউ সোহাগ ভরে কাছে না ডাকলে সব আয়োজন বৃথা। বসন্ত ছড়ায় হুতাশন। দগ্ধে দগ্ধে মরে যৌবন ধন।

মনে পড়ে রূপ, “কলেজ জীবনে বন্ধুদের সঙ্গে যেবার শান্তিনিকেতনে দোল উৎসবে গেছিলাম, সঙ্গে ছিলি তুইও.। আমি বাসন্তী রঙের শাড়ি পরে গেছিলাম। দল থেকে ছিটকে গেছিলাম ভিড়ের মধ্যে, তুই আমাকে খুঁজে আনতে গেছিলি। আমাকে দল থেকে একলা পেয়ে আমার হাত ধরে তুই বলেছিলি প্রথম, ‘ এইতো আমার বাসন্তিকা। একে আমি কোনদিন হারাবো না.’। এক মুঠো লাল আবীর নিয়ে আমার মুখে আর সিঁথিতে লেপে দিয়েছিলি।” সেই কবেকার কথা আজও মনে আছে। প্রকৃতিতে বসন্ত আসে, শিমুল পলাশ ফোটে, আমের মুকুল গন্ধ ছড়ায়, কোকিল কুহু ডাকে, শুধু বাসন্তিকা বলে আমাকে আর কেউ ডাকে নি। আমাকে জড়িয়ে ধরে তোর মতো করে আর কেউ লাল আবীর মাখায়নি। জানিস রূপ, আমি আজও বসন্ত এলে অপেক্ষা করে থাকি তোর মুখ থেকে বাসন্তিকা ডাকটা শোনার। প্রেমে আকুল হতে পারে সব রাধারাই, কেন তোর এই দিব্যজ্ঞান হয়নি রে রূপ? বসন্ত যে এসে গেছে.

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।