সম্পাদকীয়

ষষ্ঠী

ষষ্ঠী এসে গেল । যষ্ঠী বললেই কেমন ক্ষীরের পুতুলের ষষ্ঠী ঠাকুরুনের কথা মনে পড়ে যায় । কেমন আলো করা রূপ । চাঁদের মত মুখখানা । কপালে সিঁদুরের টিপ । লাল পাড় শাড়ী পরনে । দু হাতে শাঁখা, পলা । এই অবধি তো ঠিকই ছিল । গোলটা বাঁধল তারপরই । মায়ায় তৈরি, মায়ায় জারানো এমন মূর্তির খিদে, তেষ্টা থাকবে না কেন? ঘরে ঘরে সোনার চাঁদ ছেলে, লক্ষীমন্ত মেয়ে পাঠাচ্ছেন মায়েদের কোলে আর জ্যৈষ্ঠি মাসের কাঠফাটা রোদে মা ঠাকুরনের খিদে পেলেই কলঙ্ক? খিদে পেলে সে ক্ষীরের পুতুল খাবেন না কেন? তাকে যখন নিজের খাবার নিজেকেই খুঁজতে হবে, কলঙ্কের প্রশ্ন আসছেই কেন?
উত্তরটা খুব সহজ ।
সামাজিক কন্সট্রাক্ট । মায়েদের খিদে পেতে নেই, সবাই খেলে তারপরই খেতে হয় । পড়ে থাকা ক্ষীর খেলেও লুকিয়ে খেতে হবে । গাঁয়ের বৌ, ঝিরা সেদিন পুজো দিতে এসে ফিরে গিয়েছিল, বাঁদরের কারসাজিতে, ব্যাস ষষ্ঠী ঠাকরুণ ফাঁদে পা দিয়ে ফেললেন । আর এই যে না খেয়ে থাকা, লুকিয়ে ক্ষীর খেয়ে কলঙ্কের ভয়, এসব কি এখনো নেই? আছে বৈ কি । ষষ্ঠী ঠাকরুনের রোল মডেল মায়েরা মেনে চলবেন, এটাই তো স্বাভাবিক । কন্সট্রাক্ট তো এমন করেই মেনে চলা হয় ।

সত্যিটা হল মায়েদেরও খিদে পায় ।
মায়েরাও ভুল করেন । ভুল করে আঢাকা ক্ষীরের ছেলে খেয়ে ফেললে তাতে দোষের কিছু নেই ।
বাঁদর ব্ল্যাকমেল না করলে দুয়োরানীর জন্য রাজপুত্তুর ষষ্ঠী ঠাকুরন দিতেন কিনা, সে প্রশ্ন থেকেই যায় যদিও । তবে হ্যা বাঁদর তো বলতেই পারত, ‘খিদে পেয়েছিল, ক্ষীরের ছেলে খেয়েছ বেশ করেছ, ঠাকুরন, এবার আমার মায়ের জন্য রাজপুত্তুর দাও দিকি নি’ । আর ঠাকুরুন যদি ক্ষীরের ছেলে খেয়ে মুখ মুছে কাঠামোতে লুকোতে না যেতেন, যদি বলতেন ‘বেশ করেছি খেয়েছি, আমার বরে দুয়োরানীর রাজ চক্রবর্তী ছেলে হোক, দুয়োরানী তো ক্ষীরের ছেলে গড়ে পাঠালে, আমার প্রাণ, পেট সব ভরে গেল । তুই কলঙ্কের ভয় দেখাস নি বাঁদর ।’ ঠাকুরন এমন বললে কি ভালোই না হত ।
মায়েরা খিদের কথা বলতে শিখুক । ষষ্ঠীর দাস ষেঠের বাছারা তা বুঝতে শিখুক ।
সবার জন্য ষষ্ঠীর ষাট রইল । তালপাতার বাতাস, আম, কাঠালের রসে ডোবান খইয়ের ভোগ সবার জুটুক ।

ইন্দ্রাণী ঘোষ 

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।