• Uncategorized
  • 0

সম্পাদিকা উবাচ

আষাঢ়ের শুক্ল দ্বাদশীর দিন প্রভু জগন্নাথ তাঁর মন্দির ছেড়ে মাসির বাড়ি যান। এটিই রথযাত্রা। সাধারণ ভাবে রথ বলতে আমরা পৌরাণিক যান বুঝি। যাতায়াতের কাজ ছাড়াও মূলত ঘোড়ায় টানা এই যানের যুদ্ধক্ষেত্রে বহুল ব্যবহার দেখা যায়। কিন্তু রথযাত্রায় যে রথের কথা বলা হয় তার প্রেক্ষিত পুরাণের থেকে অনেকটাই আলাদা। এ রথে নেই কোনও অস্ত্রের ঝনঝনানি। নেই কোনও বৈরিতার সুর। তবে এই রথেও রয়েছে জয়ের বার্তা। শান্তি, মৈত্রী ও প্রেমের জয়।
রথ নিয়ে নানা রূপ পৌরাণিক কাহিনী এবং শাস্ত্র আলোচনা আমরা শুনে থাকি এবং পড়ে থাকি, তাই সেই দিকে দৃষ্টিপাত করার প্রয়োজন বোধ করছি না৷ তার চাইতে বরং মনস্তত্ত্ব বা বলা ভালো দেহতত্ত্বের দৃষ্টিকোণ থেকে রথের বিশ্লেষণ সম্প্রসারিত করতে চাইব:-
মানবদেহ যেমন ২০৬টি হাড় দিয়ে গঠিত, তেমনই পুরীর তিনটি রথও তৈরি হয় ২০৬টি কাঠ দিয়ে। ঠিক যেন মানবশরীর। সেই শরীর প্রাণ পায় রথে অধিষ্ঠিত দেবতার মাধ্যমে। এর দ্বারা যুগ যুগ ধরে যা বোঝাতে চাওয়া হয়েছে তা হল মানবদেহও রথের মতোই, কেবল কাঠামো মাত্র। তাতে অন্তরাত্মার বাস। তিনি পরমাত্মার অংশ, তিনিই রথের আসল চালক।
পুরীর তিনটি রথে মোট ৪২টি চাকা থাকে। এই প্রত্যেকটি চাকার একটি আলাদা বৈশিষ্ট্য বা মাহাত্ম্য রয়েছে। জগন্নাথের রথ নন্দীঘোষ বা কপিধ্বজের ১৬টি চাকা একেকটি চক্ষু-কর্ণ-নাসিকা-জিহ্বা-ত্বক এই পাঁচটি জ্ঞানইন্দ্রিয় এবং হস্ত-পদ-গুহ্য-লিঙ্গ-মুখ (দাঁত) এই পাঁচটি কর্মইন্দ্রিয় মিলিয়ে মোট দশ ইন্দ্রিয় এবং কাম-ক্রোধ-লোভ-মোহ-মদ-মাৎসর্য্য এই ছয় রিপুর প্রতিনিধিত্ব করে। বলরামের রথ তালধ্বজ বা হলধ্বজের চাকার ১৪টি চাকায় ধরা থাকে মানবদেহের ১৪টি ভুবনের কথা। এই ১৪ ভুবন হল ৭টি জমি এবং ৭টি আকাশ। এই ৭ জমি বলতে মানবদেহের জাগতিক বিষয়ের সঙ্গে সংযোগকারী ৭টি ইন্দ্রিয় ও ৭ আকাশ বলতে অন্তরাত্মা বা অন্তরদর্শনের সঙ্গে সংযোগকারী ৭ ইন্দ্রিয়কে বোঝানো হয়। জাগতিক বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত ইন্দ্রিয় চক্ষু, নাসিকা, জিহ্বা, ত্বক ও ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় এবং কর্ণের দুই ভাগ – শ্রবণ বা শব্দগ্রহনকারী অংশ ও ভারসাম্য রক্ষাকারী অংশ এই নিয়ে মোট ৭টি। অন্তরদর্শনের সঙ্গে যুক্ত ইন্দ্রিয়গুলি মূলাধার, স্বাধিষ্ঠান, মণিপুর, অনাহত, বিশুদ্ধি, আজ্ঞা ও সহস্রার। এবং সুভদ্রার রথ দর্পদলন বা পদ্মধ্বজের ১২টি চাকা বোঝায় যে ১২ মাস মানবদেহের ভজনের সময়।
রথে কাঠের চাকা, চলার সময় ঘড়-ঘড় শব্দ হয়। এই শব্দ কিন্তু রথযাত্রার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আসলে হিন্দু ধর্মে শব্দের গুরুত্ব আলাদা। বেদে বলা হয়েছে ‘শব্দই ব্রহ্ম’। সুতরাং এই কাঠের চাকার ঘড়ঘড়ে শব্দেরও গুরুত্ব রয়েছে, অর্থাৎ এই শব্দ বেদের মতোই সত্য।
রথ যাত্রার শুভেচ্ছা রইল সকলকে
সুস্থ থাকুন৷ ভালো থাকুন৷ লিখতে থাকুন৷ পড়তে থাকুন৷

রাজশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।