গদ্য বোলো না তে নীলম সামন্ত

ফকির ফিকির

হঠাৎ রাস্তার মাঝে মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়া ফকিরটির ঝুলি থেকে বেরিয়ে এলো একটি আধখানা স্টেশন। সাদা প্যান্ট, হাতা গোটানো ঘোলাটে জামায় বর্ণান্ধ স্টেশন মাস্টার। হাতে অনেকগুলো পতাকা। লাল, সবুজ, হলুদ, নীল। উলটে পালটে সাজিয়ে নিচ্ছেন। মুখের সামনে অক্লান্ত পাতের ওপর দাঁড়িয়ে জং ধরা বগি এবং অল্প খোলা দরজা। পর পর লাইন ধরে কয়েকটি জানালা। রামমোহন, বিদ্যাসাগর, বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ; মাঝে একটি অগোছালো নারী৷
দরজায় গুঁতোগুঁতি করছে ‘একলা চলো’ মুখোশধারী প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা। মুখোশের আড়ালে কে প্রথম কে তৃতীয়? স্টেশনের ওপর সিমেন্টের বেঞ্চে বসে আছেন সূর্য কিংবা ব্ল্যাকহোল। তাঁর ঠিক ঈশান কোনে গর্ভবতী মা। যাঁর আধ খোলা বুকের পাশ থেকে বেড়ে উঠছে ডেড ট্রি। মেঝেতে ছড়িয়ে আছে বাসি পাউরুটি, মাছি, ইদুর, পিপড়ে।
সহাবস্থানের নামে দই এর মালসায় জমা হচ্ছে মাছের কাঁটা৷
শুয়ে থাকা শরীরটির পাশ থেকে সশব্দে বেরিয়ে যাচ্ছে হন্ডা সিটি, সিয়াজ, শেভ্রোলেটের মতো আভিজাত্য৷ চাকার ভারে পিষে যাচ্ছে স্টেশন৷ প্রায় বুজে আসা চোখে সে দেখল স্টেশন এর লোকেরা বাক্সপেটরা নিয়ে ঢুকে যাচ্ছে মাটিতে। প্রতিবাদের লেশ নেই। ফেস্টুন নেই। নেই কোন দেওয়াল লিখন৷ শেষ যাত্রীটি বেরিয়ে আসার পর সূর্য কিংবা ব্ল্যাকহোল থেকে একসঙ্গে বেজে উঠল বিকেল পাঁচটার আজান, কাঁসর,শাঁখ, ঘড়ির টিকটিক।
এবং চোখ বুজলো অন্ধ ফকির৷
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।