– ম্যাডাম তাড়াতাড়ি আসুন।২ নম্বর কেবিনের পেসেন্ট আবার রেস্টলেস হয়ে উঠেছে।
– আমি রাউন্ডে আছি। ওকে শান্ত করার চেষ্টা করো । বাট, কোনো সেডেটিভ দিও না। আমি আসছি।
– ওকে ম্যাডাম।
কেবিনের বাইরে থেকে তখন শোনা যাচ্ছে জড়িয়ে যাওয়া কিছু শব্দের গোঙানো আওয়াজ। ভিজিটিং আওয়ার শেষ হয়েছে একটু আগেই। ডক্টর পাপড়ি সেন হন্তদন্ত হয়ে এসে ঢুকলেন ২ নম্বর কেবিনে।
– এই ভাবে হাত পা মুখ সব বেঁধে রেখেছো! পেসেন্ট তো রেস্টলেস হবেই। খুলে দাও সব।
– আসলে ম্যাডাম, উনি খুব…..
– পেশেন্ট পার্টির সামনেও এই অবস্থায় ছিল?
– না না, তখন তো চুপচাপ ছিলেন উনি। ওনার মিসেস ফলের রস খাওয়াতে চেষ্টা করছিলেন। থু থু করে সব ছিটিয়ে ফেলে দিলেন।
ডক্টর পাপড়ি এতক্ষন পেশেন্ট কে লক্ষ্য করছিলেন। তার হাত পা মুখ সব খুলে দেওয়ার পরও সে কোনো পাগলামী করেনি। শুধু কি যেনো এক গভীর অভিমানী দৃষ্টি নিয়ে দুরে জানলার বাইরে ট্রাফিক এর দিকে চেয়ে বসে আছে। ওর ঠোঁটের কোনা বেয়ে লালা গড়িয়ে পড়ছে।এতক্ষণ মুখ বেঁধে রাখার জন্য হয়তো অসাড় হয়ে আছে ওর অনুভূতি।
অ্যাটেনডেন্টরা বেরিয়ে যেতেই ডক্টর পাপড়ি ওর কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, ‘এমন অবুঝ হলে কিন্তু আমিও খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দেবো নয়ন! এত বছর পর…… ২৫ বছর….. জানিনা কে কোথায় হারিয়ে ছিলাম, তোমায় এইভাবে ফিরে পাবো কোনোদিন ভাবিনি।’
– ‘ যেও না পাপড়ি ‘ আধবোজা অষ্পষ্ট স্বরে বলে ওঠে ওর পেশেন্ট নয়ন। আরও বলতে থাকে কাঁপা কাঁপা গলায় ‘আমি ভালো হয়ে আর ফিরতে চাইনা বাড়ী।’
– নয়নের মুখটা ভিজে রুমালে মুছিয়ে পাপড়ি বলে ‘শোন পাগলের কথা! এখানে কি কেউ থাকতে আসে! তুমি ওদের কথা শোনোনা বলে ওরা তোমায় কতো জবরদস্তি করতে বাধ্য হয়। কেন এমন করো !’
-‘ আমি তো পাগল। দরকার হলে শক দিও আমায়। ওষুধ দিয়ে অবশ করে ফেলে রেখো।’
-‘ তোমায় এতো কাছে পেয়ে আর হারাতে পারবো না পাপড়ি’, কাঁপা কাঁপা শীর্ণ হাত দুটো দিয়ে আঁকড়ে ধরে থাকে সে পাপড়ির হাত, যেমন পাখা কাটা প্রজাপতি মাটিতে পড়ে শেষ বার ওড়ার চেষ্টা করে।
-‘ পাগল একটা তুমি’ বলে স্নেহময়ী হাত বুলিয়ে দেয় নয়নের মাথায়।
-‘ একটু ঠাঁই দিও পাপড়ি , এই পাগলকে। ‘
জানলার বাইরে তখন ব্যাস্ত ট্রাফিক সারাদিনের কাজ সেরে মনের কথা বলতে ব্যাকুল ফিরতি পথের সিগনালের অবকাশে।