গল্পেরা জোনাকি তে রঞ্জনা বসু

বিনতা
অসীমের সাথে তোমার আর কোনদিন দেখা হয়নি বিনতা?
এতদিন পর হঠাৎ এই কথা? — বিনতা চমকে ওঠে।
সে আর আমার কোন খোঁজ খবর নিতে আসে না।
তুমি তার খোঁজ নিয়েছ? বলে শম্ভু পাশ ফিরে শুয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
কিছু সময় পর আবার বলে— তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করব, সত্যি বলবে?
আহ্, রাত হয়েছে। এবারে ঘুমোও দেখি। রাত দপুরে এত বক বক আর ভালো লাগে না।
যন্ত্রনা, অনিশ্চয়তা, মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে প্রতিদিন বেঁচে থাকা, শম্ভু আর পারে না। ভোরে উঠে মাঠে যায়। সামান্য চাষের জমি। উদয়অস্ত পরিশ্রম করেও বিনতার মন পায় না। তবুও সংসার ভালোবাসে। বিনতার প্রতি অদ্ভুত এক টান অনুভব করে। এই কি প্রেম? শম্ভু বুঝতে পারে না। বিনতা খুশি হলে সেও খুশি থাকে, কিন্তু এই অসীম?
প্রতিবেশিদের কাছে গিয়ে প্রতিদিনই খোঁজ খবর নেয়, সুখ দুঃখের কথা শোনে। আজ আর কোনকিছুই ভালো লাগে না শম্ভুর। বিনতা দিন দিন রোগা মনমরা হয়ে থাকে সে যে অসীমের জন্য সে কথা বুঝতে পারে। সংসারের আসল জায়গাটাই ধরতে শেখেনি এখনও। এই সংসারে থেকে আর কি হবে?
চোরের মতন লুকিয়ে লুকিয়ে অসীম আসে। আজ বিনতা বলল, এখানে আর এসো না। অসীম বলল, কেন? ঐ বোকাটা সব টের পেয়েছে নাকি? কথাটা শুনে এবার বিরক্ত হল বিনতা। সে তোমার কোন পাকা ধানে মই দিয়েছে? যে সোজা সরল মানুষকে তোমার বোকা বলতে বাধে না!
কদিন ধরে অসীম বিনতা কে নিয়ে শহরে যাবার বায়না ধরেছে। এদিকে বিধবা কলি এসে সেদিন বলে গেছে অনেক কথা। অসীম নাকি মেয়ে পাচারের ব্যবসা করে। কয়লা খাদানের দালাল শঙ্করের সাথে তার দোস্তি। তবে কি এই কারণেই সে আসে? ওসব প্রেম, ভালোবাসা কিছু নয়?
বিনতার গলার স্বর শুনে বেশ অবাক হয়ে তখনকার মতো অসীম চলে যায়। বিনতা ভাত রাঁধতে বসে। নানান কাজ সেরে বেলা হয়ে যায়। শম্ভু তখনও ফেরেনি। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই বিনতার মনটা হুহু করে উঠল। শম্ভুর দেখা নেই। কোথায় পাওয়া যায় তাকে?
মাঠের ধার থেকে একবার ঘুরে এসেছে। রাস্তার চায়ের দোকানের গুমটিতেও পায়নি। বাড়ি ফিরে অন্ধকারে বিনতা একলা বসে ছিল। অনেক দিন পর তার শূন্য মন ফিরে এসেছে। সেখানে আর অসীম নামের কেউ নেই।
কলি এসে বলল, শেষপর্যন্ত ঘরের মানুষটাকে বিবাগী করে দিলি? তোর কপাল ভালো থাকলে আবার ঘরে ফিরে আসবে। এরকম তো সে কতবার ঘরছাড়া হয়েছে!
রাতে শুয়ে যন্ত্রনায় ছটফট করতে করতে বিনতা প্রতিজ্ঞা করল, এ জীবন থেকে তাকে বেরোতেই হবে। অনেকদিন পর সে শম্ভুকে হৃদয় দিয়ে অনুভব করল।