সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে রাজশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় (পর্ব – ১৩)

পিরিচ পেয়ালা ও একটি সন্ধ্যা

পিরিচ পেয়ালার ঠুংঠাং- এ ভরে ওঠে সন্ধ্যা, সাথে ভীমসেন মেজাজী আড্ডা৷ কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী কচ্ছ থেকে কোহিমা গোটা ভারতটা ঘুরে ফেলি কিংবা বলা কি যায় গোটা পৃথিবীটাই হয়ত ঘুরে ফেলি আমরা আড্ডা দিতে দিতে৷ আর বিষয়? সম্পর্ক থেকে রসায়ন, রাজনীতি থেকে সংস্কৃতি কোন বিষয়ে আলোচনা হয় না বলুন তো এই আড্ডায়! যেন বিশ্বব্রহ্মাণ্ড বারেবারে ধরা পড়ে পিরিচ পেয়ালার এই সন্ধ্যার আড্ডায়৷

তেমনই এক সন্ধ্যায় “বর্ষা” নিয়ে বাঁধল গোল৷ কোনটা ভুল আর কোনটা অন্যায় তাই নিয়ে চলল বিস্তর তর্ক৷
একেবারে চুলচেরা বিচার৷ নিত্তি মেপে এগানো৷ সমানুপাত ব্যস্তানুপাত কিছু কি বাকি থাকল? আমার আবার হিসেব কষাকষির এমন বহর দেখলে কেশব চন্দ্র নাগের কথা ভারি মনে হয়৷ আর ঐ বাঁদরটার কথা
তেল মাখা ডান্ডায় কিছুটা উঠছে আবার স্লিপ করে ততটাই নেমে আসছে৷

“আষাঢ়স্য প্রথম দিবস”…বর্ষা রাণীর অনন্ত ধারায় পৃথিবীর আবক্ষ স্নান, গাছেদের সিক্ত উৎসব, পথ ঘাটের সরীসৃপ চলন, মুগ্ধতা ছড়ায় বারবার৷ জানালার গরাদে চোখ রেখে এঁকে চলা অনন্ত রূপকথা৷ বৃষলী মেঘেদের পিঠে চড়ে সীমানা পেরিয়ে ছুটে চলা অসীমের সন্ধানে৷ আগন্তুক ছাই মেখে ধ্যানমগ্ন পাহাড়ের গা থেকে খসে পড়ে কৃত্রিম খোলস৷ দূর বনরাজির বুকে দুরুদুরু অভিসারী রাত স্বপ্নালু হয়ে ওঠে৷ গাঢ় বর্ষার ছন্দে পাহাড়ী ঝরনার নুড়িগুলো আরও চঞ্চল আরও লাস্যময়ী হয়ে ওঠে৷

যাতায়াত যানবাহন সব পন্ড হলে কর্ম ব্যস্ত মানুষের হয়রানি বেড়েই চলে বিরামহীন চালে৷ জল বাড়ে, শহরতলীর ব্যস্ত রাস্তায় খানাখন্দো একাকার৷ ঘরবাড়ির গা থেকে খসে পড়ে জৌলুস৷ অনন্ত ধারায় ভেসে যায় জীবনের জলছবি৷ বাস্তুভিটের আনাচেকানাচে স্মৃতিরা থইথই জলে কাগজের নৌকার মত ভাসে৷ জীবন যন্ত্রণায় ছটফট করে গৃহস্থ সম্পর্ক৷ বর্ষার রূপ যেন ফিকে হয়ে আসে সংগ্রামের নিষ্ঠুর কোপে৷ তখন মায়াবী আলোর রেশ মিলিয়ে গেছে৷ কবিত্বের পরাজয় যাপনের কর্কশ অভিঘাতে৷ আষাঢ়ে নীল শাড়ি জুড়ে এমনই কখনও কখনও আবেগের রঙ ফিকে হয়ে আসে৷ কষ্টের ছিঁটে লাগে, বর্ষার আবেশে৷ বেদনার স্রোত এসে ভাষাহীন ক্রন্দন এঁকে দেয় পৃথিবীর বিস্তীর্ণ উঠোনে৷

অমৃতকুম্ভ না বিষভান্ডার তা বোঝার অবকাশ সত্যি কি থাকে ? ভালো মন্দের দ্বন্দ্ব, তার্কিক আস্ফালন চলতেই থাকবে৷ তর্ক জমে উঠলেও, জীবনের প্রতিটা ঋতুই শুধু মুহূর্তের আপোষ প্রয়াসী৷ ভেসে যায় সময়ের আবর্ত আননে৷

আসছে সপ্তাহে আমাদের সন্ধ্যার আড্ডায় আবার কী নিয়ে দক্ষযজ্ঞ বাঁধে দেখি! চিন্তা করবেন না, একেবার সেই বিষয়টা নিয়েই চলে আসব আগামী সপ্তাহে ” পেয়ালা পিরিচ ও একটি সন্ধ্যা”-র পরের পর্বে৷ ভালো থাকুক সকলে৷

*বিঃদ্রঃ পেয়ালা পিরিচ সহযোগে সন্ধ্যায় আপনিও জমিয়ে আড্ডা মারুন।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।