সাপ্তাহিক কোয়ার্ক ধারাবাহিক উপন্যাসে সুশোভন কাঞ্জিলাল (পর্ব – ১০০)

একশাে
লাইফ আছে। যদিও এই ওষুধ মানুষকে আজীবন যুবক রাখতে পারেনা তবে Panacea নামের এই ভেষজ ওষুধটি মানুষের যে কোনাে অসুখ সারাতে পারে এমনকি ক্যানসার কিংবা এইড্রস ও। আমাদেরই এক ফেলাে মেম্বারের আবিষ্কার। এই Panacea আফ্রিকার জঙ্গলে দেখতে পাওয়া যায়। এই গাছের পাতায় আছে আশ্চর্য মেডিসিনাল ক্ষমতা। তুমি আমাদের সাহায্য কর আমরা তােমাকে Panacea-র ভাগ দেব। যাইহােক ABC-র মৃত্যুতে ফিলােজফার স্টোন আমাদের পাওয়া হল না। আমরা তােমার ওপর নজর রেখেছিলাম। কিন্তু তুমি জার্মানি ছেড়ে ভারতে চলে আস। আমরা ধারণা করেছিলাম যে তুমি এত ছােট তােমাকে ABC তার এই যুগান্তকারী আবিষ্কার জানিয়ে রেখে যাবে না। তাহলে কোথায় রাখতে পারেন তার আবিষ্কার। ভেবে দেখলাম তােমার বাবার ঘনিষ্ঠ বন্ধু হলেন ডঃ চোঙদার। তিনিই একমাত্র উপযুক্ত লােক যাকে তার আবিষ্কারের কাস্টডি হিসাবে ভাবতে পারেন। আমরা ডঃ চোঙদারের উপর নজরদারি চালাতে লাগলাম। কিন্তু উনিও কিছুদিন পর ভারতে চলে এলেন পাকাপাকিভাবে বাস করার জন্য। ফিলােজফার স্টোন এইভাবে নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে আমরা মানতে পারিনি। তাই আমরাও ভারতেই ওনার ওপর নজরদারি চালাতে লাগলাম।
আমরা ধরে নিয়েছিলাম ডঃ চোঙদারের কলকাতায় আসার উদ্দেশ্য হল তােমার কাছাকাছি থেকে তােমার হাতে তােমার বাবার আবিষ্কার তুলে দেওয়া। কিন্তু আমরা আশ্চর্য হলাম ডঃ চোঙদার তােমার সঙ্গে যােগাযােগ করার কোনাে চেষ্টা করলেন না। এবার আমরা তার উদ্দেশ্য বুঝতে পারলাম। তার উদ্দেশ্য হল ডঃ চৌধুরীর আবিষ্কারকে আত্মসাৎ করা। কিন্তু আমরা তা কোনােমতেই হতে দিতে পারি না। ওই আবিষ্কারে ডঃ চোঙদারের কোনাে অধিকার নেই। আমরা ডঃ চোঙদারকে ডাইরেক্ট ABC-র আবিষ্কারের কথা জিজ্ঞাসা করলাম। কিন্তু উনি পুরােপুরি অস্বীকার করলেন। কাজ হল
দেখে আমরা ওনাকে শাসানাে শুরু করলাম। লােভ দেখালাম। কিন্তু ডঃ চোদার খুব শক্ত প্রকৃতির মানুষ। তাই জীবনের ভয় দেখানাের জন্য আমাদের ভাড়া করা লােক ওনার পায়ে গুলি চালায়। উনি তখন ইভিনিং ওয়াকে বেরিয়েছিলেন। গুলিটা বােধহয় ওনার পায়ে না লেগে শরীরের কোনাে ডেঞ্জার জোনে লাগে। রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। উনি তখন ট্যাক্সি করে তাড়াতাড়ি ফিরতে চেষ্টা করেন। মৃত্যু আসন্ন বুঝতে পেরে নিজের রক্ত দিয়ে ট্যাক্সির সিটের পেছনে ওই কথাগুলি লিখে রাখেন, যে কথাগুলি তুমি পরে অন্য এক ট্যাক্সিতে চাপার ফলে দেখতে পাও। ডঃ চোঙদার তােমার মােবাইল নাম্বারটাও লিখেছিলেন। তােমাকে কিডন্যাপিং-এর সময় ওর হেঁয়ালিটা আমরা লিখে রাখি যাতে ওর মেসেজটা তােমার কাছে পৌছয় এবং তুমি তা উদ্ধারের চেষ্টা কর। ট্যাক্সিওয়ালা যখন বােঝে যে পেছনের সিটে বসে থাকা যাত্রী খুব সিরিয়াসলি ইঞ্জিওল্ড তখন সে সােজা গাড়ি নিয়ে হাসপাতালে যায়। হাসপাতালে ওনাকে ভর্তি নেওয়া হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসাও শুরু হয়। কিন্তু আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি যে ঘণ্টা চারেক পরই ডঃ চোঙদারের মৃত্যু হয়। সত্যি বলছি ডঃ চোঙদারকে মারার কোন ইচ্ছাই আমাদের ছিল না। ইট ইজ নাথিং বাট অ্যান অ্যাকসিডেন্ট। ট্যাক্সিওয়ালাকে পাকড়াও করে আমরা ডঃ চোঙদারের লাস্ট মেসেজটা উদ্ধার করি। তুমি আমাদের চেনাে না। তাই তুমি
আমি বললাম “ডঃ বার্গেনস্টাইন আমাকে ভয় দেখিয়ে আপনি কিছু করতে পারতেন
। তবে আমাকে কোনাে কাজে না লাগিয়ে ছেড়ে দিলেন কেন?” বার্গেনস্টাইন কটাক্ষের হাসি হেসে বললেন “শােন রুডি, আমার দলেও নেহাত বুদ্ধিমান লােকের অভাব নেই। তােমাকে কিডন্যাপিং-এর ঠিক পরেই আমাদের এক্সপার্টরা ডঃ চোঙদারের মেসেজ ডিকোড করে ফেলেছিল। তারপর আমাদের লােকেরাই হিন্দুস্থান ব্যাঙ্ক ডাকাতি করে নির্দিষ্ট লকার থেকে সিডিটা বের করে। তােমাকে দিয়ে জোর করে কিছু করা যাবে না সেই খবর আমরা জানতাম। তাই তােমাকে ছেড়ে দেওয়া হল। লকার থেকে উদ্ধার করা সিডি থেকে বােঝা যায় ফিলােজফারস স্টোন খুঁজে পেতে হলে বেশ কিছু ধাঁধার সমাধান করতে হবে। ধাঁধাগুলাে খুব সম্ভবত তােমার বাবার তৈরি। তুমি ক্রিপ্টোগ্রাফার। তাই তােমাকে কমফর্টেবল পরিবেশ দিলে তুমি সহজেই ফিলােজফা স্টোনের হদিশ বের করে ফেলবে। আর তুমি যদি বের করে ফেলতেই পার আমাদের তা হস্তগত করতে কোনাে অসুবিধাই হবে না। কারণ তুমি সব সময়ই আমাদের নজরবন্দি। আমাদের এজেন্ট অনেক আগে থেকেই নানা ভূমিকায় তােমার সঙ্গে ছিল। দমদমের বাড়ি থেকে চাকর হিসাবে ছিল আমাদের এজেন্ট সদানন্দ যার নাম তােমরা রেখেছিলে বাল্মীকি। তােমার ফোন ট্যাপ করা, বাড়িতে লাগানাে ইলেকট্রনিক গ্যাজেট্রক্স ইত্যাদির মাধ্যমে তােমার সব কিছু আমাদের নলেজে ছিল। ডাকাতি করা সিডি থেকে বুঝতে পারি ধাঁধা সমাধানে তােমার সাহায্য জরুরি। অথচ তােমাকে ভয় দেখানাে যাবে না। তখন আমরা নানা কায়দায় তােমার কাছ থেকে সাহায্য আদায়ের চেষ্টা করলাম। এক মহিলা এজেন্টকে ডঃ চোঙদারের মিথ্যে স্ত্রী সাজিয়ে তার হাত দিয়ে তােমার কাছে সিডিটা পাঠাই। কিন্তু তােমার চেলা শ্রেয়ান ধরে ফেলে যে ডঃ চোঙদারের স্ত্রী ভূয়াে। তাই পরে সেই এজেন্টকে আর কাজে লাগাইনি। আমাদের সব প্ল্যান ভেস্তে দিল তােমার চেলা শ্রেয়ান আর তার গ্যাং”। আমি এবার খুব অবাক হয়ে ডঃ বার্গেনস্টাইনকে থামিয়ে দিয়ে বললাম “শ্রেয়ানের গ্যাং মানে কি? কারা এরা? শ্রেয়ান কাদের হয়ে কাজ করত? তাদের উদ্দেশ্য কি ছিল?” ডঃ বার্গেনস্টাইন বিজ্ঞের মতাে হেসে বলল “তােমার সব প্রশ্নের তাে উত্তর দিতে পারব না তবে যতটুকু জানি ততটুকুই বলছি”।
একটু থেমে বার্গেনস্টাইন আবার বলা শুরু করলেন “শ্রেয়ান এবং তার গ্যাং খুব হাইগ্রেডেড ক্রিমিনাল। এরা প্রফেশনাল ক্রিমিনাল। আমরা ওদের সঠিক পরিচয় জানিনা ঠিকই কিন্তু আমি নিশ্চিত এরা সব RAS-এর লােক। রক্তপিশাচ শয়তান এরা। খুব শক্তিশালী নেটওয়ার্ক ওদের। সেটা কাজে লাগিয়েই ওরা ফিলেজফার স্টোন হাতানাের চেষ্টা করছে। কিন্তু SOAM তা হতে দেবে না। আমি তা হতে দেব না”। কথাগুলাে বলতে বলতেই বুড়াে বার্গেনস্টাইন খুব উত্তেজিত হয়ে উঠল। আমি বললাম “দেখুন আপনারাও তাে ভালােমানুষ নন। আপনারা ডঃ চোঙদারকে খুন করেছেন, আমাকে কিডন্যাপ করেছেন এবং আরও গুরুতর অপরাধ হল আপনারা বিদেশি হয়েও আমাদের দেশের ব্যাঙ্ক ডাকাতি করেছেন। তাই আমার থেকে কোন সাহায্য পাওয়ার আশা করবেন না”। আমার কথা শুনে বৃদ্ধ কিছুটা হকচকিয়ে গেল। বলল “তুমি আমায় না বলছ। তােমার বাবা কিন্তু আমাদেরই লােক ছিলেন। উনি নিশ্চয়ই ওনার আবিষ্কার আমাদেরই দিতেন। তাই ওনার আবিষ্কার পাওয়ার অধিকার আমাদের আছে। ফিলােজফার স্টোন SOAM-এর সম্পত্তি এ বিষয়ে কোনাে সন্দেহ নেই”। আমি বললাম “বাবা কিন্তু আমায় এমন কোন নির্দেশ দিয়ে যাননি। আর সত্যি যদি আমি বাবার আবিষ্কার খুঁজে বের করতে পারি তবে তা আমি আমার দেশের সরকারের হাতেই তুলে দেব”। ডঃ বার্গেনস্টাইন বােধহয় আমার এই উত্তর শুনবেন বলে প্রস্তুত ছিলেন না। উনি খুব উত্তেজিত হয়ে পড়লেন এবং হুইল চেয়ারের একটা বােতাম ঘনঘন কয়েকবার টিপলেন। নিমেষে সুইটের দরজা খুলে চারজন স্যুট কোট পরা বিদেশি লােক ঢুকে এল। বার্গেনস্টাইনের চোখের ইশারায় তাদের কোটের ভেতর থেকে কালাে চকচকে রিভলভার বেরিয়ে এল। একজন বন্দুকের নল ঠেকাল আমার কপালে। ঠান্ডা একটা স্পর্শ আমার শরীরে শিহরণ জাগাল। আমি সামলে নিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। বললাম “দেখুন আপনাদের সম্বন্ধে আমি যে মন্তব্য করেছি তা একেবারে সঠিক। হাতেনাতে তার প্রমাণ দিলেন। ভয় দেখিয়ে যে আমার কাছ থেকে কিছু পাওয়া যাবেনা, একথা আপনি নিজেই স্বীকার করেছেন। আবার আমাকে যদি মেরে ফেলেন তাতেও আপনাদের কোন লাভ নেই। কারণ ফিলেজফারস স্টোন অধরা থেকে যাবে। সুতরাং এখন যে কাজটা করছেন তা মােটেই বুদ্ধিমানের কাজ নয়”। বার্গেনস্টাইন ব্যাপারটা বুঝলেন চোখের ইশারা করতেই সকলের বন্দুক আবার কোটের ভেতর ঢুকে গেল। বার্গেনস্টাইন বললেন “রুডি প্লিজ, আমাদের সম্পত্তি আমাদের দাও”।
যাইহােক ডঃ বার্গেনস্টাইনকে নিছক ভূয়াে আশ্বাস দিয়ে ওনার সাপাের্ট পাওয়া এনসিওর করেছি। আমার নিশ্চিত ধারণা যে একেবারে শেষ অধ্যায়ে RAS কিংবা গােকুল কুণ্ডু অথবা শ্রেয়ান যেই আমার প্রতিপক্ষ হােক তাদের সঙ্গে সম্মুখ সমর হবে। তাই আমার জনবল এবং অস্ত্রবল দুটোই প্রয়ােজন হবে। পুলিশ তাে সাথে আছেই। কিন্তু এ ধরণের যুদ্ধে কাঁটা দিয়ে কাটা তুলতে হয়। মােক্তারকে ডেকে নিয়ে ট্যাক্সিতে উঠলাম। সকালে বার্গেনস্টাইনের জন্য বিয়ার খেয়ে মাথাটা ঝিমঝিম করছে। এখন বেলা সাড়ে এগারােটা বাজে। বিশেষ কারণে আমাকে কিছুটা সময় কাটাতে হবে। ট্যাক্সিকে ঘুরিয়ে আমার অফিসের দিকে নিতে বললাম। মােক্তারকে বললাম অফিসে আমার একটু কাজ আছে। অফিসে যেতেই সকলে ছেকে ধরল। যদিও আমি সবার সঙ্গে খুব ইন্টিমেসি করি না। কিন্তু যেহেতু আমি দীর্ঘদিন অফিসে অনুপস্থিত তাছাড়া আমার বিপদের কথাটা অনেকেই শুনেছে। তাই কেউ বা কৌতুহলে আবার কেউ বা সহানুভূতির সঙ্গে দেখা করতে এল। মােক্তারকে অফিস ক্যান্টিনে লাঞ্চের ব্যবস্থা করে নিজের কেবিনে ঢুকলাম। বেতালদাকে ডেকে দুপুরের লাঞ্চটা আমার কেবিনেই সারতে বললাম। বেতালদা নিজেই সব ব্যবস্থা করে আমার কেবিনে চলে এলেন।
| দুপুরের খাওয়া খেতে খেতে আমি বেতালদাকে বেশির ভাগ ঘটনা ও তার তাৎপর্য ব্যাখ্যা করলাম। কিছু কথা বিশেষ করে Quarko-র কথা গােপন রাখতে হবে তবে ঘটনা কোন দিকে গড়াচ্ছে এবং একটা এসপার ওসপার হতে যাচ্ছে সেটা বিশেষ করে বুঝিয়ে দিলাম। সেটা যে আলাপ আলােচনার মাধ্যমে হবে না, খুনােখুনি পর্যন্ত হতে পারে সেটা জানিয়ে দিলাম। বেতালদা আমার সব কথা খুব মনােযােগ সহকারে শুনলেন তারপর জিজ্ঞাসা করলেন “এখন তােমার প্ল্যান কি?” আমি বললাম “বেতালদা, যদি পারেন হাফ ডে ছুটি নিয়ে নিন। সারা দিনটা আমার সঙ্গে থাকুন। আপনাকে আমার খুব দরকার হবে। কিছু বিশ্বস্ত লােক আমার সঙ্গে থাকা দরকার”। বেতালদা উৎসাহিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন “তাহলে কি আপনি রহস্যের কিনারা দেখতে পাচ্ছেন?” আমি বললাম “না, তেমন গ্যারান্টি দিতে পারছি না। তবে চান্স আছে”। বেতালদা তাড়াতাড়ি উঠে পড়ে বললেন “ঠিক আছে, আমি রাজি। একটু অপেক্ষা করুন আমি ছুটির দরখাস্ত করে আসি”। বেতালদা চলে গেলেন। মােক্তার খেয়ে এসে কেবিনে ঢুকল। ওকে বসালাম। একটা ফোনের অপেক্ষায় আছি। ফোনটা এলে তারপর আমার সঙ্গে কথা বলতে হবে। ফোনটা এল। রিসিভার তুলে ফোনটা ধরলাম। যে খবরের অপেক্ষায় ছিলাম সেটা পেলাম। সঙ্গে সঙ্গে আমাকে ফোন করলাম। বললাম যে আমি সব ধাঁধার সমাধান করে ফেলেছি। আর Quarko এখন আমার হাতে। এখনই ওর সঙ্গে দেখা করে আলােচনা করতে চাই। আর্যমা আমাকে প্রিন্সেপ ঘাটে আসতে বলল। ঠিক আগের মতােই ও আয়ােজন করে রাখবে। আমি আরও দুটো ফোন করে বেতালদা ও মােক্তারকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।