দীর্ঘ একবছর গত মার্চ মাস থেকে ভারতবর্ষ তথা সারা পৃথিবী জুড়ে এক অবাঞ্ছিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে৷ কোভিড নাইন্টিনের করাল গ্রাস কত মানুষের জীবন শেষ হয়ে গেছে৷ কত ব্যাবসা, কার্যালয়, কারখানা মুখ থুবরে পড়েছে৷ ঘরছাড়া হয়েছে মানুষ৷ পথকষ্টে, জল না পেয়ে, খাদ্য না পেয়ে মারা গেছে কত পরিযায়ী শ্রমিক৷ কখনও ট্রেনের চাকা পিষে দিয়ে গেছে তাদের, কখনও বাস উল্টে গিয়ে জীবনহানি হয়েছে তাদের৷ আত্মহত্যা করেছে মানুষ৷ রাস্তায় নেমেছে৷ আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে, হসপিটালে বেডের সঙ্কুলান হয়েছে৷ সারা পৃথিবী জুড়ে মৃত্যু মিছিল দেখেছি আমরা৷ লাশের পাহাড় জমতে জমতে মর্গে জায়গা মেলেনি৷ অজ্ঞাতকুলশীল বেওয়ারিশ লাশের মত কোভিড আক্রান্তদের মৃতদেহ ফেলে দেওয়া হয়েছে রাস্তায়, আস্তাকুড়ে৷ তবে সময় থেমে থাকেনি৷ সে তার নিজের গতিতে প্রবহমান৷ ধীরে ধীরে লকডাউন শিথিল হয়েছে৷ মৃত্যুর চেয়ে জীবন বড় তা আরও একবার প্রমাণ হল৷ লকডাউন শিথিল হতেই মানুষ মরিয়া হয়ে ছুটেছে কাজের সন্ধানে অন্নের সন্ধানে৷ কোভিডের ভয়াবহতা ভুলে নিজের বাঁচার তাগিদে, পরিবারকে বাঁচানোর তাগিদে শুরু হয়েছে নতুন লড়াই৷ যে লড়াইয়ের নাম “নিউনর্মাল”৷ এরই মধ্যে গত বছর নিয়মানুযায়ী বেজে উঠেছিল আলোর বেণু৷ মা এলেন মর্তলোকে বাপের বাড়িতে৷ বাঙালীর শ্রেষ্ঠ উৎসব দূর্গাপূজা কেটে গেল ঘরবন্দি অবস্থায়৷ মাইকে মন্ত্র শুনে শুনে মায়ের উদ্দ্যেশ্যে অঞ্জলি, টিভিতে দেবী দশভুজার দর্শন করেই সন্তুষ্ট হতে হল আমাদের৷ মনে মনে আমরা সকলে বললাম, হে বিঘ্নহারী হে শঙ্কাহারী মা এই পৃথিবীকে রোগমুক্ত কর, এই অতিমারি দূর করে পরিত্রাণ করো জীব জগতের! জানি না এইবছর এই চিত্রটা কতটা পাল্টাবে বা আদও পাল্টাবে কিনা৷
সময় থেমে থাকে না, জীবন থেমে থাকে না, সমস্ত রকম সরকারি সচেতনতা বিধি মেনে আমরা ঝাঁপিয়ে পড়েছি আবার বাঁচার লড়াইয়ে৷ ব্যস একটা ভ্যাকসিন পাওয়ার অপেক্ষায়৷ প্লেগ ডেঙ্গু ম্যালেরিয়া স্প্যানিশ ফ্লু আরও কত অজানা রোগকে অতীতে আমরা হারিয়ে দিয়েছি! আবারও গো হারান হারাবো৷ বিজ্ঞানের জয়, সভ্যতার জয়, সর্বোপরি পৃথিবীর সংকটময় পরিস্থিতিতে এর আগেও বহুবার মানবজাতির জয় হয়েছে আজও হবে৷
চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির,
জ্ঞান যেথা মুক্ত, যেথা গৃহের প্রাচীর
আপন প্রাঙ্গণতলে দিবসশর্বরী
বসুধারে রাখে নাই খন্ড ক্ষুদ্র করি,
বসুধা অর্থাৎ এই পৃথিবীকে খন্ড ক্ষুদ্র না করে আমাদের সকলকে একসাথে দৃঢ় চিত্তে এই লড়াইটা লড়তে হবে৷ আমাদের বিশ্বাস খুব শীঘ্রই আমরা এই অতিমারির প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে চলেছি৷ আমরা মুক্ত আকাশের নীচে সহাস্যে আবারও একে অপরকে আলিঙ্গন করতে পারব খুব শীঘ্রই এ আমাদের অন্তরের বিশ্বাস, উপলব্ধি৷
সকলের মঙ্গল কামনা করি৷ সুস্থতা কামনা করি৷ আবার দেখা হোক কলুষ মুক্ত এক নির্মল ভোরে৷